Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফিরে আসছে পাটের সুদিন

প্রকাশের সময় : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

হেলেনা জাহাঙ্গীর
পাট বাংলাদেশের পরিচিতির অন্যতম অনুষঙ্গ। পাটের কারণেই এক সময় বাংলাদেশকে অভিহিত করা হতো সোনালি আঁশের দেশ হিসেবে। স্বাধীনতার আগে পাট ছিল এ অঞ্চলের প্রধান রফতানি পণ্য। স্বাধীনতার পরও প্রায় দেড় যুগ ধরে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে পাটের অবদানই ছিল মুখ্য। কালের বিবর্তনে কৃত্রিম তন্তুর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পাট তার স্থান হারালেও এখনো এটি দেশের অন্যতম কৃষিজাত রফতানি পণ্য। পাট চাষ, পাটকলের শ্রমিক সব মিলিয়ে কয়েক লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা পাটের সঙ্গে সম্পর্কিত।
অতীতের বাংলাদেশ সোনালি আঁশে বিদেশের মুদ্রা অর্জন করত সবচেয়ে বেশি। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি হতো এখানকার পাট। অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় উৎপাদনও বেশি হতো এখানে। পাটের আঁশ থেকে তৈরি করা যায় অসংখ্য নিত্য ব্যবহার্য পণ্য। পলিথিন আসার পূর্ব পর্যন্ত পাটের একক আধিপত্য ছিল। কৃষকরা পাট চাষে বেশি লাভবানও হতো। আমাদের দেশের প্রত্যেক কৃষক এক সময় পাটের আবাদ করত। পাট চাষের সঙ্গে বাংলাদেশের কৃষকদের একটা গভীর মিতালী আছে। সোনালি আঁশের সঙ্গে তাদের স্বপ্ন আশা একাকার ছিল। একটা সময় ছিল কৃষকরা নতুন পাট বাজারে বিক্রি করে ইলিশ মাছ কিনে আনত। পাট ইলিশের সেই পুরো মিতালী এখন আর তেমন দেখা যায় না। পাটজাতপণ্য এবং পাট মিলগুলোর অধিকাংশই বন্ধ থাকায় কৃষকরা লোকসানের মুখে পড়লে আমাদের দেশে পাট চাষ কমে যায়। হারাতে বসে সোনালি আঁশের সুনাম।
পাটের নামে একটি মন্ত্রণালয় থাকলেও তাদের হাতে নেই পাটের উৎপাদন, উন্নয়ন গবেষণা, কারিগরি গবেষণাসহ পাটের বাজার ও অর্থনৈতিক গবেষণার কোনো কিছুই। ফলে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের পাট বিভাগের কাজ হচ্ছে শুধু বাজার থেকে উৎপাদিত পাট বা পাটজাতপণ্য কেনা এবং দেশে-বিদেশে তা বাজারজাত করা। এ মন্ত্রণালয়ের ঠুঁটো জগন্নাথ অবস্থায় ঝুঁকিতে পড়ছে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক পাটের বাজার। দেশে-বিদেশে পাটশিল্প ও পাটপণ্যের বাজার সম্প্রসারণের কাজ এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধক সৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পাট খাত।
পাট আইন-২০১৬ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়ে সংসদীয় কমিটির সামনে পাট খাতের এ দুর্দশার চিত্র স্পষ্ট হয়েছে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে সংসদীয় কমিটির কাছে পাটের উৎপাদন, উন্নয়ন গবেষণা, কারিগরি গবেষণাসহ পাটের বাজার ও অর্থনৈতিক গবেষণার পুরো বিষয়টি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের কাছে ন্যস্ত করার দাবি উঠছে। সংসদীয় কমিটি এতে সহমত পোষণ করলেও এক্ষেত্রে সমস্যা কৃষি মন্ত্রণালয়। কারণ অন্য ফসলের মতো পাটও একটি কৃষিজাত ফসল। পাট চাষ থেকে বাজার পর্যন্ত পুরো বিষয়টি শুরু থেকেই কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন। ফলে এ নিয়ে দুই মন্ত্রণালয়ে শুরু হয় টানাটানি। এ অকাম্য অবস্থার অবসানে কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতিকে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভায় এনে কীভাবে এ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো যায় যে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পাট কৃষিপণ্য হলেও এ বিষয়ে যেহেতু স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় রয়েছে সেহেতু পাট সম্পর্কিত সবকিছু দেখভালের দায়িত্ব তাদের ওপরই থাকা উচিত। বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে দুই মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবে এমনটিই কাম্য।
এক সময় পাট ছিল আমাদের দেশের অর্থনীতির শোনিত প্রবাহের মতো, বলা হতো সোনালি আঁশ। প্লাস্টিক ও পলিথিন সামগ্রীর দাপট আর কিছু ভ্রান্ত নীতির কারণে বাংলার এই সম্পদ তার গৌরব হারায়। সোনালি আঁশ পরিণত হয় কৃষকের গলার ফাঁসে। তবে বিশ্বব্যাপী পরিবেশ সচেতনতা বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে পাটের কদর। তাই আমরাও চাই ফিরে আসুক পাটের সেই সুদিন।
য় লেখক : চেয়ারম্যান, জয়যাত্রা ফাউন্ডেশন



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফিরে আসছে পাটের সুদিন

২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
আরও পড়ুন