Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

কুষ্টিয়ায় পানি আটকে দুই প্রভাবশালীর মাছচাষ, তলিয়ে গেছে ৩০০ বিঘা জমির ফসল

কুষ্টিয়া থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ জুন, ২০২১, ২:২৭ পিএম

কুষ্টিয়ায় কয়েক দিন ধরেই মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। টানাবৃষ্টিতে ফসলের মাঠে পানি জমেছে।কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার সদকী ইউনিয়নের গোপালপুর মৌজায় ৩০ বিঘা জমির রোপা আমন ধানসহ প্রায় তিনশ বিঘা জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি নিষ্কাশনের পথে বাঁধ দিয়ে এলাকার প্রভাবশালী দুই ভাই মাছ চাষ শুরু করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

এলাকাবাসী ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সদকী ইউনিয়নের গোপালপুর মৌজায় কয়েকশ কৃষকের প্রায় তিনশ বিঘা জমি রয়েছে। সেখানে বছরে দুবার ধানের চাষ করেন কৃষকরা। কেউ আবার পাটচাষও করেন। প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই বৃষ্টির পানিতে ফসলের মাঠ প্লাবিত হয়। পানি নিষ্কাশন হওয়ায় কখনো জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় না।

কৃষকরা জানান, পানি নিষ্কাশনের পথে বাঁধ দিয়ে গত বছর থেকে মাছ চাষ করছেন সদকী দক্ষিণপাড়ার মৃত সৈয়দ আলী মণ্ডলের ছেলে বিল্লাল মণ্ডল (৬৫) ও তার ছোট ভাই আমজাদ আলী মণ্ডল (৬০)। তারা পানি নিষ্কাশনের পথে বাঁধ দিয়ে মাছচাষ শুরু করায় গত কদিনের বৃষ্টিতে প্রায় ৩০ বিঘা জমির রোপা আমনসহ তিনশ বিঘা ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে।

কৃষকদের অভিযোগ, দুই ভাই প্রভাবশালী হওয়ায় এলাকাবাসী তাদের কিছু বলতে পারে না। প্রতিবাদ করলেই সাঙ্গ-পাঙ্গদের নিয়ে এসে তারা মারধর করেন। এ বিষয়ে রোববার (২০ জুন) তারা কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

গোপালপুর মৌজার মৃত শ্রী নরেন্দ্র কুমার বিশ্বাসের ছেলে কৃষক শ্রীকৃষ্ণ কুমার বিশ্বাস বলেন, তার মাঠে এগারো বিঘা জমি রয়েছে। জমিতে প্রতি বছর দুবার ধানের চাষ হয়। একবার ধান ঘরে তুলে চারা রোপণের জন্য একবিঘা জমিতে বীজ বুনেছেন। কিন্তু পানি জমে বীজ ও সার নষ্ট হয়ে গেছে। পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বাকি জমিতে তিনি ধানের চারা রোপণ করতে পারছেন না।

মনিরুজ্জামান নামের অন্য এক কৃষক জানান, তার ১৩ বিঘা জমির মধ্যে চার বিঘা জমিতে চারা রোপণ করেছেন। বাকি জমিতেও চারা রোপণ করবেন। কিন্তু পানি বের হওয়ায় রাস্তায় বিল্লাল মণ্ডল ও আমজাদ মণ্ডল বাঁধ দিয়ে মাছচাষ করছেন। ফলে পানি জমে জমি ও ফসল তলিয়ে গেছে।

স্থানীয়রা জানান, আগে গোপালপুর মৌজার পানি সরকারি কালভার্ট হয়ে দিঘিরপাড়া খাল দিয়ে গড়াই নদীতে প্রবাহিত হতো। কিন্তু এবার প্রভাবশালীদের বাঁধে পানি আটকে গেছে। কথা বললেই খুন-খারাপির হুমকি দেয়া হয়।

জানতে চাইলে বিল্লাল মণ্ডল ও আমজাদ আলী মণ্ডল বলেন, গত বছর থেকে বাঁধ দিয়ে তারা মাছচাষ করছেন। মাঠে তাদের নিজেদেরও জমি রয়েছে। প্রতি বছরই মাঠে এমন পানি জমে বলে তারা দাবি করেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজীবুল ইসলাম খান বলেন, গ্রামবাসীর লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) আহ্বায়ক করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির বাকি দুজন হলেন-উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ও সদকী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা দেবাশীষ কুমার দাস বলেন, তদন্ত কমিটির সদস্য হওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছি। এখন পর্যন্ত কমিটির আহ্বায়কের কোনো নির্দেশনা পাইনি।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক তামান্না তাসনীম বলেন, সরেজমিনে দেখে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য ইউপি চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি তদন্ত করে এখনো রিপোর্ট জমা দেননি। রিপোর্ট পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে সদকী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদকে একাধিকবার মোবাইলে ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ