Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সামাল দেওয়া কঠিন হতে পারে

ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে তৃতীয় ঢেউয়ের শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ জুন, ২০২১, ১২:০০ এএম

দেশজুড়ে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার বাড়ছে। এই অবস্থায় বিপজ্জনক ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে বাংলাদেশে করোনার তৃতীয় ঢেউ দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, আগে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে কিছুটা সময় লাগলেও নতুন ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রে তা অতিদ্রুত গুরুতর পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। শঙ্কা জানিয়ে তারা বলেন, ভারতের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট অনেক বেশি সংক্রামক এবং সংক্রমণের হার যদি ক্রমাগত বাড়তে থাকে তাহলে আমাদের স্বাস্থ্যসেবার সক্ষমতা দিয়ে তা সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে যাবে। গত রোববার রাতে সেন্টার ফর রিসার্চ, ইনোভেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাকশন আয়োজিত ‘করোনার ভ্যাকসিন বনাম ভ্যারিয়েন্ট’ শীর্ষক সায়েন্টিফিক সেমিনারে আলোচকরা এ মতামত দেন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, লকডাউন একটি স্বল্পমেয়াদি সমাধান আর মহামারি নিয়ন্ত্রণের কার্যকরী সমাধান হলো টিকা। পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোতে টিকা ও ভ্যারিয়েন্টের মধ্যে প্রতিযোগিতায় টিকা জয়ী হচ্ছে। বাংলাদেশে মহামারি নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে অতি দ্রুত টিকা সংগ্রহ করতে হবে এবং কমপক্ষে ৬০-৭০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হবে। তবে এখনই সবাইকে টিকার আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না বলে সরকারের পক্ষ থেকে কৌশলগত সিদ্ধান্ত এবং মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি চর্চার মাধ্যমে সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। সেমিনারে ‘সেন্টার ফর রিসার্চ, ইনোভেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাকশন’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. শাহরিয়ার রোজেনের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) প্রাক্তন অধ্যক্ষ ডা. খান আবুল কালাম আজাদ এবং যুক্তরাজ্যের সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট ড. খোন্দকার মেহেদী আকরাম। সেমিনারে সায়েন্টিফিক ব্রিফ উপস্থাপন করেন রিসার্চ এবং পলিসি অ্যানালিস্ট ডা. নাজিফ মাহবুব।

বাংলাদেশে ভারতীয় ডেল্টা ধরন প্রাধান্য বিস্তার প্রসঙ্গে ড. খোন্দকার মেহেদী আকরাম বলেন, সম্প্রতি আইইডিসিআর’র একটি রিপোর্টে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, তা সারাদেশের অবস্থাকে প্রতিনিধিত্ব করে না বরং সংক্রমণের গতি-প্রকৃতির জন্য একটি নির্দশক হিসেবে কাজ করে। তবে এ রিপোর্ট থেকে একটি বিষয় নিশ্চিত করা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়েছে এবং সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। যুক্তরাজ্যের বেশ কিছু গবেষণার ফল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্ট-এর তুলনায় ৫০-৭০ শতাংশ বেশি দ্রুত ছড়ায়। যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্ট নিজেই অনেক বেশি সংক্রমণশীল এবং ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট তার চেয়েও বেশি দ্রুত ছড়ায়-এ কারণে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টটি অনেক বেশি মারাত্মক।

খুব অল্প সময়ে ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট যুক্তরাজ্যে প্রাধান্য (ডোমিন্যান্ট ভ্যারিয়েন্ট) বিস্তার করেছে উল্লেখ করে খোন্দকার মেহেদী আকরাম বলেন, বাংলাদেশে যদি ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ প্রবলভাবে ছড়িয়ে পরে সেক্ষেত্রে তীব্র সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। ভ্যাকসিনেশনের হার খুব কম হওয়ায় বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ অরক্ষিত, একারণে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশে সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ তৈরি করতে পারে। তিনি বলেন, ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট দ্বারা আক্রান্তদের মধ্যে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তির প্রবণতা বেশি দেখা যায়, একারণে বাংলাদেশে তৃতীয় ঢেউ তৈরি হলে তা আগের দুটি সংক্রমণ থেকে তীব্র হওয়ার সম্ভাবনা বেশি ।

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি উল্লেখ করে অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদ বলেন, এই মুহূর্তে ঢাকায় সংক্রমণের হার কম হলেও সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সংক্রমণের হার অনেক বেশি। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, খুলনা, সাতক্ষীরা, সিলেট এবং সীমান্তবর্তী অঞ্চলে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা অনেকাংশেই বেড়েছে। টারশিয়ারি লেভেলের হাসপাতালগুলোতে দু’এক জায়গায় করোনা মোকাবিলায় পর্যাপ্ত সুবিধা থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অধিক করোনা রোগীর সেবা দেওয়ার তেমন প্রস্তুতি নেই। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করা উচিত।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি টারশিয়ারি লেভেলের হাসপাতালগুলোতে যেন করোনা মোকাবিলায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ঢাকা এবং ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি সাম্যাবস্থা তৈরি করাটা খুব জরুরি বলে মনে করছেন এই বিশেষজ্ঞ। এর আগে আবিষ্কৃত করোনা ভ্যারিয়েন্টের থেকে নতুন আবিষ্কৃত ভ্যারিয়েন্টগুলোর লক্ষণ অনেকটা আলাদা বলেই মনে করছেন অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদ। আগের ভ্যারিয়েন্ট ধীরে ধীরে শ্বাসনালী থেকে ফুসফুসে বিস্তার করলেও নতুন ভ্যারিয়েন্ট সরাসরি ফুসফুসকে আক্রান্ত করছে। আগে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে কিছুটা সময় লাগলেও নতুন ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রে তা অতি দ্রুত অনেক গুরুতর পর্যায়ে চলে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, আমাদের স্বাস্থ্যসেবার সক্ষমতা যতই বাড়ানো হোক না কেন, সংক্রমণের হার যদি ক্রমাগত হারে বাড়তে থাকে তাহলে সেটিকে যেকোনো মূল্যেই সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে যাবে। সেজন্য সংক্রমণের হার যেন না বাড়ে এবং সেটি যেন ঢাকামুখী না হয় সেজন্য যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ড. খোন্দকার মেহেদী আকরাম মনে করেন এভাবে সংক্রমণ বাড়তে থাকলে আবারও স্বল্পমেয়াদে কঠোর লকডাউন দিতে সরকার বাধ্য হতে পারে।

ঢামেকের প্রাক্তন এই অধ্যক্ষ আরও বলেন, সংক্রমণের প্রকৃত অবস্থা জানা এবং কার্যকরী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য টার্গেটেড আরটি-পিসিআর টেস্ট করা অত্যন্ত জরুরি। এ পদ্ধতিটি সহজ, সস্তা এবং কম সময় সাপেক্ষ। করোনাভাইরাসের অজানা মিউটেশন নির্ণয়ের জন্য জিনোম সিক্যুয়েন্সিংয়ের কোনো বিকল্প নেই। তবে জানা কোনো মিউটেশন খোঁজার জন্য জিনোম সিক্যুয়েন্সিং না করে টার্গেটেড পিসিআর করাই যুক্তিযুক্ত। যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র টার্গেটেড আরটি-পিসিআর টেস্টের মাধ্যমে অতি দ্রুততার সঙ্গে স্বল্প সময়ে বিপদজনক ভ্যারিয়েন্টগুলোকে শনাক্ত করছে।

সেমিনারে সায়েন্টিফিক ব্রিফ উপস্থাপন করেন ‘সেন্টার ফর রিসার্চ, ইনোভেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাকশন’-এর রিসার্চ এবং পলিসি অ্যানালিস্ট ডা. নাজিফ মাহবুব। ভ্যাকসিন এবং করোনার ভ্যারিয়েন্টের ওপর বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করে ডা. নাজিফ মাহবুব বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তৃতীয় ঢেউ সৃষ্টি হওয়ার প্রধান কারণ যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্ট, তবে ভারতের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্টের চেয়েও বেশি সংক্রামক হওয়ার কারণে বাংলাদেশে বিশেষ সতর্কতা গ্রহণ করতে হবে।

সেমিনারে বক্তারা অভিমত প্রকাশ করেন, যেহেতু বাংলাদেশের পক্ষে ৬০-৭০ শতাংশ মানুষকে এখনই টিকার আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না, সেক্ষেত্রে জনসচেতনতা তৈরির পাশাপাশি কৌশলগত লকডাউন এবং সব প্রতিরোধকমূলক ব্যবস্থাগুলো অনুসরণ করার মাধ্যমেই করোনা মহামারি প্রতিরোধ করতে হবে। নিয়মিত সঠিক নিয়মে মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং যথাসম্ভব ভিড় এড়িয়ে চলা এবং ঘন ঘন হাত হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা সাবান দিয়ে ধোয়া-এই সহজ নিয়মগুলোর মাধ্যমে করোনার সব ভ্যারিয়েন্টকে প্রতিরোধ করা সম্ভব।



 

Show all comments
  • Ahsan Cox ৮ জুন, ২০২১, ৩:০৮ এএম says : 0
    এই সমস্ত বিশেষজ্ঞদের উপর আল্লাহর গযব পড়ুক। যারা সরকারের খেয়ে জনগণের বিরুদ্ধে কথা বলে।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ ইখতিয়ার উদ্দীন ৮ জুন, ২০২১, ৩:০৮ এএম says : 0
    আল্লাহ ভরসা,,এসব নিউজ দিয়ে লকডাউন, জীবন জীবিকা বন্ধ করে দেওয়া, আল্লাহ রক্ষা করবে,
    Total Reply(0) Reply
  • Shahadat Hossain ৮ জুন, ২০২১, ৩:০৮ এএম says : 0
    রাখে আল্লাহ,মারে কে
    Total Reply(0) Reply
  • Mahfuz Mohammad ৮ জুন, ২০২১, ৩:০৮ এএম says : 0
    জনগন এসব খায় না
    Total Reply(0) Reply
  • Mahfuz Mohammad ৮ জুন, ২০২১, ৩:১০ এএম says : 0
    এই তৃতীয় ঢেউ থেকে রক্ষায় দ্রুত টিকা কার্যক্রম চালু করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Mahfuz Mohammad ৮ জুন, ২০২১, ৩:১১ এএম says : 0
    এখন থেকৈ সতর্ক হওয়া উচিত হবে। নতুবা সামাল দিতে হিমশিম খেতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • নিশা চর ৮ জুন, ২০২১, ৩:১১ এএম says : 0
    ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট এমনিতে দেশে ঢুকে গেছে। বাকিটা দ্রুত বজায় রেখে চলতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Meer Md. Shamsuddoha ৮ জুন, ২০২১, ৭:১০ এএম says : 0
    দেশে এখনো দ্বিতীয় ঢেউ শেষ হয় নাই ৷ তৃতীয় ঢেউ পেলেন কোথা থেকে ৷ ঢেউ বাদ দিয়ে জনসচেতনতায় কি করা উচিৎ সেই পরামর্শ দিন ৷
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ