Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাবার অভিযোগ ধর্ষণ ও গর্ভপাতে মৃত্যু: অভিযুক্তরা বলছে ডেথ সার্টিফিকেটে স্ট্রোক

ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৭ মে, ২০২১, ৫:০৯ পিএম

ময়মনসিংহে ঈশ্বরগঞ্জে এক তরুণীর মৃত্যুকে ঘিরে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। ধর্ষণে অন্তস্বত্ত্বা ও গর্ভপাত করাতে গিয়ে মেয়ের মৃত্যু হয়েছে এমন অভিযোগ এনে বাবা একটি মামলা করেছেন আদালতে। এতে অভিযুক্ত করা হয়েছে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও তার বড় ভাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নিহত তরুণীর মা সহ আরো দুই সহযোগীকে। কিন্তু অভিযুক্তরা বলছে হাসপাতালের ডেথ সার্টিফিকেট মেয়েটির মৃত্যু হয় ব্রেইন স্ট্রোক করার কারণে। এ নিয়ে চলছে তোলপার। বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে চেয়ারম্যানের পক্ষে স্থানীয় আওয়ামী নেতারা ও পরিবারের লোকজন সংবাদ সম্মেলন করেন।

জানা যায়, উপজেলার উচাখিলা ইউনিয়নের চরআলগী গ্রামের নিহত তরুণীর বাবা স্বপন বাদি হয়ে গত মঙ্গলবার ময়মনসিংহ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে একটি মামলা করেছেন। স্বপন একই ইউনিয়নের আমোদপুর গ্রামের আবদুল খালেকের মেয়ে আছমাকে বিয়ে করে। তাদের তিন মেয়ে এ এক ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু গত ২০১৭ সালে স্বামীকে ডিভোর্স দেন স্ত্রী আছমা। এর পর উচাখিলা বাজারে চেয়ারম্যানের বড় ভাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মঞ্জুরুল হকের বাসার পাশেই কৃষি বিভাগের পরিত্যক্ত ভবন সীড স্টোরে সন্তানদের নিয়ে বসবাস করছিলেন মা আছমা। সেখান থেকে সন্তানদের নিজের কাছে নিতে কয়েকবার চেষ্টা করেও ব্যার্থ হন বাবা স্বপন। এর মধ্যে মা আছমা বড় মেয়েকে বিয়েও দিয়ে দেন।
কিন্তু দ্বিতীয় মেয়ে স্বর্ণা (১৬) অসুস্থ্য হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১১ মে রাতে মারা যান। মাথায় যন্ত্রণা হওয়ায় গত ২০ এপ্রিল উচাখিলা বাজারে, ১ মে ঈশ্বরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে ময়মনসিংহের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়। অবস্থান উন্নতি না হলেও গত ১০ মে ঢাকার নিউরোসাইন্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১১ মে রাত ১টার মৃত্যু হয় তার। হাসপাতালটির ডেথ সার্টিফিকেটে বলা হয়- যক্ষার জীবাণু শরীরে ছড়িয়ে পড়া এবং এই জীবাণু ব্রেইনের রক্তনালীতে বাসা বাঁধার কারণে ইশকেমিক স্ট্রোক মৃত্যুর কারণ বলে জানান আসামী পক্ষের পরিবার।

কিন্তু স্বপন মামলার বিবরনীতে উল্লেখ করে- মায়ের সহায়তায় উচাখিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তরুণীটিকে বিয়ের প্রলোভনে ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করে। এতে অন্তস্বত্ত্বা হয়ে পড়লে গর্ভপাত ঘটানো হয়। কিন্তু তাতে রক্তক্ষরণ শুরু হলে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হলে মৃত্যু বরণ করে। আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে মামলাটি এফআইআর করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন থানার ওসিকে। এ ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় চলছে। বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে উচাখিলা ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলামের পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। চেয়ারম্যানের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভাতিজা নায়েব এ জাহান মনী।

তরুণীর মা আছমা জানান, স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্স হওয়ায় প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে মিথ্যা মামলা করেছে। তার মেয়ে স্ট্রোক করে মারা গেছে। তিনিও আদালতে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

উচাখিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, মেয়েটি স্ট্রোক করে মারা গেছে। কিন্তু নির্বাচনকে সামনে রেখে তাকে রাজনৈতিক ভাবে ঘায়েল করার জন্য চক্রান্ত করে তার নামে মামলা করানো হয়েছে।

ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি মো. আবদুল কাদির মিয়া বলেন, আদালত থেকে তারা কোনো ধরণের আদেশ পাননি। আদেশ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ