পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীর বিমানবন্দর সড়ক থেকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত নির্মাণ হচ্ছে দেশের প্রথম বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি)। রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর ও স্বল্প সময়ে যাতায়াত করতেই নেওয়া হয়েছে এই প্রকল্প। কয়েক দফা সময় বাড়ানোর সঙ্গে বেড়েছে প্রকল্পটির ব্যয়। তবে বিকল্প সড়কের ব্যবস্থা না করে গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কের ওপর উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়ায় মানুষকে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে হচ্ছে কয়েক বছর ধরে। আর বর্ষা এলেই সেই দুর্ভোগ বেড়ে বর্ণনাতীত ভোগান্তিতে রূপ নেয়। গতকাল মঙ্গলবার সেই দুর্ভোগ অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে ঢাকার বাইরে এশিয়ান হাইওয়ে পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। আর যানজটে ঢাকা ছিল অনেকটাই অবরুদ্ধ। এ বিষয়ে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সামছুল হক বলেন, উন্নয়ন কাজে সমন্বয় না থাকায় সড়কে যান চলাচলে বিশৃঙ্খলা বাড়ছে। বৃষ্টির পানি সামান্য জমলে অবস্থা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এজন্য উপযোগী মানের বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থাপনা দরকার। শুধু ফ্লাইওভার করলেই হবে না। এখন ফ্লাইওভারে যানজটে বসে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত না করে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করে সুফল মিলবে না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, যানজটের প্রধান কারণ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী-গাজীপুর অংশ। এই অংশে কয়েক বছর ধরে চলছে বিআরটি প্রকল্পের কাজ। প্রকল্পের কাজ চলাকালে নিচের সড়কের মেরামতের দায়িত্ব প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের। কিন্তু তারা সড়ক সংস্কার না করায় বর্ষার পানিতে শত শত খানাখন্দ তৈরী হয়েছে সড়কে। এতে করে যানবাহন চলাচল করতে গিয়ে থেমে যাচ্ছে। প্রায়শই ঘটছে দুর্ঘটনা। ঢাকার বিমানবন্দর সড়কেও যানজটের প্রধান কারণ বিআরটিসহ একাধিক চলমান প্রকল্প। এ জন্য সমন্বিত যে উদ্যোগের দরকার ছিল তা অনুপস্থিত। বরং নানা অব্যবস্থাপনায় বিমান বন্দর সড়কে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে একই অবস্থা বিরাজ করছে।
বিআরটি প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২ হাজার ৪০ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করে ২০১২ সালে বিআরটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালে। কয়েক দফায় মেয়াদ ও ব্যয় বাড়িয়ে ২০১৮ সালে আনা দ্বিতীয় সংশোধনীতে প্রকল্প ব্যয় দ্বিগুণ বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা এবং সময় বাড়ানো হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। তবে এ সময়ের মধ্যে প্রকল্পের অর্ধেক কাজ সম্পন্ন হয়েছে মাত্র।
গাজীপুরের জৈনাবাজার থেকে ঢাকার গুলিস্তানে প্রতিদিন তিনবার যাওয়া-আসা করতেন প্রভাতী পরিবহনের চালক বিল্লাল হোসেন। কিন্তু কয়েক বছর ধরে বিআরটি প্রকল্প উন্নয়ন কাজের জন্য যানজটের কবলে পড়ে একবারের বেশি তিনি যেতে পারেন না। বিল্লাল হোসেন বলেন, জয়দেবপুর-টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত ১২কিলোমিটার সড়কে যেতে কিছু দিন আগেও লাগত দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। আর এখন সামান্য বৃষ্টি হলে লাগছে ৫-৬ ঘণ্টা। ২০ মিনিটের সড়কে এখন আর একবারের বেশি যাতায়াত করা যায় না। যানজটের কারণে রাতে উত্তরার উদ্দেশে রওনা দেন ব্যবসায়ী বিল্লাল হোসেন বেপারি। তিনি বলেন, সোমবার রাত ১১টায় ব্যক্তিগত গাড়িতে গাজীপুরের মাওনা চৌরাস্তা থেকে উত্তরার উদ্দেশে রওনা দেই। ভোর সাড়ে ৪টায় বাসায় পৌঁছায়। গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার কর্মচারি মোবারক হোসেন বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় গাজীপুর থেকে উত্তরায় যাওয়ার জন্য বাসে উঠি। এক কিলোমিটার এলাকায় ভোগড়া পর্যন্ত আসার পর যানজটের কবলে পড়ি। বাসে দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর হেঁটেই রওনা হই। রাত আড়াইটাই বাসায় পৌঁছায়। শ্রীপুর উপজেলা হাসপাতাল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক জানান, শ্রীপুরের হাসপাতালগুলোর জরুরি বিভাগের রোগী আগে ঢাকায় পাঠানো হতো। মহাসড়কের জয়দেবপুর চৌরাস্তা থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটে পড়ে থাকতে হয় রোগীদের। তাই জরুরি বিভাগের রোগীদের এখন রাজধানী ঢাকায় পাঠানোর পরিবর্তে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।
বিআরটি প্রকল্পের কাজ শুরুর পর থেকে বিভিন্ন বিভাগের সঙ্গে সমন্বয়হীনতা, যানজট কমানোর কোনো পদক্ষেপ বা বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থা সৃষ্টি করতে না করেই প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ায় রাজধানীর উত্তরের জেলাগুলোর মানুষ কয়েক বছর ধরেই ভোগান্তি পোহাচ্ছে। বিশেষ করে বর্ষায় পানিবদ্ধতায় ভোগান্তি বেড়েছে কয়েক গুণ। বিকল্প আশুলিয়া সড়কেরও বেহাল দশা। বর্ষার আগে সামান্য বৃষ্টিতে পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে আশুলিয়া সড়ক। স্থানীয়রা জানান, আশুলিয়ার নিম্নাঞ্চলগুলো ভরাট না করতে পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞা আছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা! একের পর এক নিম্নাঞ্চল ও লেক ভরাট করে নতুন নতুন ভবন ও কারখানা নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে করে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। তাতেই সামান্য বৃষ্টিতে সড়ক ডুবে যাচ্ছে। সড়কের বিভিন্ন অংশে যানবাহন আটকে থাকছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। বৃষ্টির পানিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় পানিজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
অন্যদিকে, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই ঢাকার বিমানবন্দর থেকে হাজীপুর পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়ক যেন মানুষের গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। টঙ্গী থেকে চেরাগ আলী, সাতাইশ, বোর্ডবাজার, গাজীপুর স্টেশন রোড, চৌধুরী বাড়ী, তারগাছ, ঢাকা বাইপাস মোড় ও ভোগড়া এলাকায় সড়কে খানাখন্দ বেশি। বিশেষ করে টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশে ড্রেন নির্মাণ কাজ চলমান হওয়ায় মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ধীরগতির উন্নয়ন কাজ, সিংহভাগ সড়ক দখল করে নির্মাণযজ্ঞ, সড়েকর মধ্যেই নির্মাণ সামগ্রীও ময়লা রাখা, ধীরগতির কাজ, কয়েকস্থানে এক লেনের সড়কে অধিক যানবাহনের চাপেও যানজটেরও সৃষ্টি হচ্ছে। অসহনীয় এ যানজটে গাজীপুরের বিভিন্ন শিল্প কারখানায় সময়মতো পণ্য পরিবহনেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক উত্তর) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, মূলত গাজীপুর থেকে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত সড়ক খানাখন্দে ভরা। পানি নিস্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই, সেইসঙ্গে উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। অধিকাংশ স্থানে সড়ক বিভাজন নেই। সামান্য বৃষ্টিতে পানিবদ্ধতার শিকার হয়ে যানবাহন আটকে পড়ছে। আমরা সীমিত জনবল দিয়ে কোনোভাবেই সড়কের এই অংশে যানজট নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছি না। তিনি বলেন, এই সড়কে কোনো ধরনের শৃঙ্খলা নেই। কাজ চলমান থাকায় একদিকে সড়ক সরু হয়ে পড়ছে অন্যদিকে যানবাহনের চাপে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে বিআরটি প্রকল্প পরিচালক এএসএম ইলিয়াস শাহ বলেন, প্রকল্প শুরুর আগে বিকল্প সড়ক নির্মাণের সুযোগ না থাকায় ডাইভারশন সড়ক নির্মাণ করা যায়নি। তবে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা ও করোনা মহামারির মধ্যেও আমরা ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৬০ ভাগ কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছি। কোনো অঘটন না ঘটলে নির্ধারিত সময়ে আগামী এক বৎসরের মধ্যেই কাজ শেষের আশা রয়েছে। পানিবদ্ধতা ও যানজটের বিষয়ে তিনি বলেন, টঙ্গীসহ দু’একটি স্থানে নির্মাণ কাজের জন্য সামান্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। আমরা এসব স্থানে দ্রুত কাজ করছি। চলতি মাসেই এ কাজ সম্পন্ন হলে আশা করছি আর যানজট হবে না।
এদিকে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী-গাজীপুর অংশের যানজটে প্রভাব পড়ে বিমানবন্দর সড়কসহ পুরো রাজধানীতে। গতকাল দিনভর রাজধানীজুড়ে ছিল ভয়াবহ যানজট। আষাঢ়ের প্রথম দিনে থেমে থেমে বৃষ্টি তার উপর ভয়াবহ যানজটে রাজধানীবাসীর ভোগান্তির অতীতের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যায়। রাজধানীর ইসিবি চত্বর থেকে উত্তরায় অফিসগামী রাকিবুল হক নামে এক ব্যক্তি ফেসবুকে স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ইসিবি চত্বর থেকে উত্তরা পর্যন্ত (১২.২ কিলোমিটার) রাস্তা পার হতে ৩ ঘণ্টা ২০ মিনিট লেগেছে। ভুক্তভোগী আব্বাস আলী বলেন, আমরা আসলে খুবই অসহায়। হাতে অতিরিক্ত নিয়ে বের হওয়ার পরেও সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারি না। সরকারের কোনো চিন্তাতেই নেই আমরা এমন কষ্ট করি রাস্তায়। আসলে কিছু বলার নাই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।