Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কুষ্টিয়ায় জমির মালিকানা নিয়ে সওজ ও গণপূর্তের রশি টানাটানি!

কুষ্টিয়া থেকে এস এম আলী আহসান পান্না | প্রকাশের সময় : ২২ জুন, ২০২১, ২:০৫ পিএম

কুষ্টিয়ায় একটি জমির মালিকানা নিয়ে গণপূর্ত অধিদফতর এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের মধ্যে রশি টানাটানি শুরু হয়েছে। দুপক্ষই জমির মালিকানা নিজেদের দাবি করায় বিষয়টি শেষ পর্যন্ত আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে।

এরইমধ্যে এক পক্ষ লাল নিশানা টানিয়ে দিয়ে সেখানে চারতলা বিশিষ্ট নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করেছে। সেখানকার শতাধিক গাছও কাটার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শহর থেকে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক ধরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামান্য একটু আগেই রাস্তার বাম পাশে একই জায়গার মধ্যে গণপূর্ত অধিদফতর এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের অফিস। তাদের একটিই প্রবেশদ্বার। যার বামদিকে সওজ’র সাইনবোর্ড আর ডানদিকে গণপূর্তের সাইনবোর্ড শোভা পাচ্ছে।

প্রবেশদ্বার পেরিয়েই বাম হাতে সওজের কার্যালয়। আর সামনে একটু এগিয়ে ডানদিকে গণপূর্তের কার্যালয়। একই কমপাউন্ডের মধ্যে দুটি দফতরের স্টাফ কোয়ার্টারও রয়েছে। আর দুই দফতরের সামনে রডের বেড়া দিয়ে ঘেরা প্রায় দুই বিঘা জমির বাগান। সেখানে বড়-বড় সেগুন, মেহগনি, আম, কাঁঠালসহ হরেক প্রজাতির প্রায় শতাধিকেরও বেশি গাছ রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে থেকেই জায়গাটি সিঅ্যান্ডবির অধীনে ছিল। তখন সড়ক ও জনপথ এবং গণপূর্ত বিভাগ একসঙ্গে ছিল। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বিভাগ দুটি আলাদা হয়ে গেলে সড়ক ও জনপথ বিভাগ গণপূর্তের জায়গা নিজেদের নামে রেকর্ড করে নেয়। এখন তারা জায়গাটি নিজেদের মালিকানা দাবি করে সেখানে প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে চার তলাভবন নির্মাণের জন্য গত ৮ জুন দরপত্র আহ্বান করেছে।

আগামী ৭ জুলাই দরপত্র খোলার তারিখ রয়েছে। এর মধ্যে তারা বাগানের প্রায় শতাধিক গাছ কাটার প্রক্রিয়াও শুরু করেছে বলে জানা গেছে।
তবে কুষ্টিয়া গণপূর্ত অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলামের দাবি, সম্পূর্ণ জায়গাই তাদের। সড়ক ও জনপথ বিভাগ তাদের জায়গা কৌশলে নিজেদের নামে রেকর্ড করে নিয়ে এখন মালিকানা তাদের বলে দাবি করছে। যা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আর এ নিয়ে বর্তমানে আদালতে মামলাও চলমান রয়েছে। এ অবস্থায় তারা কোনোভাবেই সেখানে ভবন নির্মাণ করতে পারে না।
তিনি আরও জানান, শহরতলীর চৌড়হাসে তাদের (সড়ক ও জনপথ বিভাগ) নির্ধারিত স্থান রয়েছে। ওই স্থানে তাদের ভবন নির্মাণের কথা। কিন্তু তারা সেখানে ভবন নির্মাণ না করে গাছ কেটে গণপূর্তের জমিতে চারতলা ভবন নির্মাণের পাঁয়তারা চালাচ্ছে।
অন্যদিকে কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাকিরুল ইলসামের দাবি, গণপূর্ত অধিদফতর নিজেদের মালিকানা দাবি করে সর্বপ্রথম ২০০৮ সালে কুষ্টিয়ার আদালতে রেকর্ড সংশোধনের মামলা করে। ২০১২ সালে আদালত তাদের মামলাটি খারিজ করে দেয়। ২০১৪ সালে তারা পুনরায় মামলা করে। ২০১৬ সালে আদালত এ মামলাটিও খারিজ করে দেয়। পরবর্তীতে তারা ২০১৭ সালে হাইকোর্টে একটি মিস মামলা দায়ের করে। হাইকোর্ট ২০১৯ সালের ৫ নভেম্বর মামলাটি খারিজ করে দেন। এরপর ২০২০ সালের ১৪ অক্টোবর মামলাটি সানি করে নিম্ন আদালতে পাঠিয়ে দেন।

তিনি আরও জানান, বার বার আদালতে হেরে গিয়েও গণপূর্ত অধিদফতর একের পর এক মামলা দিয়ে অহেতুক বাকবিতণ্ডা তৈরি করছে। এর একটা সুষ্ঠু সমাধান হওয়া উচিত।

এদিকে গাছ কেটে ভবন নির্মাণের বিরোধিতা করছেন জেলার পরিবেশকর্মীরা। পরিবেশবিদ খলিলুর রহমান মজু বলেন, ‘একটি দেশের প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার জন্য যতটুকু বনভূমি থাকা প্রয়োজন আমাদের তা নেই। এখানে হরেক প্রজাতির প্রায় শতাধিকেরও বেশি গাছ রয়েছে। এসব গাছ কেটে ভবন নির্মাণ সঠিক কাজ হবে না।
এদিকে সড়ক ও জনপথ বিভাগ বন বিভাগের অনুমতি ছাড়াই গাছ কেটে নেয়ার পাঁয়তারা চালাচ্ছে যা কোনোভাবেই আইনসিদ্ধ নয় বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ছালেহ মো. শোয়াইব খান। তিনি জানান, বন আইন অনুযায়ী যেকোনো দফতরে গাছ কাটতে হলে বন বিভাগের অনুমতি নিতে হবে।

গাছ কাটার প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাকিরুল ইসলাম জানান, সওজ’র নিজস্ব জমিতে গাছ কাটার জন্য তাদের রাজশাহীতে অবস্থিত আরবরি কালচার ডিপার্টমেন্টের অনুমতির প্রয়োজন হয়।

এর জন্য আলাদা করে বন বিভাগের কোনো অনুমতির প্রয়োজন নেই বলেও দাবি করেন তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ