Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভাঙনে দিশেহারা এলাকাবাসী

খননের ফলাফল : খালের মাটি খালেই

স্টাফ রিপোর্টার, মাগুরা থেকে : | প্রকাশের সময় : ২৯ জুন, ২০২১, ১২:০১ এএম

মাগুরার মহম্মদপুরে বাড়ির পাশ ঘেঁষে যাওয়া সর্পরাজ খালটির ভাঙনে দিশেহারা এলাকাবাসী। এলাকাবাসীর দাবির মুখে খালটি পুনঃখনন করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু খননের মাটি অপসারণ না করায় বিপাকে পড়েছেন অনেক পরিবার। খাল পাড়ে রিটেইনিং ওয়াল না দেয়ায় এ ভাঙন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। ফলে ভাঙনে দিশেহারা দুই পাড়ের বাসিন্দারা।
জানা যায়, উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের নারায়ণপুর ও চৌবাড়িয়া বাজার হয়ে নবগঙ্গা নদী থেকে শুরু করে বাবুখালী ইউনিয়নের চুড়ারগাতি হয়ে মধুমতী নদীতে মিলিত হয়েছে খালটি। বর্ষাকালে এই খালে তেমন পানি না থাকায় খালটি পুনঃখনন করা হয়েছিল। এই খালের প্রাণ ফেরানো এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি। এই অবস্থায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) খালটি পুনঃখননের উদ্যোগ নেয়। ২০২১ সালের ৮ মার্চ ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুনঃখনন (১ম পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় এই খালের খনন কাজ শুরু হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, খালের তলদেশ চাহিদা অনুযায়ী খনন না করে শুধু পাড়ের মাটি কেটে প্রস্থ বাড়ানো হয়েছে। সেই মাটি আবার খালের পাড়েই ফেলার কারণে বর্ষার পানিতে মাটি ধসে ফের খালে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে বৃষ্টিতে কিছু অংশের মাটি ধসেও গেছে। ফলে দুই পাড়ের বাসিন্দাসহ দোকান মালিক ও এলাকাবাসী লাভের বদলে উল্টো ক্ষতির আশঙ্কা করছেন।
মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র মতে, দেশের ৬৪টি জেলায় ছোট নদী, খাল এবং জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের (প্রথম পর্যায়) আওতায় মহম্মদপুর উপজেলার এমডি-১ খাল পুনঃখননের কাজ শেষ হয়েছে। প্রায় সাড়ে ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ খালটি পুনঃখনন করা হয়েছে। এতে ব্যয় হয় ৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। ৮ মার্চ শুরু হওয়া এ প্রকল্পের কাজ ৩১ ডিসেস্বর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এর মধ্যেই কাজের ৯০ ভাগের বেশি শেষ হয়েছে। খাল খননের দায়িত্ব পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পটুয়াখালীর মেসার্স আবুল কালাম আজাদ এবং মো. মিজানুর আলম নামের এক ঠিকাদারের সঙ্গে এটি খননের ব্যাপারে চুক্তিবদ্ধ হন।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট স্থানীয় ঠিকাদারদের একজন আরিফুর রহমান বলেন, চুক্তির মধ্যে মাটি অপসারণের কোনো শর্ত ছিল না। পাউবো মাটি রাখার জন্য যেসব জায়গা দেখিয়ে দিয়েছে, সেখানেই ফেলা হয়েছে। এখানে ঠিকাদারের কোনো গাফিলতি নেই। আমরা যথাসম্ভব মানুষের ক্ষতি এড়িয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছি।
সরেজমিনে দেখা যায়, খনন করা মাটি পাড়ে রাখা হয়েছে। বেশ কিছু অংশের মাটি ইতোমধ্যে ধসে গেছে। স্থানীয় চৌবাড়িয়া বাজারের কয়েকটি দোকান ঘর ও কয়েকটি বসতবাড়ি ভাঙনের মুখে রয়েছে। টানা বৃষ্টি হলে যে কোনো সময় দোকান ও বাড়ি ধসে বড় ধরনের বিপদ ঘটতে পারে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, খালটি খননের ক্ষেত্রে নিয়ম মানেননি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। বাপাউবো লোকজন সঠিক সময়ে খনন কাজও তদারকি করেনি। মাটি দূরে না ফেলে পাড়েই রেখে দেয়ায় সামান্য বৃষ্টি হতেই কিছু অংশের মাটি ধসে গেছে। এছাড়াও খালের দুই পাড়ে প্রায় ৩ হাজার গাছ লাগানোর কথা থাকলেও এখনো লাগানো হয়নি।
স্থানীয় চৌবাড়িয়া গ্রামের আলী আফজাল মোল্লার স্ত্রী রওশোন আরা বলেন, মাটি ফেলার সময় বাঁধা দিলেও তারা শোনেননি। বাড়ির সামনে আম, জাম, জামরুল গাছ ছিল। তাও মাটিতে তলে চলে গেছে। এখন টানা বৃষ্টি হচ্ছে। মাটি ধুয়ে খালে চলে যাচ্ছে। এমন হলে বাড়িঘর খালে গিয়ে পড়বে। বিনোদপুর ইউপি চেয়ারম্যান শিকদার মিজানুর রহমান জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড সংশ্লিষ্টদের নির্লিপ্ততা ও খামখেয়ালির কারণে খননকাজ ত্রুটিপূর্ণ হয়েছে। ভাঙন বড় আকার ধারণ করলে অনেক ব্যবসায়ীর দোকান ঘর ও বসতবাড়ি বিলীন হবে।
এ বিষয়ে মাগুরা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারোয়ার জাহান বলেন, খালের মাটি রাখা আমাদের অধিগ্রহণকৃত জায়গায়। এভাবে খালের পাড় ভাঙার কথা নয়। হয়তো মাটির বৈশিষ্ট্যের কারণে কিছুটা ভাঙন হচ্ছে। তবে, কিছু দিনের মধ্যে মাটি শক্ত হয়ে যাবে। এ বিষয়ে দ্রুত খোঁজ নেয়া হবে বলে জানান তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ