Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলে বিলুপ্তির পথে কাউন চাষ

শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম থেকে | প্রকাশের সময় : ১ জুন, ২০২১, ১২:০৪ এএম

‘বাহে বাপ-দাদারা আগোত কাউনের আবাদ করছিল মাঝখানোত আবাদ বন্ধ হয়া যায়। গতবার থাকি মানুষের দেকাদেকি হামরাও আবাদ করছি। কিন্তু লেদা পোকা হামার সর্বনাশ করি দেইল।’
এভাবেই অভিব্যক্তি প্রকাশ করলেন কুড়িগ্রামের সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চর ফারাজী গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন (৩২)। তিনি দুই বিঘা জমিতে কাউন চাষ করেছেন। জমির চল্লিশভাগ কাউন লেদা পোকার আক্রমনে নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে হতাশা ফুটে উঠেছে তার চোখে মুখে। তিনি বিষন্ন স্বরে জানালেন, ‘দুই বিঘায় ৮ হাজার টেকার ওপরে খরচ গেইছে। গায়ে গতরে কষ্ট করলং কিন্তু লাভ হইল না।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর কুড়িগ্রাম জেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলে সাড়ে ৬শত হেক্টর জমিতে কাউনের আবাদ করা হয়েছে। প্রায় এক যুগ ধরে এসব এলাকায় কাউনের আবাদ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছিল। গত বছর থেকে কৃষকরা পূনরায় কাউন আবাদ শুরু করে। ভাতের বিকল্প হিসেবে এবং কাউনের পায়েস এই এলাকার জনপ্রিয় খাবার। এছাড়াও পশুপাখি এবং বিভিন্ন খাদ্য পণ্যে কাউন ও কাউনের চাল ব্যবহার করা হয়। জেলা কৃষি অফিস কাউনের আবাদ সম্প্রসারণের জন্য কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে আধুনিক জাতের প্রায় ৭ কেজি বারী কাউন-৩ কৃষকদের মাঝে সরবরাহ করে। কিন্ত বিরুপ আবহাওয়া এবং কীটনাশক কাজ না করায় কৃষক ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

চর ফারাজীপাড়া গ্রামের হুজুর আলীর ছেলে কৃষক বাচ্চু মিয়া (৫২) জানান, ‘হামার পরিবারে ১৩ জন খাওয়াইয়া। ৩ বিঘা কাউন আর ৭ বিঘা জমিত চিনা লাগাইছি। এগুলা দিয়ে সংসারের খারচ-খালা চালাই। কিন্তু কাউন আবাদ করি ধরা খায়া গেইলং।’ কৃষক খয়বর আলী (৫৫) জানান, ‘বাহে বিএস’র কথাত ঔষধ ছিটালং কিন্তু কাজতো হইল না। পোকাগুলো ২/৩ ঘণ্টা টাসকি নাগি থাকার পর ফির উঠি কাউন খাবার ধরে। হামরাতো ক্ষতিগ্রস্ত হইলং।’

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মঞ্জুরুল হক জানান, চরগুলোর মাটি কাউন, চিনা, সরগম আবাদের জন্য খুবই উপযোগী। এবার কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে আধুনিকজাতের বারী কাউন-৩ কৃষকদের মাঝে সরবরাহ করা হয়েছে। যাতে অভাবের ফসলগুলো উচ্চ মূল্যের ফসলে পরিণত হয়। স্থানীয়জাতগুলোতে কিছুটা পোকার আক্রমন হয়েছে। আমরা দমনের জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছি বলে এই শীর্ষ কর্মকর্তা জানান।

এদিকে অধিক অর্থ ব্যয় করে কৃষক যদি লাভবান হতে না পারে তাহলে আবার এই ফসলটি হারিয়ে যেতে পারে পারে। এটি রক্ষায় কৃষি বিভাগ কৃষকদের পাশে দাঁড়াবে। সেই সাথে চরাঞ্চলের প্রান্তিক মানুষ লাভজনক কাউনচাষ করে বিকল্প খাদ্য হিসেবে ভাতের অভাব মেটাতে পারবে এই প্রত্যাশা ওই এলাকার জনগণের।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ