Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যাত্রী ছাউনি আছে ব্যবহার নেই

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম বাস স্ট্যান্ড চৌদ্দগ্রামের বাতিসায় যাত্রী ছাউনির টিন খুলে ফেলছে ব্যবসায়ীরা

মো. আকতারুজ্জামান, চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৫ মে, ২০২১, ১২:০১ এএম

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে যাত্রী ওঠানামার জন্য নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড ও যাত্রী ছাউনির ব্যবস্থা করা হলেও তা কোনো কাজে আসছে না। চালকরা নিজের ইচ্ছামতো থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করাচ্ছেন। ফলে ঘটছে অহরহ দুর্ঘটনা। চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে দ্রুতগামী গাড়িগুলোর। এদিকে কয়েকদিন আগে মহাসড়কের বাতিসা রাস্তার মাথায় থাকা যাত্রী ছাউনির পাশের টিন রাতের বেলায় খুলে ফেলছে বিসমিল্লাহ ফার্মেসির ব্যবসায়ীরা। অভিযোগ উঠেছে, যাত্রী ছাউনির পেছনে থাকা তাদের দোকান দেখা না যাওয়ার কারণে টিন খুলে ফেলছে। তবে বাজার পরিচালনা কমিটি ও সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে ফার্মেসির মালিক আবদুর রহিম পাটোয়ারী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চার লেন প্রকল্পের কাজের সময় প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান প্রতিটি বাজারের একপাশে যাত্রীবাহী যানবাহন থামানোর জন্য কিছু জায়গা প্রশস্ত করে স্ট্যান্ড তৈরি করে। পরে ওই স্ট্যান্ডের পাশে তৈরি করা হয় যাত্রী ছাউনি।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের এক কর্মকর্তার মতে, বাজারের এক পাশে বাসস্ট্যান্ড ও যাত্রী ছাউনি করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল মূলত দ্রুতগতির যানবাহন চলাচলে যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় এবং যাত্রীরা যাতে নিরাপদে যানবাহনে ওঠানামা করতে পারে। এতে দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে যেতো।
সরেজমিনে দেখা যায়, চৌদ্দগ্রাম বাজারে কোনো যাত্রী ছাউনি তৈরি করা হয়নি। যাত্রী ছাউনি তৈরি করা না হলেও বাসস্ট্যান্ডের জন্য আলাদা করে জায়গা করা হয়। কিন্তু ওই জায়গাকে স্ট্যান্ড হিসেবে ব্যবহার না করে মহাসড়কের ওপর বাস থামিয়ে যাত্রীরা উঠানামা করানো হচ্ছে। যানবাহনগুলোও ওই নির্দিষ্ট জায়গায় গাড়ি থামায় না। মহাসড়কের ওপর যানবাহন দাড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামা করানোর ফলে দ্রুতগতি গাড়িগুলোর গতি কমে অনেক সময় যানজটের সৃষ্টি হয়।
চৌদ্দগ্রাম সরকারি কলেজ গেট সংলগ্ন সড়কের পূর্ব পাশে একটি আধুনিক যাত্রী ছাউনি থাকলেও এখানে কোন গাড়ি থামায় না। আর ছাউনিটিও ব্যবহার হচ্ছে গাছ রাখার কাজে। পদুয়া, চিওড়া ও মিয়াবাজার এলাকায় যাত্রী ছাউনি ও নির্দিষ্ট বাস স্ট্যান্ড থাকলেও সেগুলো ব্যবহার হয় না। যাত্রী ছাউনি থেকে কমপক্ষে ৩০ গজ দূরে মহাসড়কের ওপর বড় গাড়ি ও ছোট গাড়িগুলো থামিয়ে যাত্রী উঠানামা করতে দেখা গেছে। যাত্রী ছাউনিগুলোর সামনে পথচারীরা মলমূত্র ত্যাগ করছে ও দু’একটা ভ্রাম্যমাণ দোকান হিসাবেও ব্যবহার হচ্ছে।
মিয়াবাজারে সড়কের ওপর প্রতিদিন শতশত যাত্রী গাড়িতে উঠানামা করছে। যানবাহনের জন্য নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড ও যাত্রী ছাউনিটির সামনে ভ্যান গাড়ি, মাইক্রোবাস, নছিমন ও ভাসমান ব্যবসায়ীদের দখলে চলে গেছে। ওই বাজারে মানুষ পারাপারের জন্য রয়েছে ওভারব্রিজ। কিন্তু যাত্রীরা গাড়িতে উঠানামা করতে মহাসড়ক ব্যবহার করার ফলে এদিকে যেমন দ্রুতগতির গাড়ির গতি কমে যায়, তেমনি অন্যদিকে যাত্রী গাড়িতে উঠতে সড়কের এক পাশ থেকে অপর পাশে আসতে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হয়।
চৌদ্দগ্রাম সদরে জামে মসজিদ রোড থেকে চট্টগ্রামে যেতে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করা যাত্রী শাখাওয়াত হোসেন বলেন, যাত্রী ছাউনির কাছে নির্দিষ্ট বাস স্ট্যান্ড সাইন বোর্ড দেয়া হলেও স্ট্যান্ডটি ব্যাবহারের কোন উদ্যোগ নেই। গাড়িগুলোও সেখানে দাড়ায় না। গাড়ি থামানোর উদ্যোগ নেয়া হলে সব যাত্রীরাই সেখানে অপেক্ষা করত। এতে গাড়ি উঠানামা অনেকটা নিরাপদ হতো।
কুমিল্লা-ফেনী রুটের মদিনা পরিবহনের চালক ছেরু মিয়া বলেন, বাজারগুলোতে নির্দিষ্ট স্টপেজ করা থাকলেও যাত্রীরা তাদের সুবিধামত স্থানে উঠতে নামতে চায়। ফলে যাত্রীরা যেখানে বলে সেখানে গাড়ি থামে। সব যাত্রী নির্দিষ্ট স্টপেজে অপেক্ষা করলে চালকরা বাধ্য হয়ে ওই জায়গায় গাড়ি থামাবে। ওই চালক বিষয়টি স্বীকার করেন, মহাসড়কের ওপর যাত্রী উঠানামা করাতে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়। অনেক সময় অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনাও ঘটছে।
এ প্রসঙ্গে বাতিসা রাস্তার মাথায় বাজার কমিটির সভাপতি মো. এয়াকুব মোল্লা বলেন, ‘যাত্রী ছাউনির টিন খুলে ফেলার বিষয়টি ফার্মেসি মালিক আবদুর রহিম পাটোয়ারীকে জিজ্ঞেস করলে তিনি অস্বীকার করেছেন’।
হাইওয়ে পুলিশের মিয়াবাজার ফাড়ির ইনচার্জ আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা নিদিষ্ট স্থানে গাড়ি দাড়ানো নিয়ে আমরা একাধিক বার গাড়ির মালিকদের সাথে মিটিং করে তাদেরকে অনুরোধ করছি যাতে করে তারা সরকারের দেয়া নিদিষ্ট স্থানে গাড়ি থামায়। তারপরও যারা আইন অমান্য করছে তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করছি।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম এম মনজুরুল হক জানান, বিষয়টি আমি প্রথম শুনলাম। সামনের আইন-শৃঙ্খলার মিটিংয়ে আমি এই বিষয়ে কথা তুলবো এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দোষিদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিবো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ