Inqilab Logo

রোববার, ২৩ জুন ২০২৪, ০৯ আষাঢ় ১৪৩১, ১৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

কমলনগর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার ঘুষের ১৬ লাখ টাকা উধাও

চার কর্মচারী থানায়: রাতভর দেনদরবার

কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৯ জুন, ২০২১, ৪:৩১ পিএম

লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) রিয়াদ হোসেনের কার্যালয় থেকে ১৬ লাখ টাকা চুরির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় একই কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর আবদুল বাকেরসহ ৪ কর্মচারীকে থানায় আটকে রাখা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে পিআইওর সঙ্গে আটকদের দেন-দরবার চলছে।
অফিস সহকারী আবদুল বাকেরের স্ত্রী শারমিন আক্তার জানিয়েছেন, সোমবার বিকেলে পিআইও নিজেই তাদের বাসায় গিয়ে টাকা খোঁজার নামে বাসায় তল্লাশি চালায়। এসময় পিআইও বাসার আসবাবপত্র উলট-পালট ও ভাঙচুর করেছেন বলে অভিযোগ এনেছেন শারমিন। আটকদের মধ্যে কার্যালয়ে কর্মরত মেহেদী হাসানসহ আরো তিনজন রয়েছেন।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনজন ঠিকাদারের অভিযোগ, পিআইও রিয়াদ প্রত্যেকটি কাজেই ঘুষ নেয়। ঘুষ ছাড়া তিনি কোন ফাইল বা বিলের চেকে সই করেন না। সম্প্রতি কয়েকটি কাজের বিলের চেকে সই করার জন্য তাদের কাছ থেকে তিনি ১ থেকে ৩ লাখ টাকা করে ঘুষ নিয়েছেন।সোমবার রাত সাড়ে ১২টার দিকল পিআইও রিয়াদ ও চার কর্মচারীকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।এছাড়া উপজেলা কার্যালয়ের কয়েকজনের ভাষ্যমতে, পিআইও'র কার্যালয়ে নগদ টাকা থাকার কথা নয়। তিনি ঠিকাদারদের টাকা চেকের মাধ্যমে দেবেন। টেন্ডারের পে-অর্ডারও চেকের মাধ্যমে। তাহলে তার কার্যালয়ে ১৬ লাখ টাকা কোথায় থেকে আসল? আর টাকাগুলোও কিসের? যার জন্য এখনো তিনি পরিস্কারভাবে কোনো অভিযোগ করতে পারছেন না। উল্টো ৪ জন কর্মচারীকে থানায় নিয়ে হেনস্তা করা হচ্ছে।

একজন ইউপি চেয়ারম্যানসহ পাঁচ ব্যক্তি জানিয়েছেন, জুন ক্লোজিং উপলক্ষে পিআইও তাদের কাছ থেকে কমিশন নিয়েছেন। তাদেরকে বাধ্য করা হয়েছে। ঘুষের এ ১৬ লাখ টাকা নিয়ে তিনি সংশ্লিষ্টদের বিল দেওয়ার কথা। দুদকের মাধ্যমে সুষ্ঠু তদন্ত বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্যের সব তথ্য বেরিয়ে আসবে।
জানা গেছে, রিয়াদ হোসেন রামগতি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা।অন্যদিকে কমলনগর উপজেলার শূন্যপদেওতিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন এতে এই দুই উপজেলায় ৪০ দিনের কর্মসূচি,কাবিখা-কাবিটা,সরকারের ত্রান মন্ত্রণালয় থেকে আসা সকল বরাদ্দ ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের অনুকূলে প্রাপ্ত বরাদ্দ গুলো বাস্তবায়ন ও উত্তোলনের নামে মোটা অংকের ঘুষ হাতিয়ে নেন তিনি।তার চাহিদা মত ঘুষ না দিলে কোন ফাইলে স্বাক্ষর করেননা রিয়াদ।
এতে দু-উপজেলার সকল বরাদ্দ বাস্তবায়নের নামে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা।

থানায় আটক আবদুল বাকেরের স্ত্রী শারমিন আক্তার বলেন, আমার স্বামী কোন দোষ করেনি। ১৬ লাখ টাকা চুরির অভিযোগে পিআইও আমার স্বামীসহ ৪ জনকে থানায় নিয়ে আটক করে রেখেছে। আমরা সরকারি কোয়ার্টারে থাকি। পিআইও নিজে এসে টাকা খোঁজার নামে তল্লাশি চালিয়ে আমার বাসার সকল আসবাবপত্র ওলট-পালট করে দিয়ে গেছে।

বক্তব্য জানতে পিআইও রিয়াদ হোসেনের দুইটি মুঠোফোনে রাতে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এসএমএস পাঠিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি।

এ ব্যাপারে কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোসলেহ উদ্দিন বলেন, থানায় চারজনকে ডাকা হয়েছে। তবে পিআইও এখনো কোন নির্দিষ্ট অভিযোগ দেননি। এটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না পাওয়া পর্যন্ত আমি টাকার বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।
জানতে চাইলে কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান সংবাদকর্মীদের বলেন, চারজনকে থানায় ডাকার কথা আমি শুনেছি। তবে কি কারণে বিষয়টি আমার জানা নেই।পিআইও কার্যালয়ে নগদ টাকা থাকা নিয়ে প্রশ্নে ইউএনও বলেন, টাকার ব্যাপারে ওই চারজনকে থানা ডাকা হয়েছে, বিষয়টি আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে পিআইও'র সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ