Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে নওগাঁয় সকল পশুর হাট বন্ধ ঘোষণা

লোকসানের আশঙ্কা খামারীদের

নওগাঁ জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৯ জুন, ২০২১, ৬:২০ পিএম

করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে নওগাঁয় চলমান বিধিনিষেধের পাশাপাশি জেলার সকল পশুর হাট বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। পরবতী নিদেশ না দেয়া পযন্ত পশুরহাট বন্ধের এ সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে। তবে খামার ও গৃহস্থের বাড়ি থেকে এবং অনলাইনে পশু ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। জেলা প্রশাসন কার্যালয় থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানো হয়।

কোরবানীর আগ মূহূর্তে পশুর হাট বন্ধ রাখার ঘোষণায় কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে পশু খামারী ও গৃহস্থের কপালে। কোরবানীর আগে হাট না বসলে বড় ধরণের লোকসানের আশঙ্কা করছেন তাঁরা।

জেলা প্রশাসক হারুন-অর-রশীদ স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নওগাঁ জেলায় করোনার সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় জারি করা চলমান বিশেষ বিধিনিষেধের পাশাপাশি জেলার সকল পশুর হাট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি। তবে খামার ও গৃহস্থের বাড়ি থেকে এবং অনলাইনে পশু ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। এছাড়া জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা নিয়ামতপুর, পোরশা, সাপাহার, পতœীতলা ও ধামইরহাট থেকে জেলার অভ্যন্তরে এবং জেলার বাইরে সকল প্রকার যান চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে রোগী পরিবহনকারী অ্যাম্বুলেন্স, জরুরি পণ্য পরিববহন, জরুরি কাজে ব্যবহৃত সরকারি গাড়িসহ অন্যান্য জরুরি সেবা-পরিসেবার কাজে ব্যবহৃত যানবাহনের ক্ষেত্রে এ নির্দেশনা প্রযোজ্য হবে না।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে পাড়া-মহল্লা ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে, বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান এবং স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে মসজিদের মাইক থেকে নিয়মিত জনসচেতনতামূলক ঘোষণার ব্যবস্থা করতে হবে। স্কুল-মাদ্রাসার শিক্ষকদের সম্পৃক্ত করে পাড়া-মহল্লায় সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণের ব্যবস্থা গ্রহণ জোরদার করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক এসব কাজে জনপ্রতিনিধিসহ সমাজের সকল সচেতন নাগরিককে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, নওগাঁ জেলায় ছোট-বড় ১০৪টি হাটবাজার রয়েছে। এর মধ্যে স্থায়ী পশুর হাট রয়েছে ৩৮টি। জেলার মান্দা উপজেলার চৌবাড়িয়া ও সতিহাট, নিয়ামতপুর উপজেলার ছাতড়া, পোরশা উপজেলার মশিদপুর, মহাদেপুরের মাতাজীহাট, বদলগাছীর কোলাহাট ও রাণীনগরের আবাদপুকুর বৃহৎ পশুর হাট। প্রতি বছর কোরবানীর ঈদ মৌসুমে এসব হাটে স্থানীয় ক্রেতারা ছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা গরু কিনতে আসেন।
জেলা প্রাণীসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলার বিভিন্ন খামার ও গৃহস্থের বাড়িতে এ বছর ৩ লাখ ২০ হাজার কোরবানী যোগ্য পশু প্রস্তুত আছে। এর মধ্যে জেলায় কোরবানীর পশুর চাহিদা রয়েছে ২ লাখ ৩৫ হাজার। জেলায় চাহিদার চেয়ে কোরবানির পশু ৮৫ হাজার বেশি রয়েছে।
নওগাঁ পৌরসভার শিবপুর এলাকার খামারী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর কোরবানীর হাটে বিক্রির জন্য আমার খামারে ১২টি গরু লালন-পালন করেছি। গুরু কেনা ও লালন-পালন খরচ বাবদ প্রতিটি গরুর পেছনে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা করে খরচ হয়েছে। গরু যে রকম হৃষ্টপুষ্ট হয়েছে তাতে প্রতিটি গরু ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায় বিক্রির আশা আছে। কিন্তু পশুর হাট বন্ধের যে ঘোষণা শুনলাম তাতে তো চিন্তার বিষয়। হাটে দর-কষাকষি করে গুরু বিক্রি করলে একটু বেশি লাভের আশা থাকে। কোরবানীর আগ পর্যন্ত হাট বন্ধ থাকলে মনে হয় বড় ধরণের লোকসানে পড়তে হয়।’

নওগাঁ জেলায় বেশ কয়েকটি পশুর হাটের ইজারাদার নওগাঁ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘পশুরহাট একেবারে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত আমার মনে হয় সঠিক নয়। কারণ, কোরবানীকে কেন্দ্র করে বহু খামারী ও গৃহস্থ পশু লালন-পালন করে থাকেন একটু লাভের আশায়। এসব সময় গবাদিপশু বিক্রি করে যেটুকু লাভ হয় তা দিয়ে বছরের অধিকাংশ সময় খরচ করে থাকে। কিন্তু এই সময়ে পশুর হাট বন্ধ রাখলে তাঁদের বড় ধরণের লোকসানে পড়তে হবে। আমি মনে করি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশুর হাটে কেনা-বেচা চালু রাখা উচিত।’

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ