Inqilab Logo

শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

চলনবিলে কৃষকের ভরসা মহিষের গাড়ি

মো: শামীম হোসেন, তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৬ মে, ২০২১, ১২:০২ এএম

চলনবিলের বোরো ধান বাহনে একমাত্র ভরসা মহিষের গাড়ি। বর্ষায় নৌকা আর শুষ্ক মৌসুমে বিল পাড়ের মানুষের মালামাল পরিবহনের প্রধান মাধ্যম মহিষের গাড়ি। জানা যায়, এশিয়ার বৃহত্তম চলনবিল। দেশের উত্তর জনপদের ৩টি জেলা সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও নাটোরের ৯টি উপজেলা জুড়ে অবস্থিত এই বিল। গত কয়েক দশক আগেও বিলে সারা বছর পানি থাকত। সে সময়ে এখানকার মানুষ বিল থেকে মাছ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করত।
কিন্তু প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে বিলের বিভিন্ন স্থানে বাঁধ দেয়া ও বিলের মধ্যে পুকুর খনন করে বিল সঙ্কুচিৎ করার ফলে বর্তমানে বর্ষা মৌসুমে বিলে ৩ থেকে ৪ মাস পানি থাকে। আর ৮ থেকে ৯ মাস বিল শুকিয়ে যায়। এই শুস্ক মৌসুমে এখানকার কৃষক বিলের দিগন্তজোড়া মাঠে ধান, গম, ভূট্টা, তরমুজ ও রবি শস্য চাষ করে। কৃষকের উৎপাদিত ফসল মাঠ থেকে বাড়িতে পৌঁছানোর একমাত্র বাহন মহিষের গাড়ি। সরেজমিনে দেখা গেছে, চলনবিলের তাড়াশ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, গুরুদাসপুর, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও সিংড়া উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠে পাকা ধান দোল খাচ্ছে। বিল এলাকায় পুরোদমে ধান কাটা শুরু হয়েছে।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, শুধু তাড়াশ উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ২২ হাজার ৩শ’ ১৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করা হয়েছে। এক সময় যাতায়াতে ব্যবহৃত হতো মহিষের গাড়ি। মহিষের গাড়ি ছিল সে সময়ে গ্রামের ধনীদের যাতায়াতের পরিবহন। তখন গ্রামের জমিদারের ছেলেরা বিয়ে করে মহিষের গাড়িতে করে নববধূ ঘরে তুলত। ওই সময়ে মহিষের গাড়িতে ওঠার শখ সাধারণ মানুষের কল্পনাতেই সীমাব্ধ ছিল। কালের পরিক্রমায় সেই মহিষের গাড়ি এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে এখন প্রত্যন্ত বিলাঞ্চলের মানুষের মাঠে ফলানো ধানসহ নিত্য প্রয়োজনীয় মালামাল পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে মহিষের গাড়ি।
চলনবিলের মাগুড়া গ্রামের কৃষক হাসিনুর রহমান বলেন, আমাদের বিলঅঞ্চলের বাড়ি থেকে জমির দূরুত্ব অনেক। তাই শ্রমিকের কাটা ধান মাথায় বহন করতে অনেক কষ্ট হয়। মহিষের গাড়ি বিলঅঞ্চলের কৃষকদের কষ্ট লাঘবে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। পাবনার চাটমোহর উপজেলা থেকে আসা গাড়িয়াল আব্দুস সালাম, জাহাঙ্গীর আলম ও আবু তালেব জানান, তারা ১ বিঘার জমির ধান মাঠে থেকে কৃষকের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে ৪ মন ধান নেন। একজন গাড়িয়াল মৌসুমে ৩৫ থেকে ৪০ মন ধান আয় করতে পারে। এতে তাদের মৌসুমে অথ্যাৎ প্রায় ১ থেকে দেড় মাসে আয় হবে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। তারা আরো জানান, একাজটি খুবই কষ্টকর। তবে অল্প সময়ে বেশি আয়ের পথ এটি।
নাটোরের গুরুদাসপুর এবং বড়াইগ্রাম উপজেলা থেকে ধান বহন করতে আসা গাড়িয়াল ফজলুল হক, ও সমশের আলী জানান, আমরা সারা বছরই মহিষের গাড়ি দিয়ে মালামাল বহন করি। এটি আমাদের পেশা ও উপার্জনের একমাত্র পথ। তারা আরো জানান, মাসে যে আয় হয় তাতে মহিষের খাবার খরচ বাদে কোনো মতে সংসার চলে। এটি আমাদের ঐতিহ্য, বাপ দাদার পেশা তাই বাধ্য হয়ে পেশা ধরে রেখেছি। তবে নিয়মিত প্রয়োজনীয় খাবার মহিষকে খাওয়াতে হবে। তা না হলে মহিষ শক্তি হারিয়ে ফেলে। নানা প্রতিকূলের মধ্যেও বিলাঞ্চলে মহিষের গাড়ির ব্যবহার দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ