Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নির্মাণের ৩ বছরেই নদীগর্ভে বিলীন

দশমিনায় অপরিকল্পিত সড়ক : হুমকিতে স্কুলসহ ৫০ পরিবার

মো. জাকির হোসেন, পটুয়াখালী থেকে | প্রকাশের সময় : ২৬ মে, ২০২১, ১২:০১ এএম

অপরিকল্পিতভাবে সড়ক নির্মাণের ৩ বছরের মধ্যেই নদী গর্ভে বিলীন। ১০ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত দশমিনার বাশবাড়িয়ার ৯নং ওয়ার্ডের ঢনঢনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ঐ এলাকার ৫০টি পরিবার নদী ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে।
পটুয়াখালী জেলার দশমিনা উপজেলা বাশবাড়িয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের সাথে উপজেলার সংযোগের প্রধান সড়কটির বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দশমিনা ইউনিয়নের হাজিরহাট পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার অংশ ২০১৮ সালের মার্চ মাসে শেষ হয়। কোস্টাল ক্লাইমেট রেজিরিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার (সিসিআরআইপি) জলবায়ূ প্রকল্পের আওতায় টেকসই উন্নয়নের লক্ষে, বিশ্ব জলবায়ু তহবিলের প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেন বলে উপজেলা এলজিইডি দপ্তর সূত্রে জানা যায়।
স্থানীয় জনগণের অভিযোগ, বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের ৩৪নং ঢনঢনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকে আধা কিলোমিটার এলাকায় নিম্নমানের পাইলিং দিয়ে কাজ করায় শুরু থেকেই পাইলিং ভেঙে পরা শুরু করলেও স্থানীয়দের অভিযোগের পরেও সঠিকভাবে কাজ করা হয়নি। সঠিকভাবে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজটি না করায় ইতোমধ্যে নদী গর্ভে ভেঙে যাওয়ায় দশমিনা ইউনিয়নের হাজিরহাট এলাকায় তেতুলিয়া নদীর তীর ঘেষা সড়কের বিভিন্ন অংশ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পাশাপাশি সড়কটিতে ঝুঁকি নিয়ে ছোট ছোট যানবাহন চলাচল করছে ফলে যে কোন মুহূর্ত ঘটে যেতে পারে বড় ধরণের দুর্ঘটনা।
ভাঙনের মুখে হুমকির মধ্যে থাকা স্থানীয় অধিবাসী মো. হোসেন জানান, কাজ শুরু অবস্থায় খালের পাশ ঘেড়া আমাদের এলাকায় পাইলিং ভেঙে পরে। পরে দ্বিতীয়বার পাইলিং করা হয় একইভাবে কমপক্ষে ১৫ ফুট গভীর ঐ এলাকায়। আমরা বিষয়টি স্থানীয় উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ জেলা প্রশাসনে জানালে তারা পরিদর্শন করেন, কিন্তু কোন সমাধান হয়নি। ভাঙন এলাকা এখন ধীরে ধীরে বাড়ছে। বিলীন হয়ে যাচ্ছে সড়ক, হুমকির মুখে ৩৪নং ঢনঢনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আমাদের এলাকার কমপক্ষে ৬০-৭০টি পরিবার। সড়কটি নির্মাণের সময় আমরা দাবি করেছিলাম খালের কোল ঘেষে সড়কটি নির্মাণ না করতে, কিন্তু আমাদের কথায় তারা কর্নপাত না করায় জোয়ারের পানির চাপে সড়কটি প্রতিদিনই ক্ষয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় যুবলীগ নেতা নাজমুল সাকিব অভিযোগ করেন, এ খাল দিয়ে প্রতিদিন বড় বড় কার্গো, ট্রলার এ খাল দিয়ে দশমিনার সবচেয়ে বড় এই খালটি ব্যবহার হচ্ছে। রাস্তা নির্মাণের সময় পাইলিং সঠিকভাবে করা হয়নি। যার ফলে রাস্তাটি ক্রমাগত ভেঙে যাচ্ছে।
স্থানীয় ৩৪নং ঢনঢনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিনারা বেগম জানান, রাস্তাটি ক্রমাগত ভেঙে যাওয়ায় তার স্কুলটি হুমকির মুখে রয়েছে। বিষয়টি তিনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আবুল কালাম প্যাদা বলেন, অতি সত্ত্বর যদি কোন কার্যকরী ব্যবস্থা না নেয়া হয়, তবে তার এলাকার ৭-৮ হাজার লোকের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে উপজেলার সাথে।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. আলতাব হোসেন আকন জানান, অপরিকল্পিতভাবে রাস্তাটি করা হয়েছে, রাস্তাটি খাল পাড় থেকে কমপক্ষে ১০-২০ ফুট পূর্বে করা হলে এমন হতোনা। আমি উপজেলা পরিষদের সভায় জানিয়েছি, কিন্তু অদ্যাবধি কোন সমাধান না হওয়ায় এলাকার সরকারি প্রাইমারি স্কুলসহ ঐ এলাকার জনগণ হুমকির মুখে রয়েছেন।
এ বিষয়ে দশমিনা উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী মো. মকবুল হোসেন জানান, ৪ কি.মি. সড়কের ঐ অংশটি ভেঙে যাচ্ছে পানির তোড়ে। নিম্নমানের কাজ এবং সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজটি হয়েছে কিনা এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কাজের মান নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই, ঐ সড়কের অন্য অংশ ভেঙে যায়নি, খালের পাশে রাস্তার নির্মাণের ক্ষেত্রে কোন বিশেষ পাইলিং ছিল কিনা তিনি জানেন না। তার টার্মের আগে কাজ শেষ হয়েছে, যখন কাজ শুরু হয় তখন ওই এলাকায় এত ভাঙন ছিল না বলে তিনি শুনেছেন। ভাঙন রোধে কোন পরিকল্পনা রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ধরনের ভাঙন রোধে আমাদের কিছু করার নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে ব্লক অথবা বালির বস্তা ফেলে কাজ করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ