Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাজশাহীর আম যাবে ইউরোপের বাজারে

কাজে লাগাতে হবে রফতানির সুযোগ

রেজাউল করিম রাজু : | প্রকাশের সময় : ২৫ মে, ২০২১, ১২:০০ এএম

রাজশাহী অঞ্চলে শুরু হয়েছে আম পাড়া। বনেদি জাতের আমগুলো বাজারে আসতে শুরু করেছে। প্রচণ্ড খরা মোকাবেলা করেই এবার আম এসেছে বাজারে। যদিও খরার কারণে এবার আম গায়ে গতরে বড় হতে পারেনি। হয়নি রসালো শাঁসালো। তারপরও বাজারে ছোট আকারের আম আসা শুরু হয়েছে। আম রসিকদের রাজশাহীর সুমিষ্ট আমের কদর যেমন রয়েছে তেমনি বিশ্বজুড়েই সমাদৃত। দেশের গন্ডি পেরিয়ে আমের রাজধানী খ্যাত রাজশাহী থেকে বেশ কয়েক বছর ধরে বিশে^র বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে। করোনাকালীন সময়ে আমের চলতি মৌসুমে এবারও রাজশাহীর আম ইউরোপের চার দেশে যাওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহকারী উপ-পরিচালক তৌফিকুর রহমান জানিয়েছেন, এবার জার্মানি, ফ্রান্স, ইটালি ও সুইজারল্যান্ডে যাবে রাজশাহীর আম। রাজশাহীর খিরশাপাত, ল্যাংড়া, আম্রপালি ও তোতাপুরি আম যাবে ইউরোপে। তবে সরকারিভাবে নয়, বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবলস অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন আম রফতানি করবে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রাজশাহীর প্রায় ৩৫.৭৫ মেট্রিক টন আম রফতানি হয়েছিল। এরমধ্যে গোপালভোগ, ল্যাংড়া, খিরশাপাত, আম্রপালি, হিমসাগর ছিল।
করোনার কারণে গতবছর রাজশাহী থেকে কোনো আম সরকারিভাবে রফতানি হয়নি। তবে বাঘা থেকে ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবলস অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন বেসরকারিভাবে ৯ মেট্রিক টন এবং অন্যান্য উপজেলা থেকে ১২ মেট্রিক টন আম রফতানি করে।
বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবলস অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে ২০১৪ সাল থেকে বিদেশে আম রফতানি করছেন বাঘা উপজেলার আম ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম ছানা। তিনি বলেন, বর্হিবিশ্বে রাজশাহীর আমের প্রচুর চাহিদা ও সুনাম রয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে রাজশাহীর আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে বাইরে আম রফতানি করতে না পারায়। তবে এবার ৩৩৩ মেট্রিক টন আম রফতানির টার্গেট নেয়া রয়েছে। রফতানি ক্ষেত্রে ভালো সুবিধা পেলে আরও বেশি রফতানি করা হবে। প্রশাসনের কর্তারা বলেন, বাঘাসহ আশপাশের উপজেলা থেকে এবার ইউরোপের চার দেশে বেসরকারি আম রফতানি হবে। আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের সার্বিক সহায়তা প্রদান করা হবে। এছাড়াও দেশের সম্মান বিদেশে যেন খর্ব না হয় সেটি মাথায় রেখে উপজেলা পর্যায়ে মনিটরিং টিম কাজ করছে।
আম রফতানি সম্পর্কে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মাধ্যমে স্থানীয় আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে বিদেশে রফতানিযোগ্য আম কিভাবে উৎপাদন, সংগ্রহ ও সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা করা যায় সে বিষয়ে তাদের প্রয়োজনীয় ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে। এতে গুণগত ও মানসম্পন্ন আম রফতানি করতে পারবেন চাষিরা।
উল্লেখ্য, এবার রাজশাহী অঞ্চলের (রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, নওগা, নাটোর) ৮৩ হাজার ৬৭৩ হেক্টরের বেশী জমিতে আম বাগানে ঝুলছে কোটি কোটি আম। এরমধ্যে রাজশাহীতে প্রায় আঠারো হাজার হেক্টর জমিতে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ত্রিশ হাজার হেক্টর, নওগাঁ পচিশ হাজার হেক্টর, আর নাটোরে পাঁচ হাজার হেক্টরে। আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে রাজশাহীতে দুইলাখ চৌদ্দ হাজার চারশত তিরাশি মেট্রিক টন। নওগাঁয় তিনলাখ দশ হাজার দুইশত মেট্রিক টন। চাঁপাইনবাবগঞ্জে দুইলাখ সাতান্ন হাজার সাতশত ছাপান্ন মেট্রিক টন। নাটোরে সাত হাজার মেট্রিক টন। সব মিলিয়ে সাড়ে আটলাখ মেট্রিক টনেরও বেশী আম উৎপাদন হবে। শুধু রাজশাহী নয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকেও বিদেশে আম রফতানির প্রত্যাশা আমচাষিদের। এজন্য তারা ফ্রুট ব্যাগিংয়ের মাধ্যমে বিষমুক্ত আম লালনপালন করছে। তারা সরকারিভাবে বিদেশে আম পাঠানোর উদ্যোগ নেয়ার আহবান জানিয়েছেন। বিশিষ্ট আম বিজ্ঞানী ড. শরফ উদ্দিন বলেন, করোনায় বিশ্ব এখন টালমাটাল। বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের আমের চাহিদা রয়েছে। এখন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে আম রফতানির। নানা জটিলতার কারণে আম চাষিরা বিদেশে আম পাঠাতে পারছে না। এ জটিলতা নিরসনে সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ