পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সরকারের উদাসীনতা, প্রভাবশালীদের ছোবলে দখল ও ভরাট হয়ে গেছে ঢাকার দুই সিটির অনেক খাল। যে কটি টিকে আছে সেগুলোরও নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহ নেই। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও সীমানা নির্ধারণ করা নেই অধিকাংশের। বহুতল ভবন, সড়কসহ নানা ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এগুলোতে পানি, গ্যাস, বিদ্যুতের সংযোগও রয়েছে। অথচ ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে (সিএস) ম্যাপ দেখে রাজধানী ঢাকার খালগুলো সীমানা নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। একই কথা বলেছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসও। তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
উচ্ছেদের মাধ্যমে খাল দখলমুক্ত করতে হিমশিম খাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। দু’একটি খালের কিছু অংশ পরিষ্কার করে পানির প্রবাহ তৈরি করা হয়েছে। তবে অধিকাংশের উদ্ধার প্রক্রিয়া নানা বাধার মুখে আটকে আছে। আবর্জনা ফেলায় মাঝপথে খালের গতি রুদ্ধ হয়ে গেছে। এতে শহরের চারপাশের নদীর সঙ্গেও অধিকাংশ খালের সংযোগ কাটা পড়েছে। এর পরিণতি ভোগ করছেন নগরীর দুই কোটি বাসিন্দা। তারা সামান্য বৃষ্টিতেই পানির জটে আটকা পড়ছেন, পোহাচ্ছেন পানিবদ্ধতার মতো দুর্ভোগে। দুই সিটি দায়িত্ব পাওয়ার পর খালের প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে পরিচ্ছন্নতা ও অবৈধ দখল উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করলেও এখনো সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারেনি।
ফলসূতিতে নদী হয়ে গেছে খাল। খালগুলো পরিণত হয়েছে নর্দমায়। রাজধানীতে যে কয়টি খাল ছিল তার সঠিক পরিসংখ্যানও নেই। কারো জরিপে ৫১টি, আবার কারো জরিপে ৪৬টি, কোথাও আবার ৩২টি। এছাড়া ঢাকার চারপাশে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা, বালু ও ধলেশ্বরী নদীর পানি হয়ে গেছে ময়লা ও দুর্গন্ধ।
ঢাকা শহরের পানির উৎস, বিনোদন কেন্দ্র, নৌ-যোগাযোগ, মৎস্য সম্পদ, জীববৈচিত্র ও পরিবেশ, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, জলাবদ্ধতা নিরসনে নদী, খাল এবং জলাশয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু জলাশয় বা পুকুরগুলো ভরাট করে সরকারিভাবে উঁচু উঁচু ভবন তৈরি করা হয়েছে বলে জানান নগর পরিকল্পনাবিদরা।
এ বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ ও বিআইপির সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মুহাম্মদ ইনকিলাবকে বলেন, পৃথিবীর কোথাও আমাদের দেশের মতো পিলার দিয়ে নদী সীমানা নির্ধারণ করা হয় না। নদীর তীরে এভাবে পিলার স্থাপন করে নদীর সৌন্দর্য নষ্ট করা হচ্ছে। আগে নদীর তীরে তাকালে অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যেতো। এখন শুধু খাম্বা দেখা যায়। নদীর সৌন্দর্য রক্ষার জন্য প্রথমে পানি দূষণমুক্ত ও প্রবাহ ঠিক করতে হবে। তা না করে নদী তীরে পিলার স্থাপনের নামে হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। নদী রক্ষার চেয়ে প্রকল্পের প্রতি আগ্রহ বেশি সরকারি কর্মকর্তাদের। দেশে আইনের শাসন না থাকার কারণে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। ঢাকার নদী, খাল ও জলাশয় রক্ষার জন্য যেসব সরকারি সংস্থা জড়িত তারা তাদের সঠিক দায়িত্ব পালন করছে না।
যতদিন পর্যন্ত দেশের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠান না হবে ততদিন নদী, খাল ও জলাশয় তাদের প্রকৃত অবস্থা ফিরে পাবে না বলে জানান তিনি।
প্রকল্প ব্যয় বাড়ে, অগ্রগতি বাড়ে না
ঢাকার চারপাশে নদীর তীরভূমিতে পিলার স্থাপন, তীররক্ষা দেয়াল, ওয়াকওয়ে ও জেটিসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ (২য় পর্যায়) ২০১৮ সালে একটি প্রকল্প নিয়েছিল অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮৪৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। বর্তমানে প্রকল্পের নির্মাণ কাজ চলছে। এ পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৪০ শতাংশ। ২০২২ সালে জুনে প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। তবে অবকাঠামো বৃদ্ধির কারণে প্রকল্পটি সংশোধনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এতে ৩৩২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বাড়িয়ে প্রকল্পের ব্যয় ১ হাজার ১৮১ কোটি ১০ লাখ ৩১ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের মেয়াদ আরও ১ বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানায় বিআইডব্লিউটিএ সূত্র।
এর আগে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, ধলেশ^রী ও শীতলক্ষ্যা নদীর সীমানা নির্ধারণের জন্য ২০০৯ সালে একটি নির্দেশনা দেয় আদালত। সেই নির্দেশনার আলোকে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পিডব্লিউডি ২০১১-২০১৫ সাল পর্যন্ত ৬ হাজার ৮৪৩টি পিলার স্থাপনের কথাছিল। কিন্তু ৫ বছরের ৪ হাজার ৬৩টি পিলার স্থাপন করা হয়। এরমধ্যে ৩৬টি পিলার স্থাপন করার কথা বলা হলেও তা পাওয়া যায়নি। তাই মোট ৪ হাজার ২৭টি পিলার স্থাপন করা হয়েছে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও ধলেশ^রী নদীতে। এর মধ্যে বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে ২১টি মৌজায় ১ হাজার ৮টি, তুরাগ নদীর পাড়ে ৩৫টি মৌজায় ২ হাজার ১৪টি, বালু নদীর পাড়ে ১৮টি মৌজায় ৫৮৯টি ও ধলেশ^রী নদীর পাড়ে ৪টি মৌজায় ৪১৬টি পিলার স্থাপন করা হয়। বুঝে নেয়া এ সব পিলারের মধ্যে ৮৯৪টি পিলার বিষয়ে আপত্তি রয়েছে। এতে ২৬৪টি পিলার ক্ষতিগ্রস্ত ও ভাঙা পাওয়া গেছে। এছাড়া পিলার স্থাপনের কথা বলা হলেও সরেজমিনে দৃশ্যমান পাওয়া যায়নি ২০৮ পিলার। আর ৪২২টি পিলার সঠিক স্থানে স্থাপন করা হয়নি বলে দাবি করে বিআইডব্লিউটিএ।
ওয়াটার বাস এখন খেয়া নৌকা
ঢাকার চারপাশে ১১০ কিলোমিটার নৌপথে ওয়াটার বাস চালুর জন্য প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২টি ওয়াটার বাস নির্মাণ করে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)। ঢাকার চারদিগে নৌপথে চলাচলের জন্য ২০০৪ সালে যাত্রা শুরু করে ওয়াটার বাস। ২-৩টি ছাড়া বাকি ওয়াটার বাসগুলো অলসভাবে বসিয়ে রাখা হয়েছে। এতে নষ্ট হচ্ছে ওয়াটার বাসের বডি ও ইঞ্জিন। বর্তমানে সদরঘাটে খেয়া পারাপারের জন্য ২-৩টি ওয়াটার বাস ইজারা দেয়া হয়েছিল। গত দুই মাস যাবত তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান। তাই দীর্ঘ ১৭ বছরেও চালু হয়নি ঢাকার চারপাশের বৃত্তাকার নৌপথ। ঢাকার চারপাশের নদীতে ১৩টি কম উচ্চতার সেতুর কারণে এই নৌপথ চালু করা সম্ভব হয়নি বলে নৌ-মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়।
আদি বুড়িগঙ্গা এখন মরা খাল
পুরান ঢাকার সোয়ারীঘাটের কিছুটা পশ্চিমে চাঁদনীঘাট এলাকায় দু’ভাগে ভাগ হয়ে যাওয়া বুড়িগঙ্গার উত্তর দিকের শাখাটি আদি চ্যানেল হিসেবে পরিচিত। আর দক্ষিণের শাখাটি এখনকার মূল বুড়িগঙ্গা। বুড়িগঙ্গার এই দুই ধারার মাঝখানে কামরাঙ্গীর চর, নবাবগঞ্জ চরসহ কয়েকটি এলাকার অবস্থান। কামরাঙ্গীর চর অংশের অল্প কিছু দূর ছাড়া এই চ্যানেলের পুরোটাই এখন ভরাট হয়ে গেছে। সেখানে গড়ে উঠেছে অসংখ্য বাড়ি-ঘর ও বহুতল ভবন। অথচ দুই দশক আগেও এই চ্যানেলটি হাজারীবাগ, রায়েরবাজার ও মোহাম্মদপুরের পাশ দিয়ে আবারও বুড়িগঙ্গার সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। চ্যানেলটি উদ্ধারে ২০১৪ সালের ২৫ মে তৎকালীন নৌমন্ত্রী ও নদী উদ্ধারে গঠিত টাস্কফোর্সের সভাপতি শাজাহান খানের নেতৃত্বে একাধিক মন্ত্রী, টাস্কফোর্সের সদস্যরা সরেজমিনে বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেলটি পরিদর্শন করেন। চ্যানেলটির দূরাবস্থা দেখে নৌমন্ত্রী পরের দিনই সচিবালয়ে জরুরি বৈঠক ডাকেন। ওই বৈঠকে আদি চ্যানেল উদ্ধারে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও পরে আর সেগুলো বাস্তবায়ন করা হয়নি। কমিটি আর উপকমিটির বেড়াজালে আটকা পড়ে যায় এই চ্যানেলের উদ্ধার প্রক্রিয়া। তখন বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। পরে ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (রাজস্ব) আহ্বায়ক করে ১৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়। এর প্রায় ১ মাস পর লালবাগ সার্কেলের সহকারী ভূমি কমিশনারকে আহ্বায়ক করে আরও একটি উপকমিটি গঠন করা হয়। এত কমিটির পরও দীর্ঘ ৭ বছরেও উদ্ধার হয়নি আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেলটি। বর্তমানে পুরো কামরাঙ্গীরচরসহ নতুন করে একটি মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে বলে ডিএসসিসি সূত্র জানায়।
সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, আদি চ্যানেল ভরাট ও দখলের ফলে এর ওপর নির্মিত সেতুগুলো এখন প্রায় অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। কামরাঙ্গীর চরের লোহারপুল ও পাকা সেতুর নিচে পানি থাকলেও পশ্চিমের অন্য সেতুগুলোর কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও কচুরিপানা আর আগাছায় ভরা। মাটি ভরাট করে অনেক সেতুকে দুই দিক থেকে দখল করে ফেলা হয়েছে। নবাবগঞ্জের পাকা সেতুটি ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে নির্মাণ করা হয়। এক যুগের ব্যবধানে ওই সেতুটি এখন অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। সেতুর নিচে পানি নেই, আছে মাটি। দুই দিকে অসংখ্য স্থাপনা। আবাসন ব্যবসায়ীরা বালু ভরাট করে এই এলাকায় সারি সারি প্লট বিক্রি করেছেন। একই অবস্থা কামরাঙ্গীর চরের রসুলপুর ও হাজারীবাগের কোম্পানিঘাট সেতুরও।
এ বিষয়ে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল হক ইনকিলাবকে বলেন, রাজধানীর বৃত্তকার নৌপথের উপরে কম উচ্চতার সেতুগুলো ভেঙে পুনঃনির্মাণ করে নৌপথটি চালু করা সম্ভব। কিন্তু সরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের অভাবে এটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। যে কোন দেশে পরিবহন সেক্টরে সড়ক, রেল ও নৌপথের জন্য আলাদা প্রকল্প নেয়া হলেও তিন সংস্থার সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশে সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব একটি সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পরিকল্পনা কমিশনের ব্যর্থতা রয়েছে বলে আমি মনে করি। কমিশন ডিপিপি পাস করে তাদের কাজ শেষ। কিন্তু পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে কি-না সে ব্যাপারে কোন খোঁজখবর রাখে না। তাই পরিকল্পনা কমিশনকেও আরও আধুনিক করার পরামর্শ দেন তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।