বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
ট্রান্সজেন্ডার হওয়ায় যেখানে-সেখানে তাচ্ছিল্যের শিকার হতে হতো। হাত পাতা বা চাঁদা তোলা ছাড়া পেটে খাবার পড়ত না। খুকুমনির কাছে এখন এসব অতীত। হয়ে উঠছেন স্বাবলম্বী। এখন তিনি অনেকের অনুকরণীয়। খুকুমনির ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায় যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষণ নেয়ার পর। সেখান থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে শুরু করেন হাঁসের খামার। তার মুখে এখন সাফল্যের হাসি।
হাঁস পালনের জন্য শেরপুর সদর উপজেলার পাকুড়িয়া ইউনিয়নের বাধাতেগরিয়া গ্রামে নিজেদের বাড়িতে একটি ছাপড়া ঘর করেছেন খুকুমনি। এই খামারে বর্তমানে হাঁস আছে ১১০০।
হাঁসগুলোর সঙ্গে খুকুমনির দারুণ মিতালি। হাঁসগুলো তার কথা শোনে। প্রতিদিন সকালে তিনি পাশ্ববর্তী বিলে নিয়ে যান হাঁস। বাড়ি ফেরেন সন্ধ্যায়। প্রাণ জুড়ানো এক দৃশ্য।
খুকুমনি জানালেন, প্রতিটি হাঁসের বাচ্চা কেনা পড়েছে ২৫ টাকা। বিক্রি করা যাবে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। সব খরচ মিটিয়ে লাভের সম্ভাবনা কমপক্ষে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা।
এর আগেও হাঁস পালন করে ৪০ হাজার টাকা লাভ করেছিলেন খুকুমনি। এই টাকা দিয়েই বছর চলেছে তার।
আক্ষেপও আছে খুকুমনির। সরকার থেকে থাকার ঘর পেলেও উদ্যোক্তা হিসেবে আরও বড় হয়ে ওঠার জন্য সরকারি কোনো আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন না তিনি। পাচ্ছেন না সুদমুক্ত ঋণ। জানালেন, আর্থিক সহায়তা পেলে সারা বছরই হাঁস-মুরগি পালন করতে পারতেন তিনি।
খুকুমনি জানালেন, ট্রান্সজেন্ডার হলেও মানুষের কাছে আর হাত পাততে চান না তিনি। ‘আমি কারো কাছে হাত পেতে টাকা তুলে বাঁচতে চাই না। আমি কর্ম করে বাঁচতে চাই। সরকার আমাকে একটি ঘর আর জমি দিয়েছে, আমি এখানেই হাঁস-মুরগি পালন করে বেঁচে থাকতে চাই। আমার দাবি অন্যদের মতো যেন আমাকে সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থাটা করে দেয়া হয়।’
খুকুমনির দেখানো পথ ধরে স্বাবলম্বী হওয়ার পথে আরেক ট্রান্সজেন্ডার বৈশাখীও। তিনিও হাঁস পালন করছেন।
বৈশাখী বলেন, ‘আমরা সরকারি সহায়তা পেলে অন্যের কাছে হাত পাতব না। আমরা নিজেরাই কর্ম করে জীবন যাপন করব।’
শেরপুরে ট্রান্সজেন্ডারদের অনেকেই সেলাই, বুটিক, কম্পিউটার, গবাদিপশু পালনসহ নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, জেলায় বসবাসকারী ট্রান্সজেন্ডারের সংখ্যা ৫২। প্রশিক্ষণ পেয়ে তাদের সবাই এখন স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।
শেরপুরের ট্রান্সজেন্ডারদের সমাজের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয় স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘জন উদ্যোগ’। এরপর জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সাংবাদিকসহ অনেকেই তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসে। এর ফলে ট্রান্সজেন্ডার মানুষগুলোর মানসিক পরিবর্তন হতে থাকে। ভিক্ষাবৃত্তি বা চাঁদাবাজি নয় বরং প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছেন তারা।
ট্রান্সজেন্ডারদের কেউ ঘর ভাড়াও দিতে চায় না। তাদের দাবি ছিল বাসস্থানের ব্যবস্থা করা। তাদের সে দাবি পূরণ করেছে সরকার। শেরপুর সদরের কামারিয়া ইউনিয়নে ২ একর জায়গায় ৬৯ লাখ ৪ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য বাসস্থান ‘স্বপ্নের ঠিাকানা’ আবাসন প্রকল্প। সেখানে আছে পুকুর, শাকসবজি, ফসল আবাদের জন্য খোলা জায়গা। আত্মকর্ম প্রশিক্ষণের জন্য নির্মিত হচ্ছে একটি মাল্টিপারপাস কক্ষ। ইতিমধ্যে ৪০ জন হিজড়ার হাতে তুলে দেয়া হয়েছে নতুন ঘরের চাবি।
এ ব্যাপারে জেলা হিজড়া কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোর্শেদা জানান, ‘আমরা আর ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করতে চাই না। আমরা নিজেরাই উপার্জন করে বাঁচতে চাই। এ জন্য সরকারি সহযোগিতা চাই। আমরা ঘর, জমি পেয়েছি। এখন স্থায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার জন্য দাবি জানাই।’
শেরপুর জেলা ‘জন উদ্যোগ’-এর সাধারণ সম্পাদক হাকিম বাবুল বলেন, ‘আমরা যখন দেখলাম এ হিজড়া জনগোষ্ঠীর লোকগুলো অবহেলিত। তখন এদের আমরা সংগঠিত করি এবং তাদের স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় মূল ধারায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করি। তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। আস্তে আস্তে তারা স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’
ট্রান্সজেন্ডারদের সহায়তায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন শেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা ফিরোজ আল মামুন। তিনি বলেন, ‘আমরা হিজড়াদের জমি ও ঘরের ব্যবস্থা করেছি। প্রশিক্ষণ প্রদান করছি। ঋণ প্রদান শুরু করেছি। অন্যদেরও ব্যবস্থা করা হবে।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।