পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের শিক্ষার্থীদের বুনিয়াদী শিক্ষা শুরু হয় মক্তব-মাদরাসায়। শিক্ষার্থীদের নীতি নৈতিকতা, ধর্মীয় অনুশাসন, আদব-লেহাজ শেখানোর হাতেখড়ি এই মাদরাসায়। ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে সেই মাদরাসা এবং মাদরাসার শিক্ষকরা চরম অবহেলিত হয়ে পড়েছেন। করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন। অথচ ইবতেদায়ি মাদরাসার কিছু শিক্ষক সামান্য বেতন পেলেও প্রায় অর্ধলক্ষাধিক শিক্ষক-কর্মচারী কোনো বেতনই পাচ্ছেন না। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। শুধু তাই নয়, দেশের এবতেদায়ি মাদরাসাগুলোর অস্তিত্ব এখন বিপন্নতার পথে। ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকদের বেতনভাতা বিষয়াদি কিভাবে দেয়া যায়, তা দেখভালের নির্দেশনা দিয়েছিলেন সংশ্লিষ্টদের। ১০ বছরেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এমনকি আড়াই বছরেও আলোর মুখ দেখেনি স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদরাসা সংক্রান্ত নীতিমালা।
অথচ প্রতিষ্ঠান আছে, আছে ছাত্রছাত্রীও। সরকার থেকে বিনামূল্যে প্রদান করা হচ্ছে বই এবতেদায়ি মাদরাসায়। আর শিক্ষকরা থাকছেন অভুক্ত। প্রাথমিকের মতোই মাদরাসা শিক্ষকরা ৯টা থেকে ৪টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাচ্ছেন। একই সিলেবাসে পড়িয়ে যেখানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা মাস শেষে ২২ থেকে ৩০ হাজার টাকা বেতন পাচ্ছেন; সেখানে মাদরাসার এবতেদায়ি স্তরের বিপুলসংখ্যক শিক্ষক কোনো বেতনই পাচ্ছেন না, পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকছেন অভুক্ত। যে অল্প কিছুসংখ্যক শিক্ষককে বেতন-ভাতা দেয়া হচ্ছে তাও নামমাত্র। ফলে মানবেতর জীবনযাপন করছেন দেশের ৭ হাজার স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষকরা।
দিনের পর দিন বেতন-ভাতা প্রদান না করা, মাদরাসা পরিচালনার নীতিমালা না থাকা, কমিটি গঠন কিংবা শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগের জটিলতা, মাদরাসা স্থাপন, স্বীকৃতি, পরিচালনা, জনবল কাঠামো ও বেতন-ভাতাদি/অনুদান সংক্রান্ত নীতিমালা বাস্তবায়ন না করার ফলে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদরাসা। অথচ ১০ বছর আগে ২০১১ সালের ২০ এপ্রিল মাদরাসা শিক্ষকদের একক ও সর্ববৃহৎ সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের উচ্চ পর্যায়ের ২০০ জন প্রতিনিধির উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষকগণকে উপযুক্ত সম্মানি প্রদানের ঘোষণা করেছিলেন। সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরও বিগত ১০ বছরে তা বাস্তবায়ন হয়নি। এমনকি ২০১৮ সালের নভেম্বরে স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদরাসা স্থাপন, স্বীকৃতি, পরিচালনা, জনবল কাঠামো ও বেতন-ভাতাদি/অনুদান সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করা হলেও আড়াই বছরেও সেটি বাস্তবায়ন শুরু হয়নি। ফলে এবতেদায়ি মাদরাসায় কর্মরত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের দুর্দশা লাঘব তো দূরের কথা বরং দিনে দিনে তা আরও বেড়েছে। সরকরি পৃষ্টপোষকতা না থাকা, বেতন-ভাতা না থাকায় শিক্ষকদের হতাশা থেকে ক্ষোভের কারণে ইতোমধ্যে ১৪ হাজার এবতেদায়ি মাদরাসা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। দ্রুত কার্যকরি উদ্যোগ গ্রহণ না করলে বাকি মাদরাসাগুলোও হারিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এবতেদায়ি মাদরাসায় কর্মরত কয়েকজন শিক্ষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, নতুন নতুন গড়ে ওঠা প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো জাতীয়করণ হয়েছে। জাতীয় স্কেলে বেতনও পাচ্ছেন প্রাথমিকের ওই শিক্ষকরা। অথচ ৩০ থেকে ৩৪ বছর বেতনহীন থেকে মানবেতর জীবনযাপন করছে এবতেদায়ি শিক্ষক ও তাদের পরিবার। বেতনহীন অবস্থায় অনেক শিক্ষক ইতোমধ্যে অবসরে গেছেন। মারাও গেছেন অনেকে। শিক্ষকরা বলছেন, বারবার জাতীয়করণের দাবি জানালেও সরকার শুধু আশ্বাস দিচ্ছে। তার প্রতিফলন ঘটছে না।
জানা যায়, ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড প্রায় ১৮ হাজার স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদরাসা অনুমোদন দেয়া হয়। মাদরাসা পরিচালনার জন্য নীতিমালা না থাকা এবং কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকারি বেতন-ভাতা না পাওয়ায় ইতোমধ্যে প্রায় ১৪ হাজার মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। অপরদিকে ১৯৯১ সালে ইউনিয়ন প্রতি একটি স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদরাসায় কর্মরত শিক্ষকদের মাসিক ৫০০ টাকা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়ে সারাদেশের ১ হাজার ৫১৯টি স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদরাসার ৩ হাজার ৩২ জন শিক্ষককে ৫০০ টাকা হারে মাসিক সম্মানি দেয়া শুরু হয়। পরবর্তীতে ৩ হাজার ৩২ জন শিক্ষকের এই সম্মানি প্রধান শিক্ষকের জন্য ২ হাজার ৫০০ ও সহকারী শিক্ষকের জন্য ২ হাজার ৩০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
অথচ ধাপে ধাপে মহাজোট সরকার ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেছে। এবতেদায়ি মাদরাসা থেকে যায় আগের অবস্থায়। শিক্ষকদের অভিযোগ, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো এবতেদায়ি মাদরাসার সবকিছু পরিচালিত হচ্ছে। শুধু বেতন থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে শিক্ষকদের। ৭ হাজার ৬৩২টি স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষকদের সম্মানজনক হারে মাসিক বেতন প্রদান, স্বতন্ত্র মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা, মাদরাসা পরিচালনার জন্য নীতিমালাসহ এবতেদায়ি মাদরাসার সমস্যা ও সমাধানের প্রস্তাব তুলে ধরে ২০১১ সালের ২০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের উচ্চপর্যায়ের ২০০ জন প্রতিনিধির উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষকগণকে উপযুক্ত সম্মানি প্রদানের ঘোষণা করেন। তারই আলোকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ওই বছরের ১২ জুন প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কিন্তু ১০ বছর পরেও এখন পর্যন্ত সেই ঘোষণা বাস্তবায়ন হয়নি।
এর মধ্যে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে এমপিওভুক্তির জন্য মাদরাসাগুলোর কাছ থেকে আবেদন গ্রহণ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেখানে এক হাজার ৫১৯টি অনুদানভুক্ত ও দুই হাজার ৭৯৩টি অনুদানবিহীন স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদরাসা এমপিওভুক্তি এবং আর্থিক সংশ্লেষ উল্লেখ করে তালিকা প্রণয়ন করা হয়। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সেই তালিকাটি এখনো ফাইলবন্দিই রয়ে গেছে।
অন্যদিকে স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদরাসার পরিচালনার জন্য সরকারি কোন নীতিমালা না থাকায় মাদরাসার কমিটি গঠন কিংবা শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগসহ বিভিন্ন জটিলতা নিরসনের জন্য বারবার উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। যদিও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন ক্রমে অর্থ মন্ত্রণালয় ২০১৮ সালের নভেম্বরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রণিত স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদরাসা স্থাপন, স্বীকৃতি, পরিচালনা, জনবল কাঠামো ও বেতন-ভাতাদি/অনুদান সংক্রান্ত নীতিমাল জারি করা হয়। এটিও এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন শুরু হয়নি। এছাড়া প্রাথমিক স্তরে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি চালু থাকলেও মাদরাসার ক্ষেত্রে প্রাক-এবতেদায়ি শ্রেণি নিয়ে কোনো চিন্তাও নেই মন্ত্রণালয়ের।
এ বিষয়ে কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের উপ-সচিব মো. আবদুর রহমান বলেন, এমপিওভুক্তি এবং নীতিমালা দুটি বিষয় নিয়েই কাজ চলছে। বিষয়টি এখন মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে আছে।
মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কে এম রুহুল আমীন বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদরাসার একটি তালিকা প্রণয়ন করে আমরা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। আর যারা অনুদান পাচ্ছেন তাদের প্রকৃত তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। এখানে অনেক প্রতিষ্ঠানের নাম বাদ পড়েছিল সেগুলো আবারও চূড়ান্ত করার জন্য একটি কমিটি করে দেয়া হয়েছে। সেই কমিটি কাজ করছে। শিক্ষকদের ডাটাবেজ তৈরির কাজও চলমান জানিয়ে তিনি বলেন, স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষকদের অনেকেরই তথ্যে গরমিল আছে। ডাটাবেজ হলে সেই সমস্যারও সমাধান হবে এবং এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রেও সেটি কাজে লাগবে।
কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। আর শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য একাধিকবার ফোন করলে এবং ম্যাসেজ দিলেও তিনি সাড়া দেননি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।