বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
বসন্ত আর গ্রীষ্ম বিদায় করে বর্ষার শুরুতে ‘জাতীয় কবি নজরুল’ আর ‘প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ’র বরিশালে রূপসী বাংলার চিরয়াত রূপ ফুট উঠছে। এবার লাগাতার অনাবৃষ্টির পরে দক্ষিণপশ্চিম মৌসুমী বায়ুতে ভর করে সময়মত বর্ষা শুরু হবার পরে বরিশাল মহানগরীও প্রকৃতির ছোয়ায় এখন সজীব। যদিও অব্যাহত নগরায়নের ধাক্কায় এ নগরী থেকে নজরুলের ঝাউ ও পাম গাছ সহ প্রকৃতির অনেক কিছুই ধ্বংস হয়েছে ইতোমধ্যে। তবুও নজরুলের চোখে দেখা আর জীবনানন্দের স্বপ্নের বরিশালে এখনো প্রকৃতির অনেক অপরূপ দৃশ্য বর্তমান। অব্যাহত নগরায়নের ধাক্কায় এ নগরী থেকে গত দুই দশকে অনেক সবুজ বিলুপ্ত হলেও এখনো কিছু কিছু এলাকায় প্রকৃতি তার জানান দিচ্ছে।
আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বৃটিশ যুগে বরিশালে এসে এনগরীর প্রকৃতিক শোভায় মোহিত হয়ে তার অমর উপণ্যাশ ‘মৃত্যু ক্ষুধা’য় এ শহরের প্রকৃতির অপরূপ রূপের বর্ণনাও দিয়েছেন। আজকের এ মহানগরীতে বৃটিশ যুগে কির্তনখোলা নদী তীরে সুরকীর রাস্তা আর গাছ গাছালী আামাদের জাতীয় কবিকে যথেষ্ঠ আলোড়িত করেছিল।
জাতীয় কবি লিখেছিলেন, ‘বরিশাল। বাংলার ভেনিস। আঁকাবাঁকা লাল রাস্তা। শহরটি জড়িয়ে ধরে আছে ভুজ-বন্ধের মত করে। রাস্তার দু-ধারে ঝাউ গাছের সারি। তারই পাশে নদী। টলমল টলমল করছেÑবোম্বাই শাড়ী পরা ভরা-যৌবন বধুর পথÑচলার মত করে। যত না চলে, অঙ্গ দোলে তার চেয়ে অনেক বেশী। নদীর ওপারে ধানের ক্ষেত। তারও ওপারে নারকেল-সুপারী কুঞ্জঘেরা সবুজ গ্রাম, শান্ত নিশ্চুপ। সবুজ শাড়ীÑপরা বাসর-ঘরের ভয়-পাওয়া ছোট্ট কনে-বৌটির মত। এক আকাশ হতে আর-আকাশে কার অনুনয় সঞ্চারন করে ফিরছে। বৌ কথা কও, বৌ কথা কও। আঁধারে চাঁদর মুড়ি দিয়ে তখনো রাত্রী অভিসারে বোরোয়নি। তখনো বুঝি তার সন্ধ্যা প্রসাধন শেষ হয়নি। শঙ্কায় হাতের আলতার শিশি সাঁঝের আকাশে গড়িয়ে পড়েছে। পায়ের চেয়ে আকাশটাই রেঙে উঠেছে বেশী। মেঘের কালো খোপায় ভূতীয়া চাঁদরে গো’ড়ে মালাটা জড়াতে গিয়ে বেঁেক গেছে। উঠোনময় তারার ফুল ছড়ানো। .........।’
প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশ তার ‘রূপসী বাংলা’তে বরিশালের ‘কির্তনখোলা’ ও ‘সুগন্ধা’র শাখা নদী ‘ধানসিড়ি’র অপরূপ বর্ণনা দিয়েছেন। কবি তার চোখে দেখা ধানসিড়ি’কে কবিতার ভাষায় লিখেছেন, ‘আবার আসিব ফিরে ধান সিড়িটির তীরে এই বাংলায়, হয়ত মানুষ নয়Ñহয়তো বা শঙ্খচীল শালিকের বেশে; হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের বেশে নবান্নের দেশে কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঠাল ছায়ায়;........।
কিন্তু অপরিকল্পিত ও অব্যাহত নগরায়নে কবি নজরুল ও জীবনানন্দর বরিশাল থেকে প্রকৃতি অনেকটা বিলুপ্ত হলেও তাকে রক্ষা করা সহ ফিরিয়ে আনার সময় এখনো আছে। এ অভিমত পরিবেশবীদদের। বরিশালের বিএম কলেজের ইংরেজীর অধ্যাপক কবি জীবনানন্দ এনগরীতেই বড় হয়েছেন। নগরীর এক সময়ের বেলস পার্ক, বর্তমানের বঙ্গবন্ধু উদ্যানের কোল ঘেষে বাঁধ রোডের ধারে সোনালু গাছের ফুল এ নগরীর শোভা বর্ধন করছে এখনো। যদিও এ উদ্যানের অভ্যন্তরে এখন আগের সুস্থ সামাজিক পরিবেশ অনেকটাই বিপন্ন। উদ্যানটির ওয়াকওয়েতে নারী-পুরষ এখন আর নির্বিঘেœ, নির্ভরতার সাথে হাটতে আস্থা রাখতে পারছেন না।
করোনার মহামারীর মধ্যেও স্কুল-কলেজ পড়–য়া (?) কতিপয় বখাটে ছেলে মেয়েদের অনৈতিক বিচরনে বিবেকবান মানু লজ্জিত হন। অনেক হায়াহীন ছেলে মেয়েদের প্রেমের লীলাভূমিতে পরিনত হয়েছে এ উদ্যান। পড়ার টেবিল ছেড়ে গভীররাত পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের অনৈতিক বিচরনে উদ্যানের সামাজিক পরিবেশ বিপন্ন হলেও তা দেখার কেউ নেই।
উদ্যানটির পশ্চিম পাড়ে ‘ভিআইপি এলাকা’ খ্যাত রাজা বাহাদুর রোডের পাশের শতবর্ষী রেইন-ট্রি ও কৃষ্ণচূড়া সহ অনেক গাছই ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়েছে নানাভাবে। ঐ সড়ক ও বঙ্গবন্ধু উদ্যানের মধ্যবর্তি লেকটির পানি দুষিত হয়ে দূর্গন্ধ ছড়ায় প্রায়সই।
অথচ এ বঙ্গবন্ধু উদ্যানেই প্রতিবছর ‘বিভাগীয় বৃক্ষমেলা’র আয়োজন করা হয়। সে মেলায় বিভাগ ও জেলার শীর্ষ কর্মকর্তা সহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দও পরিবেশের জন্য বৃক্ষ রোপনের অপরিহার্যতা নিয়ে অনেক ভাল কথা বলেন। কিন্তু সে মেলার পড়ে অনেকেই নিজেদের উপদেশের কথাটিই হয়ত মনে রাখেন না। গত দুই দশকে বঙ্গবন্ধু উদ্যান সংলগ্ন ভিআইপি সড়ক থেকে অনেক গাছ বিলুপ্ত হলেও কেউ নতুন করে একটি বৃক্ষও রোপন করেন নি।
তবে এর পরেও বঙ্গবন্ধু উদ্যানের অভ্যন্তরে ও পূর্ব পাশের বান্দ রেডে নানা গাছ আর এ সোনালু ফুল এখনো নগরবাসীর মন ও চোখকে কিছুটা শ্রান্তি দিচ্ছে।
‘নজরুলের বরিশাল’ শহর এখন মহানগরী। তবে অব্যাহত নগরায়নের সাথে আমাদের বিবেকহীন কর্মকান্ডে এ নগরীর প্রকৃিতর রূপ অনেকটাই মলিন হলেও সম্পূর্ণ বিলীন হয়নি। তাকে ধরে রাখতে নগর প্রশাসনকে আরো উদ্যোগী হবার তাগিদ দিয়েছেন পরিবেশবীদগন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।