পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটকে চ্যালেঞ্জিং হলেও বাস্তবসম্মত উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। সংগঠনটি বলছে, করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে পোশাক খাত ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে বিজিএমইএ’র বেশ কিছু প্রস্তাব ছিল, যা শিল্পের ঘুরে দাঁড়ানো ও কর্মসংস্থানের জন্য অপরিহার্য ছিল। তবে প্রস্তাবিত বাজেটে তার প্রতিফলন হয়নি। এজন্য আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে নগদ সহায়তার ওপর আরোপ করা ১০ শতাংশ কর পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে বিজিএমইএ।
শনিবার (৫ জুন) রাজধানীর উত্তরার বিজিএমইএ কার্যালয়ের ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তৈরি পোশাক মালিক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম মান্নান কচি, ভাইস প্রেসিডেন্ট শহিদুল্লাহ আজিম, নাসির উদ্দিন, খন্দকার রফিকুল ইসলাম, রাকিবুল ইসলামসহ বোর্ডের পরিচালক ও কর্মকর্তারা।
সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে ফারুক হাসান বলেন, সংকটময় মুহ‚র্তে আমরা প্রথমত বাজেটে নগদ সহায়তার ওপর আরোপ করা ১০ শতাংশ কর প্রত্যাহারের অনুরোধটি পুনর্বিবেচনার আবেদন করছি। তবে এবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বেশ কিছু খাতে কর সহজ করেছেন। করোনায় আমাদের বিনিয়োগ, রফতানি ও কর্মসংস্থানে মন্দা বিরাজ করছে। অর্থাৎ গত দেড় বছরে তেমন নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়নি। এ অবস্থায় এই করটি প্রত্যাহার করলে সরকার খুব বেশি রাজস্ব হারাবে না, বিপরীতে শিল্প উপকৃত হবে। করোনা সংকট মোকাবিলায় রফতানি পণ্যের ওপর আরোপিত দশমিক ৫০ শতাংশ উৎসে কর আগামী পাঁচ বছর বহাল রাখার দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে নন-কটন শিল্পখাতে ১০ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা বাজেটে পুনর্বিবেচনার দাবি জানাচ্ছি।
ফারুক হাসান বলেন, এই মুহ‚র্তে আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো- ক্যাশ-ফ্লো ম্যানেজ করা, যেটি করতে না পেরে অনেক কারখানা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হচ্ছে। কর কিছুটা কমলে আমাদের ক্যাশ-ফ্লোতে একটু স্বস্তি আসবে। কারখানা টিকলে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে নতুন গতি আসবে। আর পোশাক শিল্প ঘুরে দাঁড়ালে অর্থনীতির বৃহৎ পরিসরে পণ্য ও সেবার লেনদেন বৃদ্ধি পাবে। যেমন- হোটেল, পর্যটন, ব্যাংক, বীমা, প্রসাধনী ইত্যাদি খাতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। ফলে সরকারের আয় বাড়বে।
বাজেটে অনেক ইতিবাচক দিক রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ২ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৩ শতাংশ নির্ধারণ করে আগামী ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জন্য ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে এরূপ উচ্চ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ঘোষিত বাজেট আশাব্যঞ্জক। প্রস্তাবিত বাজেটে কোনো করদাতা নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ১০ শতাংশ তৃতীয় লিঙ্গের শ্রমিক অথবা ১০০ (একশ) অধিক কর্মচারী নিয়োগ সাপেক্ষে পাঁচ শতাংশ কর রেয়াতের প্রস্তাব করা হয়েছে। দেশীয় পণ্য উৎপাদনকারী বৃহৎ শিল্পে (অটোমোবাইল খাত) ২০ বছর, হোম অ্যাপ্লায়েন্স ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে ১০ বছর কর অব্যাহতি এবং লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতের যন্ত্রাংশ উৎপাদনে ১০ বছর কর অব্যাহতি প্রদান করায় অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। একইসঙ্গে তিনি প্রস্তাবিত বাজেট দেশীয় শিল্প ও বেসরকারি খাত সহায়ক বাজেট হিসেবে মন্তব্য করেন।
শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মূলধন যন্ত্রাংশের ওপর আরোপিত এক শতাংশের অতিরিক্ত সকল প্রকার শুল্ক-করা মওকুফ করার জন্য পুনরায় অনুরোধ করছি। প্রস্তাবিত বাজেটে কর্পোরেট কর ২ দশমিক ৫ শতাংশ কমানো হয়েছে। আমদানি পর্যায়ে ভ্যাটের আগাম কর (এটি) চার শতাংশ থেকে কমিয়ে তিন শতাংশ করা হয়েছে। এ আগাম কর সম্প‚র্ণ বিলুপ্ত করার প্রস্তাব করছি। তিন কোটি টাকার টার্নওভারে ন্য‚নতম কর হার শুন্য দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে শুন্য দশমিক ২৫ শতাংশ করায় ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। তিনি বলেন, বৈশ্বিক কটনের পরিবর্তে ফাইবার চাহিদার বিচারে আমরা অপেক্ষাকৃত কম বাজার দখলকারী কটনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছি। বিগত দশকে আমাদের দেশে নন-কটন বিশেষত ম্যান-মেড-ফাইবার খাতে কিছু বিনিয়োগ হলেও প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছি না। কারণ তাদের কাঁচামালে পেট্রাক্যামিকেল টিপস আছে এবং তাদের স্কেল ইকোনমির কারণে তারা প্রতিযোগী সক্ষমতায় অনেক এগিয়ে আছে।
‘এই পরিস্থিতিতে নন-কটন পোশাক রফতানির ওপর ১০ শতাংশ হারে বিশেষ প্রণোদনার দাবি করছি তাহলে আমরা যেসব বিনিয়োগ ইতিমধ্যেই করে ফেলেছি সেগুলো রক্ষা করা সম্ভব হবে। নতুন দক্ষ শ্রমিক তৈরি হবে, টেকনোলজির ব্যবহার বাড়বে এবং আরও বিনিয়োগ আসবে। পাশাপাশি নন-কটন বস্ত্র ও পোশাক খাতে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য একটি বিশেষ স্কিম গ্রহণের সুপারিশ করছি। এর মাধ্যমে আমাদের ২০১৯ পরবর্তী সময়ে ‘দুই ধাপ’ উৎপাদন প্রক্রিয়া প্রতিপালন করে জিএসপি প্লাসের জন্য প্রস্তুত হতে পারে উল্লেখ করেন বিজিএমইএ সভাপতি। তিনি বলেন, আমাদের বেশকিছু রফতানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানা রুগ্ন এবং বন্ধ হয়ে গেছে। রুগ্ন পোশাক কারখানার মালিকদের সার্বিক অবস্থা খুবই করুণ এবং তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এদের মধ্যে আবার অনেকেই নীতি সহায়তা পেলে পুনরায় উৎপাদনে ফিরে আসতে পারেন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারেন। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের পক্ষে ঋণ পরিশোধ করে ব্যবসা থেকে প্রস্থান করা অসম্ভব। এই সকল রুগ্ন কারখানা প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল ঋণ, সুদ ও মামলা খরচ বাবদ সমুদয় অর্থ অবসায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করলে তারা পুনরায় ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।