পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশে জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার আগের বছরগুলোর তুলনায় কমেছে। দেশের মোট জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ৯১ লাখ ১০ হাজার জন। বর্তমানে স্বাভাবিক বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৩০ শতাংশ। আগের বছর ছিল ১ দশমিক ৩২ শতাংশ। বিশ্বজুড়ে চলমান করোনা মহামারির মধ্যে দেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়ে ৭২ দশমিক ৮ বছর দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে নারীদের গড় আয়ু ৭৪ দশমিক ৫ বছর এবং পুরুষদের গড় আয়ু ৭১ দশমিক ২ বছর। সেই হিসাবে বাংলাদেশের নারীদের আয়ুষ্কাল এখন পুরুষদের তুলনায় ৩ দশমিক ৩ বছর বেশি। আগের যে কোন সময়ের তুলনায় বিভিন্ন সামাজিক সূচকে উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। এরমধ্যে কমেছে মাতৃ মৃত্যু ও শিশু মৃত্যুর হার। বর্তমানে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় রয়েছে দেশের ৯৬ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স-২০২০’ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। মনিটরিং দ্য সিচুয়েশন অব ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স অব বাংলাদেশ (এমএসভিএসবি) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। প্রতিবেদনে শিক্ষার হারসহ সামাজিক অনেক সূচকে অগ্রগতির চিত্র পাওয়া গেছে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবন অডিটোরিয়ামে সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদনটির প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এই অভিমত প্রকাশ করেন। পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মোহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম এবং বিবিএস মহাপরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক একেএম আশরাফুল হক।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছর জানুয়ারি পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯১ লাখ ১০ হাজার জন। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হলো ১ দশমিক ৩০ শতাংশ। তবে এই বৃদ্ধির হার প্রতি বছরই হ্রাস পাচ্ছে। ২০১৬ সালে ছিল ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ। গত ২০২০ সালে সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী দেশের জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৮০ লাখ জন। প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, জনবহুল দেশ হওয়ার সত্ত্বেও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সাফল্য আছে। একজন মা এখন গড়ে দুটি সন্তানের জন্ম দেন। এখন থেকে ৫০ বছর পেছনে তাকালে দেখা যাবে তখন একজন মা গড়ে ছয়টি সন্তানের জন্ম দিতেন। আমাদের দেশের মানুষ এখন শিক্ষিত হয়েছে এবং সচেতনতা বেড়েছে। কাজেই এটি আমাদের জন্য বিরাট সাফল্য।
২০২০ সালের হিসাবে প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল ৭২ বছরে ৮ মাস, যা ২০১৯ সালে ছিল ৭২ বছর ৬ মাস। এছাড়া ২০১৮ সালে গড় আয়ু ছিল ৭২ বছর ৩ মাস, ২০১৭ সালে ৭২ বছর এবং ২০১৬ সালে ৭১ বছরে ৬ মাস। জনসংখার মধ্যে পুরুষ ও নারীর সংখা প্রায় সমান। ৮ কোটি ৪৬ লাখ ৪০ হাজার পুরুষ এবং ৮ কোটি ৪৪ লাখ ৭০ হাজার হলো নারী। পুরুষের গড় আয়ু ৭১ বছর ২ মাস। আর নারীদের গড় আয়ু ৭৪ বছর ৫ মাস। ২০২০ সালে পুরুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু ৭১ বছর ২ মাস। ২০১৯ সালে ছিল ৭১ বছর ১ মাস। ২০১৮ সালে ৭০ বছর ৮ মাস, ২০১৭ সালে ৭০ বছর ৬ মাস এবং ২০১৬ সালে ছিল ৭০ বছর ৩ মাস। অন্যদিকে নারীদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, ২০২০ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে গড় আয়ু ৭৪ বছর ৫ মাস, ৭৪ বছর ২ মাস, ৭৩ বছর ৮ মাস, ৭৩ বছর ৫ মাস এবং ৭২ বছর ৯ মাস। পাঁচ বছরে প্রত্যাশিত আয়ুস্কাল গড়ে প্রতি বছরে শূন্য দশমিক ২৪ বছর হারে বেড়েছে। পাঁচ বছরে মোট ১ দশমিক ২ বছর বেড়েছে। এই বৃদ্ধির ক্ষেত্রে পুরুষের শূন্য দশমিক ৯ বছর এবং নারীর ক্ষেত্রে ১ দশমিক ৬ বছর। আয়ুস্কাল বৃদ্দির ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক একেএম আশরাফুল হক জানিয়েছেন, এখন চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে। মানুষ সহজেই চিকিৎসা নিতে পারছেন। তাছাড়া খাদ্যগ্রহণ আগের চেয়ে বেড়েছে। পুষ্টিগ্রহণের ক্ষেত্রে তুলনামূলক অগ্রগতি হয়েছে। মানুষের সচেতনতা বেড়েছে। সবকিছু মিলিয়ে গড় আয়ু বেড়েছে।
জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত পাঁচ বছরে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের হার বাড়েনি। নমুনা এলাকায় এই হার ৬৩ দশমিক ৯ শতাংশ। শহর এলাকায় মহিলারা ৬৪ দশমিক ৭ শতাংশ জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করে। অন্যদিকে গ্রামে ৬৩ দশমিক ১ শতাংশ মহিলা এই পদ্ধতি ব্যবহার করে। তবে জন্মনিয়ন্ত্রণের আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারের হার বেড়েছে। বিবিএস বলছে, দেশে স্থূল প্রতিবন্ধীতার হার ২০১৯ সালের তুলনায় বাড়ছে। বাংলাদেশের পতি হাজারে ৮ জনের চেয়ে কিছু বেশি মানুষ কোনো না কোনো ভাবে প্রতিবন্ধী। এই হার ৮ দশমিক ৪ প্রতি হাজারে। মহিলাদের চেয়ে পুরুষদের মধ্যে প্রতিবন্ধীতার হার বেশি। পুরুষরা এক্ষেত্রে বেশি ঝুঁকিতে। ২০২০ সালে পুরুষ প্রতিবন্ধীতার হার প্রতি হাজারে ৯ দশমিক ৩জন। আর মহিলা প্রতিবন্ধীতার হার প্রতি হাজারে ৭ দশমিক ৬জন।
দেশে ট্যাপ ও নলকূপ থেকে খাবার পানি ব্যবহার করছে ৯৮ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ। ৯৬ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। সোলার বিদ্যুৎ ব্যবহারের হার কমে ২ দশমিক ৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। কেরোসিন ব্যবহারের মাধ্যমে আলো গ্রহণ করছে ১ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ। স্যানিটারি টয়লেট সুবিধা আছে সাড়ে ৮১ শতাংশ মানুষের। অন্যান্য টয়লেট ব্যবহার করছে ১৭ দশমিক ২ শতাংশ। তবে এখনো উম্মুক্ত স্থানে পায়খানা করে ১ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ।
অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার আগে আমি সাত কোটি জনসংখ্যার কথা শুনে ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। বর্তমানে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ কোটি ৮২ লাখে। তবে আশার কথা এই যে, খাদ্য উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যান্য খাতেও উন্নতি সাধন হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল দ্রুত বাড়ছে। জাপানের গড় আয়ু ৮০ বছর। আমরা শিগগিরই সেটা ধরে ফেলব। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আমাদের পরিসংখ্যান বিভাগ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে তথ্যের কোনো লুকোচুরি নাই। রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে দু’একটা বিষয়ে কিছু সময়ের জন্য প্রকাশ করা হয় না। তিনি বলেন, আমাদের তথ্য নিয়ে সমালোচনা করেন। তাতে কোনো সমস্যা নাই। তবে তা হতে হবে গঠনমূলক। এখানে শিক্ষার হার বলা হয়েছে। তবে আমাদের কতজন শিক্ষিত আছে সেটা নিয়ে আমার মনে প্রশ্ন আছে। কিন্তু যেটা প্রকাশ করা হয়েছে সেটা হবে স্বাক্ষরতার হার। অনুষ্ঠানে জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন প্রকল্প পরিচালক এ কে এম আশরাফুল হক। বিবিএস মহাপরিচালক তাজুল ইসলাম বলেন, সারা দেশের ২১২ নমুনা থেকে প্রতি মাসে তথ্য নেয়া হয়। এর ভিত্তিতে গড় আয়ু দাঁড়িয়েছে ৭২ দশমিক ৮ বছর।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।