Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৪ মে ২০২৪, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জালিয়াত চক্রের কবলে মহেশখালীর সুমাইয়া বালিকা দাখিল মাদরাসা

কক্সবাজার ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৬ জুন, ২০২১, ৫:৪৬ পিএম
  • জালিয়াতির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগে কোটি টাকা লুটপাট
  • ম্লান হচ্ছে মাদরাসা শিক্ষা ও সরকারের ভাবমর্যাদা

একটি জালিয়াত চক্রের কবলে পড়ে নষ্ট হচ্ছে মহেশখালীর সুমাইয়া বালিকা দাখিল মাদরাসার শিক্ষার পরিবেশ।
মহেশখালী তাজিয়াকাটা সুমাইয়া (রাঃ) বালিকা দাখিল মাদ্রাসার (নন এমপিওভুক্ত)
সাবেক সুপার মোঃ নোমানুল কাজী এর নেতৃত্বে গড়ে উঠা ওই জালিয়াত চক্রটি নিয়ম নীতি ও আইন আদালতের তোয়াক্কা না করে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।২০১৮ হতে এই জালিয়াত চক্রটি অবৈধভাবে কাগজপত্র জাল জালিয়াত করে নানা অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ওই মাদরাসায়
অবৈধভাবে ৯ (নয়) জন শিক্ষক/কর্মচারী এমপিওভুক্ত করে সরকারের লাখ লাখ টাকা লুটপাট করার মত চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। এতে ম্লান হচ্ছে মাদরাসা শিক্ষা ও সরকারের ভাবমর্যাদা।

জানা গেছে, মহেশখালী তাজিয়াকাটা সুমাইয়া বালিকা দাখিল মাদ্রাসাটি ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে সরকারী বিধি
অনুসরণ করে ভালো মতেই চলছিল। ২০১৮/১৯ অর্থবছরে মাদ্রাসাটি এমপিও ভুক্ত হয়।

এই সময়ের মধ্যে ২০০৯ সাল ও ২০১৫ সালে দুই দফায় মাদরাসায় ৯ জন শিক্ষক-কর্মচারী সরকারী বিধি অনুসরন করে নিয়োগ দেয়া হয়। ২০১৮/১৯ অর্থবছরে মাদ্রাসাটি এমপিও ভুক্ত হওয়ার সময় নিয়োগপ্রাপ্ত ওই ৯ জন শিক্ষক-কর্মচারী এমপিও তালিকা ভুক্ত হয়। কিন্তু ওসময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত সুপার নোমান কাজী ওই শিক্ষকদের সাথে এমপিওভুক্তির আবেদন করলেও তার সনদ জাল হওয়ার কারণে মাদ্রাসা অধিদপ্তর তাকে এমপিওভুক্ত করেনি।

এই প্রতারক নোমানুল কাজীর নেতৃত্বে গড়েউঠেছে একটি প্রতারক জালিয়াত চক্র। এই জালিয়াত চক্রটি সাবেক ভারপ্রাপ্ত সুপার প্রতারক নোমানুল কাজীর নেতৃত্বে সরকারি বিধি লংঘন করে মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেনের মাধ্যমে
আরও ৯ জন শিক্ষক-কর্মচারী মাদরাসায় এমপিওভুক্ত করার সুযোগ নেয়।

এবিষয়ে ওই মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার কুলসুমা বেগম জানান, নোমানুল কাজীর নেতৃত্বে ওই জালিয়াত চক্র মাদ্রাসার রেজুলেশন এবং সার্টিফিকেট জাল করে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এমপিও প্রদানকারী সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কিছু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে সম্পূর্ণ অবৈধ এবং গোপনীয়ভাবে এই শিক্ষক-কর্মচারীর এমপিওভুক্ত করে।

ওই প্রতারক চক্রে আরো আছে, আব্দুল গফুর, আনসারুল করিম ও সাবেক সুপার খাইরুল আমিনসহ অনেকেই। এই প্রতারক চক্রে কক্সবাজার, চকরিয়া, সাতকানিয়া এবং মাদরাসা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কিছু কর্ককর্তাও জড়িত থাকার কথা জানা গেছে। এই চক্রটি এইভাবে জালজালিয়াতির মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন মাদরাসার শিক্ষক কর্মচারীদের সাথে প্রতারণা করে একদিকে হাতিয়ে নিচ্ছে সরকারের লাখ লাক টাকা
। অপর দিকে ম্লান করছে মাদরাসা শিক্ষার মর্যাদা ও সরকারের ভাব মর্যাদা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতারক নোমান কাজীর সাথে চকরিয়ার লিটন নামের এক যুবক এই জালিয়াতির অন্যতম হুতা। তার কমিপিউটার দোকান থেকে জাল কাগজ পত্র তৈরী করে এমপিও সংশ্লিষ্ট কিছু কর্মকর্তা প্রতারক চক্রকে এই সুযোগ করে দিচ্ছে। শুুুধু মাত্র মহেশখালীর তাজিয়াকাটা সুমাইয়া বালিকা দাখিল মাদরাসার ৯ জন শিক্ষকের অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্য করে পঞ্চাশ লাখ টাকা এবং এমপিওর পঞ্চাশ লাখ টাকাসহ গত দুই বছরে কোটি
টাকা লুটপাট করেছে এই জালিয়াত চক্রটি।

ইতোমধ্যে এনটিআরসিএর নির্দেশক্রমে প্রতারণার দায়ে সাবেক ভারপ্রাপ্ত সুপার নোমান কাজীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করার নির্দেশনা দিলে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ জাফর উল্লাহ নূরী কক্সবাজার সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। কক্সবাজার সদর মডেল থানা মামলা নং ১৩/৭৪৭। কক্সবাজার জুডিশিয়াল মেঃ আদালত নং-২, মামলা নং
সিআর ৭৯৮/২০২০ ইং। এই মামলায় নোমান কাজি গ্রেফতার হয়ে প্রায় তিন মাস কারা ভোগ করেন।

এই প্রতারক নোমানুর কাজী তার কারা ভোগ করার আগে মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার থাকার সময় মাদ্রাসার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, ম্যানেজিং কমিটির রেজুলেশন সহ মাদ্রাসা অফিস থেকে সরিয়ে নেয়। ওই সমস্ত কাগজপত্র গুলোর জাল কাগজপত্র তৈরি করে জালিয়াত চক্রের আশ্রয় নিয়ে লাখ লাখ টাকার অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে তিন দফায় আরো ৯ জন শিক্ষককে নিয়োগ প্রদান করে।
যা সরকারের নীতিমালা ও মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি প্রকাশ্য চ্যালেইঞ্জ বলেই মনে করা হচ্ছে।

অথচ ওই নয় শূন্য পদে শিক্ষক
কর্মচারী নিয়োগের জন্য মাদ্রাসার বৈধ পরিচালনা কমিটি সিদ্ধান্তক্রমে একাধিকবার স্থানীয় এবং জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে ওই নিয়োগ প্রক্রিয়া সাময়িকভাবে স্থগিত থাকে। এই সুযোগে প্রতারক চক্র মাদ্রাসা অধিদপ্তর কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহযোগিতায় প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে লাখ লাখ টাকা অবৈধ লেনদেন করে ওই ৯ জন শিক্ষক নিয়োগের অবৈধ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করে।

এমপিওভুক্তির নীতিমালায় এন টি আর সি এর বিধি মোতাবেক মাদ্রাসা ম্যানেজিং কমিটি শুধুমাত্র সুপার, সহসুপার তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগ দেয়ার ক্ষমতা রাখে। এন টি আর সি এ অন্যান্য শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু এই বিধান লংঘন করে নোমান কাজির নেতৃত্বে প্রতারক চক্রটি কিভাবে ৯জন শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করলো সেটা একটি বড় ধরনের প্রশ্নের বিষয়। এই জালিয়াতির সাথে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনার দাবী উঠেছে।

ইতোমধ্যে এনটিআরসিএ কতৃপক্ষের নিকট আবেদন করা ৫ জন শিক্ষককে মাদ্রাসায় নিয়োগ দেয়ার জন্য এনটিআরসিএ কর্তৃক মাদ্রাসা ম্যানেজিং কমিটির নিকট লিখিত নির্দেশও দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

ইতোমধ্যে মাদ্রাসা ম্যানেজিং কমিটি সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একবার দুইবার নয় ছয় দফায় এসব জালিয়াত চক্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে। এই অবৈধ নিয়োগ বাতিল করার জন্য আবেদনের প্রেক্ষিতে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর ইতিমধ্যে ইউ এন ও মহেশখালীকে বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য নির্দেশ দিলেও গত তিনমাস মহেশখালীর নির্বাহী কর্মকর্তা তদন্ত রিপোর্ট দেননি বলে জানা গেছে।

এছাড়াও মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে এই অবৈধ নিয়োগ ও ৯ জন শিক্ষকের নিয়োগ বাতিল ও জালিয়াত চক্রের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয় হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে তিন মাসের মধ্যে এই অবৈধ বাতিল ও বিষয়টি নিষ্পত্তি করে হাইকোর্টকে জানানোর জন্য মাদরাসা অধিদপ্তর নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। কিন্তু এই পর্যন্ত কোন অগ্রগতি হয়েছে বলে জানা যায়নি।

এই জালিয়াত চক্রটি এখন মাদ্রাসা পরিচালনার ক্ষেত্রে নানা ধরনের বাধা সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই চক্রটি প্রতারক নোমান কাজী ও অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া সুপার মিজানুর রহমানের এর সহযোগিতায় মাদ্রাসার অভিভাবক প্রতিনিধি নিয়োগের ক্ষেত্রে অবৈধ এবং জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে। তারা মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডকে ভুল তথ্য দিয়ে মাদরাসার কাজে বিগ্নতা সৃষ্টি করছে বলেও জানা গেছে। ওইসব জাল-জালিয়াতি এবং ভুল তথ্য গুলোর ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওযার জন্য মাদ্রাসার বর্তমান পরিচালনা কমিটি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে যথাযথ এবং বিধিসম্মতভাবে অভিযোগ করলেও এ পর্যন্ত কোনো সুরাহা হয়নি বলে জানা গেছে।

এই জালিয়াত চক্র টি এতই দ্রুত এবং বেপরোয়া যে বর্তমান মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি পক্ষে মাদ্রাসার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কক্সবাজার সহকারী জজ আদালতের একটি রায় থাকা সত্ত্বেও তারা কোন ধরনের পরোয়া করছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
প্রতিষ্ঠান সুষ্ঠু পরিচালনার স্বার্থে এই প্রতারক ও জালিয়াতচক্রের লাগাম টেনে ধরা খুবই জরুরী বলে মনে করছেন স্থানীয় অভিভাবক ও সচেতন মহল।



 

Show all comments
  • Dadhack ৬ জুন, ২০২১, ৬:২৭ পিএম says : 0
    No Islam no Peace, Iblees have occupied our beloved mother land.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ