পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আজ বৃহষ্পতিবার দেশের ৫০ তম প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করছেন। বেলা ৩টায় মহান জাতীয় সংসদে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত এবার বাজেটের সম্ভাব্য আকার ৬ লাখ ৩ হাজার ৬শ’ ৮১ কোটি টাকা। এই খরচের ৬৫ শতাংশ অর্থ, আয়ের ব্যবস্থা করা গেছে। বাকি ৩৫ শতাংশ টাকা সরকারকে ধার করতে হবে। আর এর ফলে, দেশের ৫০ তম বাজেটে এসে প্রথমবারের মতো জিডিপির ৬ শতাংশের বেশি ঘাটতিতে থাকতে হচ্ছে সরকারকে।
করোনা মহামারী ভোগাবে আগামী অর্থবছরের পুরোটা সময়। সবচেয়ে বেশি গুরুত্বও দেয়া হয়েছে স্বাস্থ্য খাতে। বাজেট তৈরিতে এমন বিবেচনাই সামনে রেখেছে অর্থমন্ত্রণালয়। পাশাপাশি করোনা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রনোদণা প্রাকেজসমূহের বাস্তবায়ন, কৃষি খাত, খাদ্য উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনাকে অধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। অর্থবছরের পুরো সময় জুড়েই থাকবে সরকারের নানা ধরনের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, বাড়ানো হবে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা। তাই প্রবৃদ্ধির চেয়ে মানুষের জীবন বেশি গুরুত্ব পেয়েছে অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বাজেটে। প্রতিপাদ্যও তাই, জীবন ও জীবিকার প্রাধান্য-আগামীর বাংলাদেশ।
অর্থমন্ত্রী এবার যে বাজেট ঘোষণা করবেন তার সম্ভাব্য আকার হচ্ছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। বিপরীতে আয়ের সংস্থান করতে পেরেছেন ৩ লাখ ৯২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। যার মধ্যে এনবিআরকে আদায় করতে হবে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার ট্যাক্স-ভ্যাট। এনবিআর এর বাইরের কর থেকে ১৬ হাজার কোটি টাকা পাওয়ার আশা করছেন অর্থমন্ত্রী। আর কর ব্যতিত প্রাপ্তির লক্ষ্য ৪৩ হাজার টাকা। বাজেটে ৩৪৯০ কোটি টাকা ধরা হয়েছে বিদেশি অনুদান। রাজস্ব আয়ের সব অনুমান ঠিকঠাক থাকলেও, ঘাটতি থেকে যাচ্ছে ২ লাখ ১১ হাজার ১৯১ কোটি টাকার। যা জিডিপির ৬ দশমিক ১ শতাংশ। বাজেটের ইতিহাসে এটিই সর্বোচ্চ ঘাটতি। এদিকে প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থের সংকট মেটাতে, সরকার ব্যাংক থেকে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা ধার করতে চায়। বিদেশ থেকে ঋণ নেয়ার ইচ্ছা ৯৭ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। পরিকল্পনা আছে ৩২ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রির।
চলতি অর্থবছর ৬৮ হাজার ৪১৪ কোটি টাকার বিদেশি ঋণ নিয়েছে সরকার। যার সুদ বাবদ আগামী অর্থবছর ৬ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা গুণতে হবে। আর দেশীয় ঋণের সুদ পরিশোধ করতে খরচ হবে ৬২ হাজার কোটি টাকা। বরাবরের মতোই, এবারও সবচেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে অনুন্নয়ন ব্যয়ে। মোট বাজেটের খরচের প্রায় ৬০ শতাংশই যাচ্ছে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মাচারিদের বেতন ভাতা ও রাষ্ট্র পরিচালনায়। ৩৯ শতাংশ খরচ হবে উন্নয়ন ব্যয়ে।
এদিকে দেশে কোনো অর্থবছরেই প্রস্তাবিত বাজেটের পুরোটা বাস্তবায়িত হয় না। এ জন্য মাঝপথে বাজেট সংশোধন করা হয়। সেই সংশোধিত বাজেটও শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয় না। এবারো তার ব্যতিক্রম নয়; তবে এবার বাজেট বাস্তবায়ন অন্যান্য অর্থবছরের চেয়েও নিম্নমুখি। গত এক দশকে সরকারের জাতীয় বাজেট বাস্তবায়নের হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাবে বাজেট বাস্তবায়ন কম হচ্ছে। এটি মূলত দক্ষতা, জবাবদিহিতা এবং সক্ষমতা এবং দুর্নীতির উত্থানের কারণে।
সূত্র মতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকার জাতীয় বাজেট ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা পাস করেছে। তবে বছরের শেষে বাস্তব বাস্তবায়ন ছিল ৪ লাখ ১৫ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা। তার মানে ১ লাখ ৭ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা বাস্তবায়ন করা হয়নি। অর্থ বিভাগের পর্যবেক্ষণে এসেছে, ২০১২-১৩ থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় মোট বাজেট বাস্তবায়নের হার ৮৪ দশমিক ৫ থেকে ৯২ দশমিক ৮ শতাংশের মধ্যে। মাত্র পাঁচ বছর আগেও বাজেট বাস্তবায়নের হার প্রতিবছর ৮০ শতাংশের বেশি ছিল। আর গত দশকে সবচেয়ে বেশি ছিল ২০১০-১১ অর্থবছরে ৯৭ শতাংশ। এদিকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়নের হার ৮৪ দশমিক ৩ শতাংশ হলেও গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে যা দাড়িয়েছে ৭৯ দশমিক ৪ শতাংশ।
করোনা মহামারীর মধ্যেই চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়। ইতোমধ্যে বছরের ১১ মাস অতিবাহিত হয়েছে। তা থেকে প্রথম আট মাসে বাজেট বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৩৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছরের মার্চে দেশে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই সব ধরনের উন্নয়নকাজে স্থবিরতা ছিল। এছাড়া সরকারও কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে অর্থছাড়ের ক্ষেত্রে কৃচ্ছ্র সাধনের নীতি নিয়েছে। তার পরও উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দের ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত খরচ করার অনুমতি দেয় অর্থ বিভাগ। কিন্তু সে অনুযায়ী খরচ করতে পারছে না বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। তাই উন্নয়ন খাতে ব্যয় তুলনামূলক কম হয়েছে চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত, যার প্রভাব পড়েছে বাজেট বাস্তবায়ন হারে।
সরকারের বাজেটের বড় অংশই ব্যয় হয় উন্নয়নকাজে। এজন্য প্রতি অর্থবছর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) মাধ্যমে ব্যয়ের একটি লক্ষ্য ঠিক করা থাকে। চলতি অর্থবছর সংশোধিত বাজেটে এডিপি বরাদ্দ ছিল ২ লাখ ৯ হাজার ২৭১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। কিন্তু এক্ষেত্রেও বাস্তবায়ন হার ভালো নয় এবার। গত মার্চ পর্যন্ত এডিপি থেকে ব্যয় হয়েছে ৮৭ হাজার ৭৩৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। সে হিসেবে অর্থবছরের নয় মাসে এডিপি বরাদ্দের মাত্র ৪১ দশমিক ৯২ শতাংশ অর্থ ব্যয় করতে পেরেছে সরকার।
জানা গেছে, নয় মাসে এডিপি বাস্তবায়ন গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে গত অর্থবছরের (২০১৯-২০) জুলাই-মার্চ সময়ে বাস্তবায়ন হার ছিল ৪৫ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪৭ দশমিক ২২ শতাংশ, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জুলাই-মার্চ সময়ে ৪৫ দশমিক ১৫ শতাংশ এডিপির অর্থ খরচ হয়েছিল।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা বিরাজ করছে। তাই রাজস্ব আহরণও তুলনামূলক কম। বিপরীতে এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের ব্যয় বেড়ে গেছে। তাই সরকার ব্যয় নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার পরও এডিপিতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর অনুকূলে বরাদ্দকৃত অর্থের মধ্য থেকে ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত অর্থ খরচ করতে পারবে। কিন্তু কোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগ কাঙ্খিত হারে বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারছে না। তাই সার্বিক বাজেট বাস্তবায়ন পিছিয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, গত ২৫ মার্চ আর্থিক মুদ্রা ও মুদ্রাবিনিময় হার-সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠকে বাজেট বাস্তবায়ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে তাদের অনুকূলে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যবহার বাড়ানোর তাগিদ দেয়া হয়েছে। তারাও তাদের বাজেট বাস্তবায়ন বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এছাড়া খরচ কমাতে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে নতুন গাড়ি কেনায় নিষেধাজ্ঞা ৩১ ডিসেম্বর থেকে বাড়িয়ে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। সরকারি চাকরিজীবীদের ভ্রমণ ব্যয়ও অর্ধেক কমিয়ে দিয়েছে সরকার। এ কারণেও সরকারি খরচ কমেছে।
এদিকে এনবিআরের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাস জুলাই-এপ্রিলে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকার শুল্ক-কর আদায় হয়েছে। প্রথম ১০ মাসে লক্ষ্যের মাত্র দুই-তৃতীয়াংশ অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। শেষ দুই মাসে ১ লাখ ৩ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা আদায় করতে হবে। সারা বছরে এনবিআরকে মোট আদায় করতে হবে ৩ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা। সাধারণত শেষ দুই মাসে এমনিতে রাজস্ব আদায়ে গতি থাকে। কিন্তু এবার সেটি হওয়ার সম্ভাবনা কম। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গত এপ্রিল মাসের পর মে মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ ছিল। করোনার কারণে এবার ব্যবসা-বাণিজ্য এমনিতেই শ্লথ। তাই রাজস্ব আদায়ও তুলনামূলক কম হচ্ছে। তবে তা গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের এপ্রিল ও মে মাসের মতো ততটা খারাপ নয়। গতবারের চেয়ে এবার একই সময়ে (জুলাই-এপ্রিল) প্রায় ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
বাজেট প্রণয়নের মূল দায়িত্বে থাকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। কয়েক বছর আগে অর্থ বিভাগ বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ৯টি প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করলেও সেগুলো দূর করার কোনো উপায় চিহ্নিত করেনি। অর্থ বিভাগের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়নে ভূমি অধিগ্রহণ করতে না পারার পাশাপাশি ভূমির মালিকানা ও রেকর্ড বিষয়ক জটিলতাও রয়েছে। রয়েছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতাও। প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নিয়োগে দীর্ঘসূত্রতাও প্রকল্প বাস্তবায়নের অন্যতম প্রতিবন্ধকতা। পিডিদের একটি পুল থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে তা নেই। আবার রয়েছে জনবল নিয়োগবিষয়ক জটিলতা। প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি, সম্ভাব্যতা যাচাই ও দরপত্র অনুমোদন প্রক্রিয়ায়ও অনেক সময় ব্যয় হয়ে যায়।
অর্থ বিভাগের মতে, প্রকল্প বাস্তবায়নের অন্যতম প্রতিবন্ধকতা প্রকল্প দলিলের অসম্পূর্ণতা। যেমন দেখা যায়, ভবন তৈরির পরিকল্পনা থাকলেও আসবাব বা যন্ত্রপাতি কেনার সংস্থান নেই। ফলে প্রকল্প শেষ হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটি কাজ শুরু করতে ব্যর্থ হয়। আবার, বারবার নকশা পরিবর্তন বা সংশোধনও প্রকল্প বাস্তবায়নকে বাধাগ্রস্ত করে।
অর্থ বিভাগের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে, মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো অর্থবছরের শুরুতে অর্থ ছাড়ে দেরি করে। এতে বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয়। জনবল নিয়োগে জটিলতা এবং সময়মতো নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন না করায় অনুন্নয়ন খাতে আশানুরূপ বাজেট বাস্তবায়িত হয় না।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) সম্প্রতি বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে বলেছে, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাবে বাজেট বাস্তবায়ন কম হচ্ছে। একই সঙ্গে এজন্য যারা বা যেসব প্রতিষ্ঠান বাজেট বাস্তবায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত তাদের প্রস্তুতি দরকার। সরকারি ব্যয়ে সুশাসন, স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা না গেলে বেশি অর্থ ব্যয় করেও কোনো লাভ হবে না। তাই আগামী অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়নে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি জোরদার করতে হবে মধ্যমেয়াদি সংস্কার কর্মসূচির বাস্তবায়ন।
এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, সরকারের উচিত বাজেট বাস্তবায়ন হারের দিকে মনোনিবেশ করা। নিম্নমুখী বাস্তবায়ন প্রবণতার কারণে শেষ পর্যন্ত মানুষ মানসম্মত সেবা থেকে বঞ্চিত হয়।
তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে সরকারী কর্মকর্তাদের বেতন এবং সুযোগ-সুবিধাগুলি প্রায় ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আশা করা হচ্ছিল যে, এর মাধ্যমে উচ্চতর দক্ষতা নিশ্চিত করবে এবং দুর্নীতি হ্রাস করবে। তবে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতার অভাব এবং দুর্নীতির উত্থানের কারণে বাজেট বাস্তবায়নের হার হ্রাস পাচ্ছে। এটা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় বলে মনে করেন বিদ্যুৎ ও অংশীদারিত্ব গবেষণা কেন্দ্রের (পিপিআরসি) এই নির্বাহী চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, দেশের রাজনৈতিক নেতাদের বাজেট বাস্তবায়নে দক্ষতা, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং দুর্নীতি হ্রাস করার জন্য যথাযথ উদ্যোগ নেয়া উচিত, যাতে জনগণ সরকারের পরিকল্পনা এবং মানসম্পন্ন পরিষেবাগুলি থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা পান। একই সঙ্গে যেসব মন্ত্রণালয় বাজেট বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে তাদেরকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনা উচিত, কারণ শক্ত জবাবদিহিতা না থাকলে এই পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।
ইনস্টিটিউটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফিনান্স অ্যান্ড ডেভলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক মোস্তফা কে মুজেরি বলেন, বাজেটের তথ্যে বাস্তবায়নের যে হার দেখানো হয় তার সাথে বাস্তবতার মিল নেই। প্রকৃতপক্ষে বাস্তবায়নের হার অনেক কম। তিনি বলেন, বাস্তবায়নের হার কম হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। তবে মূল কারণ হল কম দক্ষতা। এ ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হল আমাদের অর্থনীতি প্রসারিত হচ্ছে, চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে বাস্তবায়ন দক্ষতা নিম্নমুখীই রয়েই গেছে। তিনি বলেন, যদি আমরা সক্ষমতা উন্নত করতে না পারি তবে আগামী বছরগুলিতে বাস্তবায়নের হার আরও নিম্নমুখিতার দিকে যাবে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সাবেক এই মহাপরিচালক সতর্ক করে দিয়ে বলেন, এই অবস্থায় সরকার যদি কৃত্রিমভাবে বাজেট বাড়াতে চেষ্টা করে তবে জনগণের সেবার মান আরও হ্রাস পাবে। আমাদের উন্নয়নের যাত্রা প্রভাবিত হবে, এগুলি বিবেচনায় রেখে তিনি অবিলম্বে এবং জরুরিভিত্তিতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেন।
এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এটা নতুন কিছু নয়। প্রতি বছরই প্রথম দিকে বাজেট বাস্তবায়নের হার খুবই কম থাকে। শেষের দিকে তাড়াহুড়ো করে ব্যয় হোক বা না হোক কাগজে-কলমে ব্যয় দেখানো হয়। তবে এবার করোনা যুক্ত হয়ে বাজেট বাস্তবায়নের মাত্রাটা আরো কমে গেছে। এই যে প্রবণতা অনেক দিন থেকে চলে আসছে। এখান থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এজন্য প্রশাসনিক দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি প্রকল্প বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতা বাড়তে হবে। এছাড়া যেসব মন্ত্রণালয় বা বিভাগ যথাসময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করে, তাদের পুরস্কৃত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।