Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বস্তিতে যাত্রীরা

চালু হলো দূরপাল্লার বাস ট্রেন ও লঞ্চ

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৫ মে, ২০২১, ১২:০০ এএম

করোনা সংক্রমণ রোধে ৪৯ দিন বন্ধ থাকার পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক আসন খালি রেখে গতকাল সোমবার থেকে চলছে দূরপাল্লার বাস, যাত্রাবাহী ট্রেন ও লঞ্চ। এ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ট্রেন আগের ভাড়াতেই চলছে। তবে বাস ও লঞ্চে যাত্রীদের ৬০ শতাংশ বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছে। আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট স্টেশনের কাউন্টারে নয়, পাওয়া যাচ্ছে শুধু অনলাইনে। দূরপাল্লার বাস, ট্রেন ও লঞ্চ চালু হওয়ায় যাত্রীরা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।

গতকাল ভোর থেকে রাজধানীর টার্মিনালগুলো থেকে ছেড়ে যায় দূরপাল্লার বাস। সকালে যাত্রীদের চাপ না থাকলেও বেলা বাড়তে থাকার সাথে সাথে যাত্রীও বাড়তে থাকে। অনেকেই এতোদিন দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকার কারণে গ্রামে যেতে পারেন নি। তারা বাস চালুর দিনেই পরিবারসহ রওনা করেন। রাজধানীর সায়েদাবাদ, গাবতলী, মহাখালী ও ফুলবাড়িয়া টার্মিনালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রথম দিনেও আশানুরুপ যাত্রী পেয়ে বাস মালিকরা খুশি। একই সাথে খুশি পরিবহন শ্রমিকরাও। আলাপকালে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা বলেন, সাত সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর দূরপাল্লার বাস চালু হওয়ায় যাত্রীরা যেমন হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন, তেমনি মালিক-শ্রমিকরাও নতুন করে আশার আলো দেখছেন। তারা জানান, সাত সপ্তাহে বহু মালিকের ঋণের বোঝা ভারি হয়ে গেছে। বিশেষ করে যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে গাড়ি কিনেছেন তাদের কিস্তু বাকি পড়ে গেছে। সামনের দিনগুলোতে তাদের কিস্তির টাকা জোগাড় করতে নিজের সংসারের খরচ চালাতে হিমশিম খাবেন। এদিকে, পরিবহন শ্রমিকরা দেড় মাসের বেশি সময় ধরে অতি কষ্টে দিন কাটিয়েছেন। এখন তারা নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন। সায়েদাবাদ টার্মিনালের বাস শ্রমিক সুমন বলেন , দেড় মাস ধরে কাজ নাই। নিজেই খেতে পারিনি। পরিস্থিতি বুঝে পরিবার পরিজনকে আগেই গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি। এখন টাকা রোজগার হলে ফের তাদের ঢাকায় আনবো। তবে এতেও সময় লাগবে। কারণ হিসাবে সুমন বলেন, এতদিন ধার কর্জ করে চলেছি। এখন কাজ করে সেই ধার আগে শোধ করতে হবে। তারপর পরিবার পরিজনকে ঢাকায় আনার চিন্তা করবো।

এদিকে, দূরপাল্লার বাস চালুর বিয়য়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি সাংগঠনিক চিঠিতে সব জেলার বাস মালিকদের নির্দেশনা দিয়েছে, অর্ধেক আসন খালি রাখায় ৬০ শতাংশ বেশি ভাড়া নেওয়া যাবে। সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ স্বাক্ষরিত এ নির্দেশনায় বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাস চালাতে হবে। মাস্ক ছাড়া কোনো যাত্রী ওঠানো যাবে না। বাস টার্মিনাল ও টিকিট কাউন্টারে সামাজিক দূরত্ব মানতে হবে। যাত্রার আগে-পরে বাস জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। তবে গতকাল প্রথম দিনে বেশিরভাগ বাসে এক আসন খালি রেখে যাত্রী তোলা হলেও মাস্ক ব্যবহারে অনীহা দেখা গেছে। আর জীবাণুনাশক ও পরিচ্ছন্নতার বিষয়েও শ্রমিকদের তৎপর দেখা যায় নি। এ নিয়ে বেশ কয়েকজন যাত্রী অভিযোগও করেন। সিলেটগামী যাত্রী ইউসুফ হোসেন বলেন, এতদিন বাস বন্ধ ছিল বলে পরিবার নিয়ে বাড়িতে যেতে পারিন। বাস চালু হওয়ায় আজ যাচ্ছি। খুব ভালো লাগছে।

এদিকে, ৭ সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর গতকাল সোমবার ভোর থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। এদিন ভোর ৬টা ২০ মিনিটে ঢাকা-সিলেট রুটে পারাবত এক্সপ্রেস ছেড়ে গেছে। এর আগে লোকাল ট্রেন বলাকা এক্সপ্রেস ছেড়ে যায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকার ঘোষিত অর্ধেক আসনে যাত্রী নিয়ে ট্রেন চলাচল করছে। যাত্রীদের খোঁজ খবর নিতে গতকাল সকালে কমলাপুর রেলস্টেশন পরিদর্শন করেন রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন। পরিদর্শনকালে তিনি বলেন, সংক্রমণ রোধে ট্রেনের টিকিট ছাড়া কেউ স্টেশনে প্রবেশ করতে পারবে না। রেলমন্ত্রী বলেন, বিধিনিষেধের সময় বৃদ্ধি করা হলেও ২৮ জোড়া আন্তনগর ট্রেন দিয়ে শুরু হয়েছে ট্রেন চলাচল। এক আসন ফাঁকা রেখে বিক্রি হচ্ছে টিকিট। টিকিট বিক্রি হচ্ছে ৫০ শতাংশ। তবে কাউন্টারে কোনো টিকিট বিক্রি হচ্ছে না। সব টিকিট বিক্রি হচ্ছে অনলাইনে। স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে সব স্টেশনে নির্দেশনা দেওয়া আছে। এখন যাত্রী কম। যাত্রী বাড়লে পরে পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার মাসুদ সারোয়ার বলেন, সোমবার ভোর ৬টা ২০ মিনিটে প্রথমেই ঢাকা-সিলেট রুটে পারাবত এক্সপ্রেস ছেড়ে গেছে। এর আগে ছেড়ে গেছে লোকাল ট্রেন বলাকা এক্সপ্রেস। এ ছাড়া সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে বলাকা, পারাবত, মহানগর প্রভাতী, কর্ণফুলী ও কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস।

গতকাল যে ট্রেনগুলো চলছে সেগুলো হলো, সুবর্ণ এক্সপ্রেস, মহানগর গোধূলি/তূর্ণা, মহানগর প্রভাতী/তূর্ণা, তিস্তা এক্সপ্রেস, যমুনা এক্সপ্রেস, কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস, উপকূল এক্সপ্রেস, পারাবত এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা/উপবন এক্সপ্রেস, মেঘনা এক্সপ্রেস, বিজয় এক্সপ্রেস, পাহাড়িকা/উদয়ন এক্সপ্রেস, একতা এক্সপ্রেস, দ্রুতযান এক্সপ্রেস, বনলতা এক্সপ্রেস, পদ্মা এক্সপ্রেস, সুন্দরবন এক্সপ্রেস, চিত্রা এক্সপ্রেস, রংপুর এক্সপ্রেস, লালমনি এক্সপ্রেস, নীলসাগর এক্সপ্রেস, রূপসা এক্সপ্রেস, মধুমতি এক্সপ্রেস, তিতুমীর এক্সপ্রেস, সাগরদাড়ী এক্সপ্রেস, ঢালারচর এক্সপ্রেস ও টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস। এ ছাড়া ৯ জোড়া মেইল ও কমিউটার ট্রেন চলেছে। এগুলো হলো কর্ণফুলী কমিউটার, সাগরিকা কমিউটার, বলাকা কমিউটার, জামালপুর কমিউটার, ঢাকা কমিউটার, রকেট মেইল, মহানন্দা এক্সপ্রেস, পদ্মরাগ কমিউটার ও উত্তরা এক্সপ্রেস। স্বাভাবিক সময়ে দেশে যাত্রীবাহী ৫৬ জোড়া ট্রেন চলাচল করে।

অন্যদিকে, রোববার মধ্যরাত থেকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার লঞ্চ ছেড়ে গেছে। গতকাল সকালে সদরঘাট টার্মিনালে আবার পুরাতন রুপের দেখা মেলে। শত শত যাত্রী লঞ্চের উদ্দেশ্যে সদরঘাটে এসে হাজির হন। লঞ্চ মালিকরা জানান, প্রথম দিন তাই যাত্রী কম। দুএকদিনের মধ্যেই যাত্রী সংখ্যা বাড়বে। বিকালে বরিশালগামী একজন যাত্রী ফোন করে জানান, সদরঘাটে লঞ্চে আগের মতোই গাদাগাদি করে যাত্রী নেয়ার প্রবনতা দেখছেন তিনি। স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। বিশেষ করে লঞ্চের ডেকে যাত্রী নেয়ার ক্ষেত্রে কোনো নিয়মই মানা হচ্ছে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ