Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সিঁড়িতেই লাইলী বেগমের দেড় যুগ

সৈয়দপুর (নীলফামারী) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৩ জুন, ২০২১, ১২:০২ এএম

প্রায় দেড় যুগ ধরে ধনাঢ্য এক ব্যক্তির বাড়ির সিঁড়িতে বসবাস করছেন সহায় সম্বলহীন লাইলী বেগম (৬০)। সেখানেই চলছে তার থাকা-খাওয়া, গোসল-ঘুমানোসহ সব কাজ। আগে পৃথিবীর আলো দেখতে পেলেও এখন আর চোখে দেখেন না। এমনকি নিজের সম্বন্ধে কাউকে কিছু বলতেও পারেন না। লাইলী বেগমকে সৈয়দপুরের কয়ানিজপাড়ার বাড়ির দরজায় থাকতে দিয়েছেন রানা গার্মেন্টসের মালিক রানা ইসলাম।
বাড়ির মালিক ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লাইলী বেগমের বিয়ে হয় ঐ এলাকার আরিফুল ইসলামের ছেলে ফরিদুল ইসলামের সঙ্গে। বিয়ের পরই দুর্ঘটনায় মারা যান ফরিদুল ইসলাম। এরপর শ্বশুরবাড়িতে তার আর জায়গা হয়নি। তার কোনো সন্তানও নেই। তার বাবার বাড়ি উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের ধলাগাছ গ্রামে। ছোটবেলাতেই বাবা সিরাজুল ইসলাম মারা যান। আর মাকে হারান ১৪ বছর বয়সে। আপনজন বলতে আছে তার ভাই মনোয়ার ইসলাম। পেশায় রিকশাচালক। দীর্ঘদিন ধরে তারও কোনো খোঁজ-খবর নেই। এলাকাবাসী আরো জানান, প্রথম দিকে লাইলী বেগম থাকতেন একই এলাকার ভাঙা এক বাড়ির চালাবিহীন বারান্দায়। তার কষ্ট দেখে রানা গার্মেন্টসের মালিক রানা ইসলাম তার বহুতল বাসভবনের প্রধান দরজায় থাকতে দেন। ২০০৩ সাল থেকে এভাবে এখানেই আছেন তিনি।
সরেজমিন কয়ানিজপাড়া এলাকার ঐ বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িটির দরজার এক পাশে ওপরের দিকে টাঙানো দড়িতে কয়েকটি কাপড় ঝুলছে। আর কাপড়গুলোর নিচে সিঁড়িতে শুয়ে আছেন লাইলী বেগম। ঐ বাড়ির সামনের মুদিদোকানদার জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, আমি এই দোকান করার পর থেকেই ঐ অন্ধ মহিলাকে এখানে দেখছি। রোদ, ঝড়-বৃষ্টিতেও তিনি এই বাড়ির দরজাতেই থাকেন। আমি তাকে সকালের নাশতা খেতে দিই। আর অন্যান্য সময়ে কেউ দিলে তার খাবার জোটে, তা না হলে না খেয়েই থাকেন।
এ অবস্থাতেও লাইলী বেগমের ভাগ্যে জোটেনি বয়স্ক কিংবা প্রতিবন্ধী ভাতা। সৈয়দপুর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জোবায়দুল ইসলাম মিন্টু জানান, লাইলী বেগমের জন্মনিবন্ধন কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্র না পাওয়ায় ভাতার ব্যবস্থা করা যায়নি।
সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসিম আহমেদ জানান, একজন মানুষ বাড়ির দরজায় জীবন কাটাবে, এটা খুব বেদনাদায়ক। তার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপজেলা সমাজসেবা অফিসার নূর মোহাম্মদ জানান, দরজায় জীবন কাটানোর বিষয়ে তারা জানতেন না। খোঁজ নিয়ে অন্ধ ঐ নারীকে প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়া হবে। সমাজসেবা কার্যালয় তার চিকিৎসার ব্যবস্থাও করবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ