Inqilab Logo

সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪, ১০ আষাঢ় ১৪৩১, ১৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

জন্মহার হ্রাস, মারণাস্ত্র ও আবহাওয়া সঙ্কটে হুমকিতে মানবসভ্যতা

প্রজনন কমলেও দ্বিগুণ হয়েছে গড় আয়ু

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৮ মে, ২০২১, ১২:০৪ এএম

১৯২০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে মানুষের গড় আয়ু দ্বিগুণ হয়ে গেছে। উন্নত পশ্চিম এবং বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মধ্যে ব্যবধান গত ৫০ বছরে উল্লেখযোগ্য হারে কমে এসেছে। শিশু মৃত্যুর হার ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশে নামিয়ে আনতে সুইডেনের প্রায় দেড়শ’ বছর লেগেছে। যুদ্ধ পরবর্তী দক্ষিণ কোরিয়া মাত্র ৪০ বছরে এটি করে দেখিয়েছে। ভারতে মাত্র ৭০ বছরে গড় আয়ু দ্বিগুণ হয়েছে। অনেক আফ্রিকান দেশ এভাবে সাফল্য করেছে। চীন এবং আমেরিকার মধ্যে আয়ু ব্যবধান ছিল ২০ বছরেরও বেশি। এখন সেটি মাত্র দু’বছর। বিশ^জুড়ে গড় আয়ু বৃদ্ধির এ প্রবণতার পেছনের কারণগুলো শক্তিশালী, জটিল এবং বহুবিধ। প্রাথমিক কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি এবং দুর্ভিক্ষ হ্রাসের জন্য কৃত্রিম সার আবিষ্কার এবং ‘সবুজ বিপ্লব’, আমদানিকৃত জীবনদায়ী ওষুধ এবং বিভিন্ন প্রজাতির অ্যান্টিবায়োটিক, ক্লোরিনযুক্ত উন্নতমানের পানীয়জল, রিহাইড্রেশন থেরাপি। পাশাপাশি রয়েছে চিকিৎসার অন্যান্য নতুন ফর্মগুলোর সাথে অ্যান্টেরেট্রোভাইরাল ওষুধসমূহ, যেগুলো এইডসজনিত মৃত্যু থেকে মানুষকে বাঁচিয়েছে, হৃদরোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত স্ট্যাটিন্স এবং এসিই এবং ক্যান্সার নিরাময়ের সম্ভাবনা সম্পন এখনকার নতুন ইমিউনোথেরাপি ব্যবস্থা।

তবে, বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বিশ্বজুড়ে প্রজনন বা জন্মহার বৃদ্ধি পায়নি। আগের তুলনায় লোকজনের মাথাপিছু কম সন্তান হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে, বিগত দুই শতাব্দীতে বিশে^র মানুষ বিশেষ করে অল্পবয়সী মানুষদের মৃত্যুহার কমে গেছে। তারা বাবা-মা এবং দাদা-দাদি হয়ে আরও বেশি দিন বাঁচছেন এবং পরবর্তী প্রজন্মের স্রোতের সাথে সাথে বিদ্যমান থেকে বর্ধিত জনসংখ্যায় রূপান্তরিত হচ্ছেন। ৪ বা ৫ প্রজন্ম ধরে সারা বিশ্বজুড়ে এই ধারাচি পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। ফলে প্রজনন বা জন্মহার হ্রাস হওয়া সত্ত্বেও বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা ২ থেকে ৮ বিলিয়নে উন্নীত হয়েছে।

বিস্ময়করভাবে, মানুষের আয়ু দ্বিগুণ করার বিজয়গাথাটি গ্রহের জন্য নিজস্ব এবং সমান উচ্চতার একটি সমস্যার চক্র তৈরি করেছে। শিল্পযুগে আমাদের সাম্প্রতিক ইতিহাস থেকে আমরা জানি যে, একা বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি মানব স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ধারার গ্যারান্টি দেয় না। আমাদের ক্রমবর্ধমান আন্তঃসংযুক্ত পৃথিবী এবং শিল্পজাত প্রাণীর উপর নির্ভরতা, বিশেষত ফার্মের মুরগি আমাদের জন্য কিছু মহামারীর যুগ ডেকে আনতে পারে, যেখানে কোভিড-১৯ আরও মারাত্মক এভিয়ান-ফ্লু প্রাদুর্ভাবের একটি প্রাথমিক আবির্ভাব মাত্র।

আমাদের আয়ু বাড়ানো এবং পৃথিবীতে রাজত্ব করার নিরন্তর প্রচেষ্টাটি আমাদের আবহাওয়া সঙ্কট তৈরিতে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। এ আবহাওয়া সঙ্কট পরিশেষে আমাদের গড়আয়ু বৃদ্ধির মিছিলকে উল্টো পথে পরিচালনা করতে পারে। সম্ভবত পারমাণবিক অস্ত্র, জীবাণু অস্ত্রের মতো উচ্চ প্রযুক্তির মারণাস্ত্রের আক্রমণের ফলেও পৃথিবীজুড়ে যথেষ্ট লোক মারা যাবে। ফলে, একসময় বায়ুমণ্ডলের অসহনীয় কার্বন স্তরে টিকে থাকার মতো পর্যাপ্ত মানুষই হয়তো থাকবে না। সূত্র : দ্য নিউ ইয়র্ক টাইম্স।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ