মটর সাইকেল: নিউ নরমাল পরিস্থিতিতে (নতুন বাস্তবতায়)
মটরসাইকেল নিরাপদ, অধিক সুবিধাজনক, খরচ এবং সময় বাঁচায়। গণপরিবহনে একে অন্যের গা ঘেঁষে চলাচলে প্রতিদিন
ইফতেখার আহমেদ টিপু
আমাদের অর্থনীতিতে সম্ভাবনাময় সবচেয়ে বড় খাতের একটি চামড়া শিল্প। চামড়া, জুতা ও চামড়াজাতপণ্য রফতানি করে কোটি কোটি লাখ ডলার আয় করা সম্ভব। কিন্তু গত অর্থবছরে বাংলাদেশের চামড়া শিল্পে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। বাংলাদেশ গত অর্থবছরে ১১৬ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাতপণ্য রফতানি করেছে। তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা ১১ কোটি ডলার হলেও রফতানি হয়েছে নয় কোটি ডলারের পণ্য। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি লক্ষ্যমাত্রায় না পৌঁছানোর পরিবেশ দূষণের কারণে বাংলাদেশ থেকে এসব পণ্য বিদেশি ক্রেতারা কিনতে চাইছেন না। রফতানি লক্ষ্যমাত্রা কিন্তু অর্জন করা যাচ্ছে না। বিভিন্ন সমস্যার কারণে রিলোকেশন, অর্থ সংকট সবকিছু মিলে বৈশ্বিক-অর্থনৈতিক মন্দাসহ চামড়াশিল্পে একটা ধস নেমেছে।
হাজারীবাগের হ্যাজার্ডাস পরিবেশে আমরা চামড়া প্রস্তুত করছি। কাজেই কোনো ব্র্যান্ড বায়ার, বড় বায়ার তারা আমাদের এখানকার চামড়া দিয়ে তৈরি জুতা কিনতে রাজি নয়, চামড়াও কিনতে রাজি না। ফলে গত বছরে আমরা যে চামড়া কিনেছি, তার ৬০ পারসেন্ট চামড়া এখনো আমাদের কাছে রয়ে গেছে। চলতি অর্থবছরে মোট ১২২ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে। তবে বড় এই লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে হলে পরিবেশগত মানদ- মানা, কার্যকর বাজারজাতকরণ কৌশল গ্রহণসহ বেশ কিছু প্রস্তুতি নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
হাই ভ্যালুর যে মার্কেটগুলো, যেখানে পরিবেশের মানদ-গুলো ভোক্তার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ, সেই জায়গায় আমাদের পণ্যকে আমরা পৌঁছাতে পারছি না। পরিবেশগত মানদ- মেনে চলার ক্ষেত্রে সামনে যে চ্যালেঞ্জগুলো আসছে, এটিকে দ্রুতগতিতে মোকাবিলা করা এবং একটি কমপ্লায়েন্ট ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে পুরো চামড়াশিল্পকে উন্নীত করা, এটি আমাদের একটা আবশ্যক করণীয় ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানিতে বাংলাদেশের সম্ভাবনা অনেক। কিন্তু এজন্য শিল্পটিকে হতে হবে পরিবেশবান্ধব। তাই কাক্সিক্ষত রফতানি প্রবৃদ্ধির জন্য উন্নত বিশ্বের চাহিদা অনুযায়ী শিল্পটিকে পরিবেশবান্ধব করাটাই এ মুহূর্তে শিল্পসংশ্লিষ্টদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
একটি উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে আয়ের খাতগুলোর যেমন যথাযথ তত্ত্বাবধান নিশ্চিত করতে হবে, তেমনিভাবে সম্ভাবনাময় খাতগুলোর উন্নয়নেও ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। সন্দেহ নেই বাংলাদেশের জন্য চামড়া শিল্প অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি খাত, যা সুষ্ঠু পরিচালনা ও যথার্থ উদ্যোগের মাধ্যমে এগিয়ে নিতে পারলে জাতীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বিপুল সম্ভাবনা থাকার পরেও এ খাতের বিকাশ সঠিকভাবে হচ্ছে না। সবচেয়ে বিস্ময়কর হলো, শুধু পশুর শরীর থেকে সঠিক পদ্ধতিতে চামড়া ছাড়ানো ও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেই প্রতি বছর মোট চামড়ার ১৮ থেকে ২০ শতাংশই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরা মনে করি, এ পরিস্থিতি কোনোভাবেই প্রত্যাশিত হতে পারে না।
দেশে যে চামড়া সংগৃহীত হয় তার ৪৮ শতাংশ যেহেতু পাওয়া যায় শুধু কোরবানির ঈদের সময়। ফলে এ চামড়ার সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করতে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। এটা মনে রাখা দরকার, সবচেয়ে অনভিজ্ঞ ও অদক্ষভাবে হাতে ছাড়ানোর প্রবণতা কোরবানির পশুর চামড়ার ক্ষেত্রেই বেশি। ফলে পশুর চামড়া সঠিকভাবে যেন ছাড়ানো ও রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব হয়, তার জন্য সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। একটি সম্ভাবনাময় খাতের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হবে সচেতনতার অভাবে, এটা মেনে নেয়া যায় না।
এছাড়া প্রতিবারের মতো এবারো ট্যানারি মালিকরা কোরবানির ঈদে ব্যাপকভাবে চামড়া পাচারের আশঙ্কা করছেন। আমি মনে করি, এর পরিপ্রেক্ষিতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করার কোনো বিকল্প নেই। কেননা এর ফলে ক্ষতি হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। প্রতি বছর কোরবানির ঈদ কেন্দ্র করে একশ্রেণীর লোক চামড়া পাচারে মরিয়া হয়ে উঠবে আর তা থেকে যাবে অপ্রতিরোধ্য, তা হতে পারে না।
নানা সমস্যার পরেও যখন চামড়া শিল্পে বিপুল সম্ভাবনা বিদ্যমান, তখন এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। কেননা, বাংলাদেশের চামড়া শিল্পে ভালো মানের কাঁচামালের প্রাপ্যতা রয়েছে। ফলে এ সম্ভাবনাকে বাস্তবায়িত করতে পারলে, তা দেশের অর্থনৈতিক আয়ের আরো একটি অন্যতম উৎস হিসেবে যোগ হতে পারে।
য় লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক নবরাজ
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।