Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সীমিত লকডাউনে অপরিসীম দুর্ভোগ

চট্টগ্রামে গণপরিবহন বন্ধে কর্মজীবীদের বিড়ম্বনা

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ২৯ জুন, ২০২১, ১২:০০ এএম

সীমিত লকডাউনে চট্টগ্রামে সীমাহীন দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ। সবকিছু খোলা রেখে গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়ায় বিপাকে পড়ে কর্মজীবীরা। গতকাল সোমবার সকালে পরিবহনের অপেক্ষায় নগরীর প্রতিটি মোড়ে ছিলো অফিসমুখী মানুষের ভিড়। যানবাহন না পেয়ে অনেকে মাইলের পর মাইল হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছান। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে কেউ কেউ রিকশা কিংবা ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল ফেলেও গুনতে হয়েছে কয়েক গুণ বেশি ভাড়া।
বাস, মিনি-বাস, টেম্পু, অটোরিকশা বন্ধ; এই সুযোগে অন্য যানবাহন চালকেরা ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। সীমিত লকডাউন শুরু হয় লাখো মানুষের দুর্ভোগ দিয়ে। বেশি বিপাকে পড়েন নারী ও বয়স্করা। সকাল থেকে হালকা বৃষ্টিতে বিড়ম্বনা আরো বাড়ে। বিকেলে অফিস থেকে ফেরার পথেও সঙ্গী হয় অসহনীয় দুর্ভোগ।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই মহানগরীতে জনসংখ্যা প্রায় পৌনে এক কোটি। এই নগরীর বাসিন্দাদের বিরাট অংশ কর্মজীবী। প্রধান সমুদ্র বন্দর, বন্দরভিত্তিক চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস, দেশের সর্ববৃহৎ ইপিজেড, কলকারখানায় লাখো শ্রমিক কাজ করেন। সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, অফিস, আদালত, হাসপাতাল, ক্লিনিক, ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আছেন লাখ লাখ কর্মী। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের নেই কোন নিজস্ব যানবাহন। গণপরিবহনই তাদের শেষ ভরসা।
কিন্তু হঠাৎ গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়ায় বিপাকে পড়েন কর্মজীবীরা। জরুরি প্রয়োজনে যারা ঘর থেকে বের হয়েছেন তাদেরও দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। মহানগরীতে বসবাস করেন এমন অনেকের কর্মস্থল গ্রামে। আবার গ্রাম থেকেও অনেকে কর্মস্থলে আসেন। তাদেরও চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
এমনিতেই করোনায় মানুষের আয়-রোজগারে ভাটা পড়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ দিশেহারা। এ অবস্থায় কর্মস্থলে যাতায়াতেই খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ। ফলে আয়ের বিরাট অংশ এই খাতে ব্যয় করতে হচ্ছে। নগরীর কাটগড়ের বাসা থেকে কর্মস্থল চকবাজারে প্যাথলজি সেন্টারে যাবেন জুথিকা রানী। কাটগড় মোড়ে এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন ঘণ্টা খানেক। এরপর একটি রিকশা পেলেও চালক ভাড়া চান চারশ’ টাকা। বাধ্য হয়েই তিনি তাতে উঠে বসেন। গণপরিবহন থাকলে তার খরচ হতো সর্বোচ্চ ৫০ টাকা। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, আমার এই বাড়তি সাড়ে তিনশ’ টাকা কে দেবে।
পটিয়ার বাদামতল থেকে নগরীর জিপিওতে কর্মস্থলে আসেন ডাক বিভাগের এক কর্র্মী। নাম প্রকাশে অনইচ্ছুক ওই কর্মী জানান, চার বার গাড়ি বদল করে তাকে একশ’ টাকা খরচ করে কর্মস্থলে আসতে হয়। অন্যদিন তার খরচ হতো সর্বোচ্চ ৪০ টাকা। গতকাল কর্মজীবী সব মানুষের দুর্ভোগ ছিলো এমন। কয়েকগুণ বেশি ভাড়ায় তাদের কর্মস্থলে যেতে হয়। বিড়ম্বনায় পড়ে লোকজনকে চরম বিরক্তি প্রকাশ করতে দেখা যায়। সব খোলা রেখে গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়ার মতো সিদ্ধান্ত যারা দিয়েছেন তাদের প্রতিও অনেকে ক্ষোভ ঝাড়েন।
সংক্রমণ কমাতে গণপরিবহন বন্ধ করার কথা বলা হচ্ছে। অথচ বাধ্য হয়ে লোকজন ট্রাকে, পিকআপে, রিকশাভ্যানে গাদাগাদি করে গন্তব্যে যাচ্ছে। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি আরো বাড়ছে। বৃহস্পতিবার থেকে কঠোর লকডাউনের ঘোষণায় নগরী ছাড়ছেন অনেকে। গতকাল নগরীর সিটি গেইট, কর্ণফুলী সেতু, কালুরঘাট, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, অক্সিজেন, অলঙ্কার মোড়, একে খান গেইটে ঘরমুখো মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকলেও অন্যবারের মতো মানুষ ট্রাকে, পিকআপ, কাভার্ড ভ্যানে বাড়ি ফিরছে। এদিকে চট্টগ্রামে পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক আছে। নগরীতে অবাধে চলছে ব্যক্তিগত যানবাহনও। এতে চট্টগ্রাম বন্দর এলাকাসহ প্রধান প্রধান সড়কে যানজট দেখা গেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ