Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ষণ ও হত্যা মামলার বাদিকে জোরপূর্বক স্বাক্ষর : কোর্টে মামলা

ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৭ জুন, ২০২১, ৫:২৫ পিএম

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে আলোচিত একটি ধর্ষণ ও হত্যা মামলার বাদিকে প্রাণনাশের হুমকি ও জোরপূর্বক উঠিয়ে নিয়ে খালি ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর রাখার অভিযোগ উঠেছে আসামীদের বিরুদ্ধে। এঘটনায় ধর্ষণ ও হত্যা মামলার বাদির মামা হারেছ উদ্দিন (২৮) বাদি হয়ে গত ৮জুন ময়মনসিংহ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ৪নং আমলী আদালতে ৬জনের নাম উল্লেখ ও তিন চারজনকে অজ্ঞাত করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং- ২০৪/২১।
এমামলায় আসামি করা হয়, ধর্ষণ ও হত্যা মামলার আসামি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম ও তার বড় ভাই ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি মঞ্জুরুল হক, আরেক বড় ভাই শামছুল আলম, নুর মোহাম্মদ, চেয়ারম্যানের ভাতিজা সানি ও রনি, কিন্তু শামছুল আলম, নুর-মোহাম্মদ ও ভাতিজা সানি এবং রনি পূর্বের মামলার আসামি ছিলো না।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ২৭মে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে ১৮নং চর আলগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বটগাছ তলায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছেন ধর্ষণ ও হত্যা মামলার বাদি স্বপন মিয়া। এসময় নূর মোহাম্মদ ও রনি এবং অজ্ঞাত আরো তিন চার জন সহ মামলার বাদি স্বপন ও তার ছেলে তরিকুলকে জোরপূর্বক মাইক্রোবাসে উঠিয়ে ময়মনসিংহে নিয়ে যায়।

তারপর ধর্ষণ ও হত্যা মামলার প্রধান আসামি ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম, বাদি স্বপনকে মামলা প্রত্যাহারের হুমকি প্রদান করে বলেন যে, মামলা প্রত্যাহার না করলে তাকে ও তার ছেলেকে খুন করে লাশ বস্তায় ভরে গুম করে ফেলবে। তখন স্বপন মামলা প্রত্যাহার করতে অস্বীকৃতি জানালে, আসামীরা স্বপনের চোখ বেঁধে হাতপায়ে কাঠের রুল দিয়ে আঘাত করে। এবং মামলা প্রত্যাহার না করলে এখান থেকে মুক্তি দিবে না বলে হুমকি প্রদান করতে থাকে। এমতাবস্থায় ছেলে তরিকুল তার বাবার এ দূরাবস্থা দেখে আসামীদের পায়ে পড়ে বাবার জন্য প্রাণভিক্ষা চায়।

এসময় বাবাকে বাঁচাতে ছেলে এমন আকুতি আসামিদের করলে তখন আসামি শফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের কথামত মামলা প্রত্যাহারসহ যাবতীয় কাজ করলেই এখান থেকে মুক্তি পাবে না হলে মুক্তি পাবে না। এমন পরিস্থিতি দেখে তখন স্বপন ও তার ছেলে তাদের শর্ত মেনে নেবে বলে স্বীকার করে। পরে শফিকুল ইসলাম চেয়ারম্যানের নির্দেশে তার লোকজন একশত টাকার দশটি ষ্ট্যাম্প নিয়ে আসে। এরমধ্যে মামলা প্রত্যাহার সংক্রান্ত মিথ্যা বানোয়াট লেখা প্রিন্ট করা ৪টি ষ্ট্যাম্পে স্বপন ও তার ছেলের স্বাক্ষর নেয় এবং মোবাইলে ছবি ধারণ করে রাখে। যা দিয়ে দুটি এফিডেভিট তৈরি করা হয়। বাকি ৬টি খালি ষ্ট্যাম্পে তাদের স্বাক্ষর রেখে এই বলে হুমকি প্রদান করে যে, যদি তারা অবাধ্য হয় তাহলে এই খালি ষ্ট্যাম্পে ইচ্ছেমত টাকা বসিয়ে আদায় করবে। স্বাক্ষরের কাজ শেষে সন্ধ্যার স্বপন ও তার ছেলে তরিকুলকে নিয়ে বাড়িতে আসার উদ্দেশ্যে ময়মনসিংহ ব্রীজ মোড়ে আসে। তখন স্বপন ও তার ছেলে পস্রাব করবে বলে গাড়ি থেকে নেমে কৌশলে পালিয়ে যায়।

মামলার বাদী হারিছ উদ্দিন জানান, স্বপন ও তার ছেলে তরিকুল, মামলার আসামি ও তাদের লোকজনের ভয়ে আত্মরক্ষার জন্য বিভিন্ন স্বজনের বাড়ীতে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তাই আমি স্বপনের মামা হিসেবে তার নিরাপত্তার জন্য মামলাটি করেছি।

উল্লেখ্যঃ উপজেলার উচাখিলা ইউনিয়নের চরআলগী গ্রামের মো. স্বপন গত ২৪ মে ময়মনসিংহের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে একটি মামলা করেন। এতে আসামী করা হয় উচাখিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম, তার বড় ভাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মঞ্জুরুল হক, তরুণীর মাসহ ৫ জনকে আসামী করা হয়। মামলায় উল্লেখ করা হয়- স্বপনের সাবেক স্ত্রী আছমা তার তিন মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে উচাখিলা বাজারের সরকারি ঘরে বসবাস করতেন। মায়ের সহায়তায় উচাখিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তরুণীটিকে বিয়ের প্রলোভনে ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করে। এতে অন্তঃস্বত্ত্বা হয়ে পড়লে পরে গর্ভপাত ঘটানো হয়। কিন্তু তাতে রক্তক্ষরণ শুরু হলে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হলে ১১ মে রাতে মৃত্যু বরণ করে। কিন্তু ঢাকার নিউরোসাইন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করা তরুণীর ডেথ সার্টিফিকেটে উল্লেখ করা হয়েছে- যক্ষার জীবাণু শরীরে ছড়িয়ে পড়া এবং এই জীবাণু ব্রেইনের রক্তনালীতে বাসা বাঁধার কারণে ইশকেমিক স্ট্রোক মৃত্যুর কারণ। বর্তমানে মামলাটি ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে তদন্তে রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ