পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনাভাইরাসের ডেলটা ধরনের বিস্তার ঠেকাতে কাল সোমবার থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সারাদেশে ‘কঠোর লকডাউন’ জারির ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এ খবর শুনে গত বৃহস্পতিবার থেকে রাজধানী ছাড়তে শুরু করেছে মানুষ। অনেকটা ঈদযাত্রার মতো দলে দলে গ্রামে ছুটছে মানুষ। নগরীর প্রবেশমুখ ও বাহিরের অন্যতম সড়ক গাবতলী এলাকা, ঢাকা-মাওয়া রোড, ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডে, উত্তরার আব্দুল্লাপুরে দুদিন ধরে লেগেই আছে মানুষের ঢল।
দূরপাল্লার বাস না পেয়ে পিকআপ, মোটরসাইকেল বা বিভিন্ন ছোট বাহনে রাজধানী ছেড়ে যাচ্ছেন মানুষ। অনেকে হেঁটেই রওনা হয়েছেন বাড়ির পথে। মানুষের ঘরে ফেরা বন্ধে বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে চেকপোস্ট বসানো হলেও ঠেকানো যাচ্ছে না ঘরমুখো মানুষের স্রোত। যে যেভাবে পারছেন মরিয়া হয়ে ছুটছেন গ্রামের পথে।
গতকাল রাজধানীর প্রবেশমুখ ও বাহিরের অন্যতম সড়ক গাবতলী এলাকা, ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, উত্তরার আব্দুল্লাপুরে দেখা গেছে, ঘরমুখো মানুষের ঢল। দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় বিভিন্ন যানবাহনে কয়েক ধাপে, কয়েক গুণ ভাড়া বেশি দিয়ে গন্তব্যে ছুটছেন মানুষ। মাইক্রোবাস কিংবা ছোট বাহনে চেপে বসা এসব মানুষের মাঝে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বালাই নেই।
গাবতলী থেকে পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত চলাচল করা রেন্ট-এ-কারের মালিক সুমন বলেন, মানিকগঞ্জে লকডাউন চলছে। পুলিশের চেকপোস্টও আছে। তবে এসব চেকপোস্ট শহরকেন্দ্রিক। ঢাকা থেকে পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত যেতে বেশ কয়েকটি বিকল্প গ্রামীণ সড়ক রয়েছে। আমরা শহর এড়িয়ে এসব গ্রামীণ সড়ক ধরে চলাচল করছি।
গাবতলী এলাকার একটি ফিলিংস্টেশনে সুমনের প্রাইভেট কারে তিনজন যাত্রীকে বসে থাকতে দেখা গেছে। আরো দুজন যাত্রী খুঁজছিলেন সুমন। গাবতলীতে দেখা গেছে, রোমেজা খাতুন নামে এক নারী কাঁধে বস্তা নিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন আমিনবাজারের দিকে। সঙ্গে আনুমানিক ১০ বছর এবং তারো কম বয়সী আরেক কিশোর। তাদের মাথায়ও ব্যাগ। রোমেজা জানান, দুই কিশোরের মধ্যে একজন তার ছেলে, আরেকজন ভাগ্নে। মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া যাবে তারা। বাস বন্ধ, কিভাবে যাবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে রোমেজা খাতুন বলেন, কত মানুষ যাচ্ছে! সামনে গেলে একটা গতি হয়েই যাবে। কিছু না কিছু পাওয়া যাবেই। গাবতলী থেকে আমিনবাজারমুখী জনস্রোতের বেশির ভাগের মুখে মাস্ক নেই। মাস্ক ছাড়া চলাচল করা মানুষের ব্যাপারে কোনো তদারকিও চোখে পড়েনি। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও দেখা গেছে ঘরমুখি মানুষের ভিড়। সায়েদাবাদ টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকলেও মাইক্রোবাসে যাত্রী বহনের টিকিট বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্যে। যাত্রীদেরও হাঁকডাক করতে দেখা গেছে। অনেকে মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ ছোট ছোট যানে যাতায়াত করছে। এসব যাত্রীরা জানায়, জরুরি প্রয়োজনেই তারা যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছে। গোলাম রসুল যাবেন সিলেটে। যাত্রাবাড়ী থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত এসেছেন মোটরসাইকেলে। এখন খুঁজছেন বিকল্প পথ ও যান। তিনি বলেন, জরুরি কাজে বাড়ি যেতে হবে। কিন্তু টার্মিনালে এসে যে পরিস্থিতি দেখছি, তাতে মনে হলো অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হবে। উপায় নেই, যেতেই হবে। বাস বন্ধ থাকায় মাইক্রোচালকরা কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দাবি করছেন। কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে এক মাইক্রোবাসচালককে দেখা গেল কুমিল্লার যাত্রী ডাকতে। জনপ্রতি ৮০০ টাকা ভাড়ায় কুমিল্লার যাত্রী তোলা হচ্ছিল।
সড়কের মতো একই অবস্থা দেখা গেছে নৌপথেও। ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে লোকজন ছুটছে দক্ষিণবঙ্গের উদ্দেশে। সড়কে যানবাহনের সংকট থাকায় ভেঙে ভেঙে বিভিন্ন ছোট যানবাহন ও মোটরসাইকেলে তারা যাচ্ছে শিমুলিয়া ঘাটের উদ্দেশে। নৌপথেও নৌযান সংকট দেখা গেছে। লৌহজং ও শ্রীনগরের কয়েকটি স্পট থেকে যাত্রীরা মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে পদ্মা নদী পার হচ্ছে এসব ট্রলারে করে।
আমাদের মানিকগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, লকডাউন উপেক্ষা করে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় ঘরমুখো মানুষের ভিড় দেখা গেছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় দুই-তিন গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে বাড়ি ফিরছে মানুষ। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে যে যেভাবে পারছে বাড়ি যাচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, লকডাউনে ঢাকায় থাকলে সংসার চলে না, তাই বাড়ি যাচ্ছি।
২৮ জুন থেকে সারা দেশে কঠোর বিধিনিষেধ ঘোষণার পর গতকাল সকাল থেকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় মানুষ ও যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়। ঘরে ফেরার পাশাপাশি অনেকেই ঢাকায়ও আসছেন। দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধ থাকায় দুই-তিন গুণ বেশি ভাড়া গুনতে হয় তাদের। এদিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের চেকপোস্ট থাকলেও নানা অজুহাত দেখিয়ে বাড়ি যাচ্ছে মানুষ। পাটুরিয়া ঘাটে অন্যান্য দিনের মতো ভাড়ায়চালিত প্রাইভেটকারের কমতি ছিল না। ছিল ভাড়াচালিত মোটরসাইকেলও। গাবতলী থেকে প্রাইভেটকারে পাটুরিয়ায় যেতে ৪০০-৫০০ টাকা গুনতে হয় যাত্রীদের। মোটরসাইকেলে পাটুরিয়া থেকে গাবতলী যেতে গুনতে হচ্ছে জনপ্রতি ৫০০ টাকা। দুইজনের কম যাত্রী নেন না মোটরসাইকেল চালকরা।
মুন্সিগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সোমবার থেকে সারাদেশে কঠোর লকডাউনের ঘোষণা আসছে; এমন সংবাদের পর থেকেই গন্তব্যে যেতে মরিয়া উভয়পারের যাত্রীরা। মাওয়া নৌ-পুলিশের পরিদর্শক সিরাজুল কবির জানান, ১৪টি ফেরি জরুরি সেবার যানবাহন ও অ্যাম্বুলেন্স পারাপারের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে মানবিকতা বিবেচনায় যাত্রী ও ব্যক্তিগত যানবাহনও পারাপার করা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, ফেরিঘাটে ভিড়লে যাত্রীদের ভিড় বাড়ছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে ভিড় বাড়তে থাকে। মুন্সীগঞ্জ জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন দেব জানান, ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে ট্রাফিক ও জেলা পুলিশের একাধিক চেকপোস্ট রয়েছে। প্রয়োজন ছাড়া কোনো যানবাহন ঘাটে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। তাছাড়া প্রতিটি উপজেলাসহ জেলা সদরেই ছয়টি চেকপোস্ট রয়েছে। জরুরি সেবাসমূহের দোকান ছাড়া সকল প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। এরপরও মানুষ চেকপোস্ট পায়ে হেঁটে আবার যানবাহনে উঠে চলে যাচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।