পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পানিবদ্ধতা থেকে ঢাকাকে রক্ষার জন্য ১৯১৭ সালে ব্রিটিশ সরকার একটি পরিকল্পনা করে। নগর-পরিকল্পনাবিদ স্যার প্যাট্রিক গেডিস এই পরিকল্পনাটি তৈরি করেছিলেন। এর নাম ছিল ‘ঢাকা টাউন প্ল্যান’। ওই পরিকল্পনা উল্লেখ করা হয়, ‘ঢাকার চারপাশে চারটি নদী (বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু) ঘিরে আছে। এছাড়া ঢাকায় ৫০টির মতো প্রাকৃতিক খাল রয়েছে। এই খালগুলো দিয়ে বৃষ্টির পানি প্রবাহিত হয়ে নদীতে পড়বে।’ এরপর ঢাকার খাল ও নদীকে কেন্দ্র করে শত বছরে একাধিক মহাপরিকল্পনা নেয়া হলেও পানিবদ্ধতা নিরসন হয়নি।
ঢাকার খাল ও নদী নিয়ে যত পরিকল্পনা : ঢাকা শহরের যানজট ও জলাবদ্ধতা নিরসনে গত ১০০ বছরে ঢাকা টাউন প্ল্যান, ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (ডিআইটি) ও ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ)সহ একাধিক মহাপরিকল্পনা তৈরি হয়েছে। কিন্তু সমন্বয়হীনতা ও গুরুত্ব না দেয়ার কারণে পুরোপুরি কার্যকর হয়নি এসব মহাপরিকল্পনা।
ঢাকা শহর বড় হওয়া শুরু করলে ব্রিটিশরা ১৯১৭ সালে নগর-পরিকল্পনাবিদ স্যার প্যাট্রিক গেডিসকে দিয়ে একটা বিশদ পরিকল্পনা করায়। সেটা ছিল বিখ্যাত ‘ঢাকা টাউন প্ল্যান’। ঢাকা সমতল আর বৃষ্টিপ্রবণ শহর। এ দুটো বাস্তবতাকে ধরেই এই পরিকল্পনাটি করা হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৮০ সালে প্ল্যানিং কমিশন প্রথম ঢাকা মেট্রোপলিটন ইনটিগ্রেটেড প্ল্যান তৈরি করা হয়। পরবর্তীতে তা বাস্তবায়ন করা হয় না।
এরপর ১৯৯২ থেকে ১৯৯৫ সালে রাজউক ঢাকা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান (ডিএমডিপি) তৈরি করে। ১৯৯৭ সালে এটা পাস করা। পরবর্তীতে তা আর কার্যকর করা হয়নি। ২০১০ সালে তৈরি করা হয় ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) কিন্তু তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। এখন আবার সংশোধন করা হচ্ছে ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ)। এসব মহাপরিকল্পনায় ঢাকা শহরের খাল, নদী ও জলাধার সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে কিন্তু তা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। ভরাট, দখল ও দূষণের শিকার হয়ে হারিয়ে যাচ্ছে খাল ও নদীগুলো। ১০০ বছর পরেও এখনও একই পরিকল্পনা করা হচ্ছে কিন্তু নদী ও খাল আসল রূপ পাচ্ছে না বলে জানান নগর পরিকল্পনাবিদরা।
এ বিষয়ে পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ঢাকা টাউন প্ল্যানে গেডিস সাহেব বৃষ্টির পানি যেন প্রবাহিত হয়ে চলে যেতে পারে, সে জন্য নদী, খাল ও জলাধারগুলোকে সংস্কার ও সংরক্ষণ করার কথা বলেছিলেন। ওটা ঠিক একশ’ বছর আগের কথা কিন্তু এখনও আমাদের এসব নিয়েই কথা বলতে হচ্ছে। পরে এটা ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) বলা হয়েছিল কিন্তু তা এখনও বাস্তবায়ন করা হয়নি। পরে ১৯৫৯ সালে ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (ডিআইটি) ঢাকার জন্য একটি মাস্টারপ্ল্যান করে। এটি ছিল ১৯৬০ থেকে ৮০ পর্যন্ত ২০ বছর মেয়াদি। পানি নিষ্কাশন ও বন্যার প্রসঙ্গটি এ পরিকল্পনায়ও গুরুত্ব পায়।
১৯৯২ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত রাজউক ঢাকা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান (ডিএমডিপি) তৈরি করা হয়। ১৯৯৭ সালে এটা পাস করা হয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট প্ল্যানের মধ্যে ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) পরামর্শগুলো ছিল। তাও বাস্তবায়ন করা হয় না। বর্তমানে নতুন করে ২০১৫ সালে রাজউক আবার নতুন ঢাকা অবকাঠামোর পরিকল্পনা করেছে। সংশোধন করা হচ্ছে ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ)। এটার মধ্যেও তারা জলাধার করার কথা বলেছে কিন্তু ইতোমধ্যেই জলাধার, খাল হারিয়ে গেছে। তাই মহাপরিকল্পনা যথাযথভাবে বাস্তবায়নের পরামর্শ দেন তিনি।
ঢাকার খালের প্রকৃত সংখ্যা : ঢাকা জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, রাজধানীর খালের সংখ্যা ৫৮। বেসরকারি গবেষণায় কখনো ৫২, কখনো ৪৬টির কথা বলা হয়েছে। তবে সম্প্রতি স্থানীয় সরকার বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ঢাকার দুই সিটির আওতাভুক্ত খালের সংখ্যা ৩৯টি। চলতি বছরের শুরুতে ২৬টি খালের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দুই সিটি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর বাইরেও রাজধানীতে ১৭টি খাল (গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, রাজউক এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে) রয়েছে। এই খাল ও জলাশয় সমূহ ঢাকা উত্তর সিটি উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। আর এ খালগুলো সিএস রেকর্ড ধরে সীমানা নির্ধারণ করা হবে। এ লক্ষ্যে কাজ করেছে ঢাকার দুই সিটি।
বাইশটেকী খাল, কল্যাণপুর খাল, কল্যাণপুর মেইন খাল, রূপনগর খাল, প্যারিস খাল, দ্বিগুণ খাল, কল্যাণপুর আংশিক খাল, গাবতলী খাল, দিয়াবাড়ী খাল, বাউনিয়া খাল ছাড়াও বাইলজুলী রানাভোলার মৌজায় আবদুল্লাহপুর খাল আংশিক; রামচন্দ্রপুর মৌজার রামচন্দ্র খাল; কাটাসুর মৌজার কাটাসুর খাল; রাজাবাজার মৌজার রাজাবাজার খাল; বড় মগবাজার মৌজার বেগুনবাড়ী খাল; তেজগাঁও শিল্প এলাকা মৌজার মহাখালী খাল; উলুন মেরাদিয়া মৌজার মেরাদিয়া-গজারিয়া খাল; বাড্ডার উত্তর মেরাদিয়া মৌজার গুল্লার খাল; গুলশান আবাসিক এলাকা মৌজায় গুলশান খাল (লেক); ভাটারা মৌজার ভাটারা খাল ও সুতিভোলা খাল; ডুমনী মৌজার ডুমনী খাল; তলনা মৌজার তলনা খাল; বাওথাত মৌজার বাওথাল খাল; গোবিন্দপুর মৌজার আমাইয়া খাল; নির্নিচক মৌজার নির্নিচক খাল; ভাটুরিয়া মৌজার ভাটুরিয়া খাল; ছোট পলাশিয়া মৌজার ছোট পলাশিয়া খাল; চামুরখান মৌজার চামুরখান খান; পলাশিয়া মৌজার পলাশিয়া খাল।
উজানপুর মৌজার উজানপুর খাল; গোবিন্দপুর মৌজার গোবিন্দপুর খাল; জোয়ারসাহারা মৌজার বসুন্ধরা অ্যাপোলো হাসপাতালের সামনের খাল; দেয়ানপাড়া খাল; কাঁঠালিয়া খাল; ইব্রাহীমপুর মৌজার ইব্রাহীমপুর খাল; বাইলজুরী মৌজার আবদুল্লাহপুর খাল; আবদুল্লাহপুর মৌজার কোনাবাড়ী খাল; মৌসাইদ মৌজার জুমাই খাল; উত্তরখান মৌজার মৌসাইদ খাল; ধোলাইখাল মৌজার ধোলাইখাল-১ ও ধোলাইখাল-২ খাল; রমনার মৌজায় পরীবাগ খাল; খিলগাঁও মৌজার খিলগাঁও-বাসাবো খাল, কামরাঙ্গীরচর মৌজার কামরাঙ্গীরচর খাল, এনায়েতগঞ্জ মৌজার কালুনগর খাল, সুলতানগঞ্জ মৌজার রায়ের বাজার খাল, নন্দীপাড়া মৌজার নন্দীপাড়া ত্রিমোহনী (জিরানী) খাল ও নয়াখোলা মৌজার নয়াখোলা খাল।
সরকারের উদাসীনতা, প্রভাবশালীদের ছোবলে দখল ও ভরাট হয়ে গেছে ঢাকার দুই সিটির অনেক খাল। যে কটি টিকে আছে সেগুলোরও নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহ নেই। সীমানা নির্ধারণ করা নেই অধিকাংশের। বহুতল ভবন, সড়কসহ নানা ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এগুলোতে পানি, গ্যাস, বিদ্যুতের সংযোগ রয়েছে।
ফলে মূল সীমানা ধরে খালগুলো উদ্ধারে পদে পদে বাধার মুখে পড়ছে ঢাকার দুই সিটি। এগুলো উচ্ছেদের মাধ্যমে খাল দখলমুক্ত করতে হিমশিম খাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। দু-একটি খালের কিছু অংশ পরিষ্কার করে পানির প্রবাহ তৈরি করা হয়েছে। তবে অধিকাংশের উদ্ধার প্রক্রিয়া নানা বাধার মুখে আটকে আছে।
তবে খাল দখলকারীরা যত বড় ক্ষমতাশালী হোক না কেন আইনানুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন মো. তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে, খাল দখল করে তার উপরে বিল্ডিং বানানো হয়েছে। যারা এ সব করেছে তারা যত ক্ষমতাশালী হোক না কেন আইনানুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকা শহরের খালসমূহ উদ্ধার করা হবে।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ওয়াসা থেকে খালগুলো বুঝে নিয়েছে। ইতোমধ্যে খাল সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। খাল উদ্ধারে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ঢাকা শহরে যত খাল আছে তাতে একটি হাতিরঝিল নয়, এ রকম কয়েকটি হাতিরঝিল নির্মাণ করা সম্ভব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।