পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করছে এবতেদায়ি শিক্ষার্থীরা। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো বাংলা, ইংরেজি, গণিতের পাশাপাশি আরবি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করে প্রাথমিকের সমমর্যায় তাদেরকে দেয়া হচ্ছে সনদও।
অথচ সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে ব্যবধান আকাশ-পাতাল। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়লে যেখানে শিক্ষার্থীদেরকে দেয়া হচ্ছে মিড ডে মিল (দুপুরের খাবার), উপবৃত্তি, জুতা, ব্যাগসহ অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ কেনার জন্য টাকা, সেখানে এবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত এর সবগুলো থেকেই। ফলে ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে মাদরাসা শিক্ষার্থীর সংখ্যা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইসলামী ও মাদরাসা শিক্ষাবিরোধী এক শ্রেণির নীতিনির্ধারক কৌশলে মাদরাসা শিক্ষা বিলুপ্ত করার জন্য মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করছেন।
একাধিক মাদরাসার শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, সাংবিধানিকভাবে যেখানে সকল শিশু একই ধরণের সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা সেখানে মাদরাসার শিক্ষার্থীরা অনাদিকাল হতে বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে। তাদেরকে শিশুকাল থেকেই মানসিকভাবে দুর্বল করে তোলা হচ্ছে। যখন মাদরাসার একজন শিক্ষার্থী দেখে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়লে খাবার, উপবৃত্তি ও শিক্ষা উপকরণ দেয়া হচ্ছে আর মাদরাসায় গেলে এর কোনটিই নেই। তখন তারা নিজেদেরা হীনমন্যতায় ভুগে। শিক্ষা কর্তারাই এসব শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করে হীনমন্যতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে মনে করেন মাদরাসা শিক্ষকরা।
জানা যায়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থীকে প্রতিমাসে ১৫০ টাকা করে উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মায়ের নগদ অ্যাকাউন্টে এই টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। একইসাথে দুপুর বেলা দুধ, ডিম, বিস্কুট, রান্না করা খাবার দেয়া হচ্ছে। শিক্ষা উপকরণ (জুতা, ব্যাগ) কেনার জন্য এক হাজার টাকা করে দেয়া হচ্ছে প্রতি শিক্ষার্থীকে।
আর দেশের প্রাথমিক স্তরের মোট শিক্ষার্থীর ১০ দশমিক ৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থী এবতেদায়ি মাদরাসায় (আলিয়া) পড়ে। অত্যন্ত দুঃখজনক হলো, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তি পেলেও স্বতন্ত্র এবতেদায়ি কিংবা সংযুক্ত (মাধ্যমিক বা দাখিল মাদরাসাগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত) এবতেদায়ি মাদরাসার প্রায় ৩৩ লাখ শিক্ষার্থীরা এখনো উপবৃত্তি থেকে বঞ্চিত। একাধিকবার ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের তথ্য চাওয়া হলেও এখনো তাদের উপবৃত্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ফলে ইবতেদায়ি (প্রাথমিক) স্তরে মাদরাসায় শিক্ষার্থী কমছে। মাদরাসায় পড়ানোর ইচ্ছা থাকলেও দরিদ্র পরিবারের অনেক অভিভাবক তাঁদের সন্তানদের উপবৃত্তির জন্য স্কুলে দিচ্ছেন। এ ছাড়া দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় রয়েছে স্কুল ফিডিং প্রকল্প। মাদরাসা এতেও পিছিয়ে। এতে মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থায় নিচের স্তরে শিক্ষার্থী কম থাকার প্রভাব ওপরের স্তরগুলোতে (দাখিল-কামিল) গিয়ে মারাত্মকভাবে পড়ছে।
আশরাফুল ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এবতেদায়ি মাদরাসার ছাত্ররাও তো এ দেশেরই সন্তান। উপবৃত্তি পাওয়া তাদের সাংবিধানিক অধিকার। ইনসাফপূর্ণ দৃষ্টিতে দেখে স্বতন্ত্র ও সংযুক্ত এবতেদায়ি মাদরাসাগুলোর শিক্ষার্থীদের দ্রুত উপবৃত্তির আওতায় আনা না হলে মাদরাসাগুলো ছাত্র সংকটে পড়তে বাধ্য হবে। কারণ শিক্ষার্থীরাই প্রাথমিকে উপবৃত্তি, দুপুরের খাবার, উপকরণ কেনার টাকা পাওয়ার খবর পেয়ে মাদরাসায় নয়, স্কুলে যেতে চাচ্ছে।
মাদরাসা থেকে ছেলেকে স্কুলে পাঠাতে বাধ্য হওয়া এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক রমজান আলী বলেন, দিনাজপুরের ফুলবাড়ি উপজেলায় সংযুক্ত একটি মাদরাসা ও প্রাথমিক স্কুল একই সাথে। ওই স্কুলে যখন দুপুরে খাবার দেয়া হয়, মাস শেষে উপবৃত্তির টাকা দেয় তখন ছেলে আর মাদরাসায় যেতে চায় না। বাধ্য হয়ে তাকে স্কুলে ভর্তি করিয়েছি।
জানতে চাইলে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কে এম রুহুল আমীন বলেন, মাদরাসা শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির আওতায় আনা উচিত। মাস শেষে কিছু টাকা পেলে তারা উপকৃত হতো এবং মাদরাসায় আসতে আগ্রহী হতো। মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের উদ্যোগে উপবৃত্তির জন্য ফিজিবিলিটি স্টাডি করে প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
উপবৃত্তির অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর একটি প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। তবে মাদরাসার শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি কিংবা মিড ডে মিল এসব বিষয় নিয়ে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের আগ্রহ নেই। এজন্য এ সংক্রান্ত ফাইল দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে। নির্দেশনা না পেলে এর কোন অগ্রগতি হবে বলেও তিনি মনে করেন না। #
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।