পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশে জুলাই মাস থেকে আবারও গণটিকা কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে সব প্রস্ততি সম্পন্ন করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এ সপ্তাহেই চীন থেকে দেশে সিনোফার্মের ৫০ লাখ ডোজ টিকার বড় চালান আসছে। পাশাপাশি জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহেই বিশ্বজুড়ে টিকা সরবরাহের আন্তর্জাতিক প্লাটফর্ম কোভ্যাক্স থেকে পাঠানো যুক্তরাষ্ট্রের মডার্নার তৈরি করোনার ২৫ লাখ ডোজ টিকা পাচ্ছে বাংলাদেশ। এছাড়া হাতে রয়েছে কোভ্যাক্স থেকে পাওয়া মার্কিন ওষুধ কোম্পানি ফাইজার ও জার্মান জৈবপ্রযুক্তি কোম্পানি বায়োএনটেকের তৈরি এক লাখ ৬২০ ডোজ টিকা। আর তাই গণটিকা কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হবে সিনোফার্মের ৫০ লাখ ডোজের প্রথম চালান দেশে পৌঁছালেই।
অথচ ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা ক্রয়ে গত নভেম্বরের চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে তিন কোটি ডোজ ছয় মাসের মধ্যে পাওয়ার কথা বাংলাদেশের। সে অনুযায়ী জানুয়ারিতে ৫০ লাখ ডোজ দেশে এলেও বিপুল চাহিদা আর বিশ্বজুড়ে টিকার সরবরাহ সঙ্কটের মধ্যে ফেব্রুয়ারির চালানে বাংলাদেশ ২০ লাখ ডোজ হাতে পায়। এর বাইরে ভারত সরকার বাংলাদেশ সরকারকে ৩২ লাখ ডোজ টিকা উপহার দিয়েছে। ফেব্রুয়ারির ২০ লাখের পর আর ভারত থেকে বাংলাদেশ ক্রয়কৃত কোন টিকাই পায়নি। বাকি টিকা কবে আসবে, তা নিশ্চিত নয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ শুরুর দিকে টিকার দৌড়ে এগিয়ে গেলেও এখন সেই তুলনায় পিছিয়ে পড়ছে। আর এর কারণ হিসেবে তারা ভারতের ভ্যাকসিন রাজনীতিকে দায়ী করেছেন। পাশাপাশি শুরু থেকে বাংলাদেশেরও টিকার অন্যান্য উৎস খোলা রাখার প্রয়োজন ছিল মনে করছেন তারা। ভারতের ওপর নির্ভলশীলতাই ভ্যাকসিন রাজনীতিতে পিছিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশকে। যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা, বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্র চীনের সহযোগীতা এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সময়োপযোগী পদক্ষেপে ধীরে ধীরে বাংলাদেশ ভারতের ভ্যাকসিন রাজনীতিকে কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় জুলাই থেকে আবারও গণটিকা কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে।
সূত্র মতে, দেশের প্রত্যেক নাগরিকের জন্য করোনার টিকা নিশ্চিত করতে চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ লক্ষ্যে টিকা আমদানির পাশাপাশি দেশেও টিকা তৈরির প্রচেষ্টা চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি জানিয়েছেন, দেশে আন্তর্জাতিক মানের টিকা ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার জন্য সরকার দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে চুক্তি করার উদ্যোগ নিয়েছে। বিষয়টি মন্ত্রিসভায় অনুসমর্থন ও অনুমোদনের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। একই সঙ্গে দেশে সরকারিভাবে করোনার টিকা উৎপাদনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে প্রধান করে কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ ক্ষেত্রে এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএল) গোপালগঞ্জের কারখানাটির সক্ষমতাকে বিশেষ বিবেচনায় রাখছে কমিটি। ইডিসিএল সরকারের একমাত্র ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান।
ইতিমধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকও গোপালগঞ্জে ইডিসিএলের কারখানায় টিকা উৎপাদনের বিষয়ে জানিয়েছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে করোনার ভ্যাকসিন তৈরির নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতিমধ্যে কয়েকটি সভাও করেছি। সেখানে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা ছিলেন। তাঁদের প্রজেক্ট প্রোফাইল তৈরি করতে বলেছি। গোপালগঞ্জে যে ওষুধ কারখানা আছে, সেখানে বা তার পাশে আমরা ভ্যাকসিন তৈরির ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। সেটার জন্য একটু সময় লাগবে, তবে এখনই কাজ শুরু হয়ে গেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, দেশে যৌথভাবে টিকা তৈরি করতে চীন ও রাশিয়াকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। সরকারি অথবা বেসরকারি কোম্পানি যাদের টিকা তৈরির সক্ষমতা আছে তাদের অনুমোদন দেয়া হবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা টিকা সংগ্রহে বিভিন্ন দেশে জোরালো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) প্রফেসর ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম ইনকিলাবকে বলেছেন, জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে চীন থেকে টিকার বড় চালান (৫০ লাখ) আসছে। এই চালান দিয়ে ৮০ শতাংশ মানুষকে সুরক্ষা দেয়া যাবে। আশাকরছি এই টিকা আসলে জুলাই মাসেই দেশে গণটিকা কার্যক্রম শুরু হবে। প্রফেসর ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, টিকা নিয়ে বিশ্বে রাজনীতি চলছে। তারপরও জুলাই মাসে টিকার বড় চালান পাবো। যারা প্রবাসী তাদের সবাইকে টিকার আওতায় আনবো। তাদের দ্রুত ভ্যাকসিন দেবো। তাদের সুরক্ষা দেয়া আমাদের দায়িত্ব। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ভ্যাকসিন হিরো। ভ্যাকিসন দেয়ার ক্ষেত্রে আমরা অনেক পারদর্শিতা অর্জন করেছি। প্রতিদিন এক কোটি ভ্যাকসিন দেয়ার সক্ষমতা আছে। তবে, ভ্যাকিসন আমাদের হাতে নেই। ভ্যাকসিন নিয়ে বিশ্বে বড় পলিটিক্স চলছে। বাংলাদেশ এই পলিটিক্সের শিকার। অনেক দেশ এখনো ভ্যাকসিন পায়নি। আমরা পেয়েছি। তবে, মাস্ক আমাদের হাতে আছে সবাইকে এটা যথাযথভাবে ব্যবহার করতে হবে। এদিকে সম্প্রতি জুলাই মাস থেকে আবারও গণটিকা কার্যক্রম শুরু হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। ড. আহমদ কায়কাউস বলেছেন, টিকা ক্রয়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আমরা কারো দয়া চাই না। প্রধানমন্ত্রীর ঊদ্বৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘সব সময় বলছেন, আমাদের ফ্রি দরকার নেই। আমরা টাকা দিয়ে কিনব। যেখানে পাওয়া যায় সেখান থেকে কেনা হবে এবং আমরা কিন্তু অনেক দূর এগিয়েছি।’
সূত্র মতে, চীনের টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিনোফার্মের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে দেড় কোটি ডোজ কেনার। চুক্তি অনুযায়ী, এ সপ্তাহের মধ্যে দেশে সিনোফার্মের ৫০ লাখ ডোজ টিকা আসছে। এছাড়া মডার্নার ২৫ লাখ ডোজ টিকাও আগামী সপ্তাহের শুরুর দিকে আসবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এছাড়া দেশে মজুত সিনোফার্মের ১১ লাখ ডোজ পাবে শিক্ষার্থীরা। প্রথমে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের দেয়া হবে। এরপর পাবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। ফাইজারের টিকা প্রবাসী শ্রমিকদের দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। দেশে কমপক্ষে ১০ কোটি মানুষকে টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। মেডিকেল শিক্ষার্থীদের টিকাদান চলছে, এরপর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীদের টিকাদান কার্যক্রম শুরু হবে। আগামী জুলাই মাস থেকেই চীনের সিনোফার্মের টিকা শিক্ষার্থীদের দেয়া হবে। প্রথমে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে থাকা শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া হবে। তবে তাঁদের টিকা নিতে প্রয়োজন হবে না প্রচলিত রেজিস্ট্রেশনের। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্র ও আবাসিক হলে থাকার প্রমাণপত্র দেখালেই টিকা নিতে পারবেন শিক্ষার্থীরা। টিকার পরবর্তী চালান এলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষার্থীদেরও টিকার আওতায় আনা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।