Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বীমায় মানুষের আস্থা বেড়েছে -মেঘনা ইন্সুরেন্সের প্রধান নির্বাহী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ মে, ২০২১, ৫:২৮ পিএম

গত দশ বছরের সরকারের নীতি সহায়তার মাধ্যমে বীমাখাতের পরিধি বাড়ার সাথে সাথে বীমার প্রতি সাধারন মানুষের আস্থা বেড়েছে বলে মনে করেন একজন শীর্ষ নির্বাহী।

ইনকিলাবের সাথে সম্প্রতি এক আলাপচারিতায় দেশের বীমা খাতের প্রসার এবং নতুন বাস্তবতায় ঝুঁকি ব্যবস্থানপনায় করনীয় নিয়ে আলোকপাত করেছেন মেঘনা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক।

ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে ¯œাতকোত্তর এবং নর্থ সাউথ বিশ^বিদ্যালয় থেকে এমবিএ সম্পন্ন করা আবু বকর সিদ্দিক বাংলাদেশ ইন্সুরেন্স একাডেমী থেকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করে যুক্ত হয়েছেন দেশের আর্থিক খাতের ব্যবস্থাপনায়। ইন্সুরেন্স প্রতিষ্ঠানে নির্বাহী পর্যায়ে যোগ দেয়ার পূর্বে ১০ বছর শিক্ষকতা করেছেন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমীতে।

আবু বকর সিদ্দিকের মতে, বীমা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত জীবনের সুরক্ষার জন্য নয়, সম্পদ অবকাঠামোর আর্থিক নিরাপত্তায়ও বীমার গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের দেশে ‘সোর্স এবং ফোর্স’ ছাড়া সাধারনত: কেউ বীমা সেবা গ্রহন করে না। যেমন ব্যাংক থেকে লোন নিলে বাধ্য হয়ে বীমা করে। রাস্তায় গাড়ি চালাতে বীমার প্রয়োজন হয় এবং আমদানি রপ্তানীর ক্ষেত্রে নৌ বীমার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

দেশে বীমার অন্তর্ভূক্তি কম হবার পেছনের প্রধান কারন হিসেবে মেঘনা ইন্স্যুরেন্সের প্রধান নির্বাহী বলেন, সাধারনত: আমাদের অভ্যাস হল বিশেষ প্রয়োজন বা বাধ্যবাধকতা ছাড়া কোন কিছু করা হয় না। বীমার ক্ষেত্রে আমাদের পারস্পরিক আস্থার অভাব এবং শিক্ষা-দীক্ষাসহ যথাযথ জ্ঞানের অভাব রয়েছে। অনেকেই ইন্স্যুরেন্স বলতে ভাবে লাইফ ইন্স্যুরেন্স। অনেকেই জানেনা বীমার মাধ্যমে যেকোন শিল্প কলকারখানাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দুর্ঘটনাবশত: আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হলে ক্ষতিপূরন পেয়ে ঘুরে দাড়াতে পারে।

বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের বীমার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে আবু বকর সিদ্দিক বলেন, আমাদের দেশে নিজস্ব অর্থে পরিচালিত ব্যক্তি মালিকাকানাধীন প্রতিষ্ঠানাদির অধিকাংশই বীমার আওতায় নেই। যদি এই জায়াগাটিকে বীমার অন্তর্ভূক্তি বাড়ানো যায় তবে বীমা ব্যবসার অনেক অগ্রগতি হবে। আমাদের অনেকেরই বীমা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারনা নেই। এক্ষেত্রে আমাদের বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোরও দায়বদ্ধতা রয়েছে। বীমা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগ নেয়া দরকার।

আবু বকর সিদ্দিক এএমইই কনসালটেন্ট লিমিটেড এ তত্ত্বাবধায়ক কর্মকর্তা হিসেবে পেশা জীবন শুরু করেন এবং এরপর রাইফেল্স পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে অধ্যাপনা করেন। পরবর্তীতে ১৯৮৯ সালে বীমা জগতে তাঁর পেশাগত জীবন শুরু হয় প্রগতী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীতে যোগদানের মাধ্যমে।

তিনি বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমী থেকে ১৯৯৩ সালে বীমার উপর ডিপ্লোমা ডিগ্রী অর্জন করেন এবং প্রগতি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীতে প্রায় ১০ বছর চাকুরী শেষে তিনি বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমীতে অনুষদ সদস্য হিসেবে যোগদান করেন।

 

আবু বকর সিদ্দিক বলেন, বৈশি^ক মহামারি কোভিড-১৯ এর প্রভাবে বর্তমানের অর্থনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। এই বৈশি^ক মহামারির প্রভাব আমাদের বীমা শিল্পেও পড়েছে। তবে আশার কথা এই যে, নন-লাইফ বীমা শিল্পে এর প্রভাব অনেকটাই কম। ২০২০ সালে মেঘনা ইন্স্যুরেন্স বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৮০ শতাংশ পূরনে সক্ষম হয়েছে যেখানে প্রায় ২ মাস ব্যবসায়িক সকল কার্যক্রম বন্ধ ছিল। ২ মাস বন্ধ না থাকলে হয়ত শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা পূরন সম্ভব হত।

করোনাকালীন সময়ে ব্যবসা প্রসঙ্গে মেঘনা ইন্স্যুরেন্সের প্রধান নির্বাহী যোগ করে বলেন, আমরা ২০২০ সালে গ্রস প্রিমিয়াম আয় করেছি প্রায় ৬২ কোটি টাকা এতে অবলিখন মুনাফা হয়েছে ২ কোটি টাকা, মোট সম্পদ দাড়িয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা।

দেশের বীমা খাতের কর্তৃপক্ষের বিষয়ে আবু বকর সিদ্দিক বলেন, কর্তৃপক্ষকে মনে রাখতে হবে বীমা শিল্পের নিয়ন্ত্রনের পাশাপাশি উন্নয়নেও কাজ করতে হবে। কর্তৃপক্ষের জনবলের যথেষ্ট কমতি সত্বেও বর্তমান কর্তৃপক্ষ একজন সুযোগ্য ব্যক্তির নেতৃত্বে পরিচালিত হয়ে আসছে এবং কর্তৃপক্ষের সময়েচিত বিভিন্ন ইতিবাচক সিদ্ধান্তে আমরা ইতোমধ্যে সুফল পেতে শুরু করেছি।

নন-লাইফ বীমা সেক্টরকে এগিয়ে নেয়ার জন্য মেঘনা ইন্স্যুরেন্সের প্রধান নির্বাহীর পরামর্শ হলো সেলফ ফাইনান্সড প্রতিষ্ঠানসমূহের ক্ষেত্রেও ইন্স্যুরেন্স বাধ্যতামূলক করা উচিত এবং পাশাপাশি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীসমূহের উচিত গ্রাহক সেবার মান উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রাহকের আস্থা অর্জন করা। বীমার প্রতি জনসচেতনা বৃদ্ধিতে বর্তমান সরকার ইতোমধ্যে প্রচুর উদ্যোগ গ্রহন করেছে।

বর্তমানে সরকারী সাধারন বীমা কর্পোরেশন ছাড়াও আরো ৪৬টি বেসরকারী নন-লাইফ বীমা কোম্পানীতে প্রায় ত্রিশ হাজার জনবল বিভিন্ন বীমা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পদে কর্মরত আছেন।

এই প্রসংগে আবু বকর সিদ্দিক বলেন, বেকারত্ব দূরীকরনে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে বীমা প্রতিষ্ঠানসমূহ একটি বড় ভূমিকা পালন করছে। আমরা জানি বীমা কোম্পানির আহরিত প্রিমিয়ামের একটি বড় অংশ ব্যাংক সমূহে গচ্ছিত থাকে যা শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আলোচনায় আসা তৃতীয়পক্ষ মটর বীমা নিয়ে মেঘনা ইন্স্যুরেন্সের প্রধান নির্বাহীর বক্তব্য হলো, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আইন করে তৃতীয়পক্ষ মটর বীমা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর পিছনে যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত কারণ ও রয়েছে। যদিও কম্প্রিহেন্সিভ ইন্স্যুরেন্স থার্ড পার্টির ঝুঁকি বহন করে কিন্তু তা অত্যন্ত ব্যয়বহল। অপর দিকে আমরা জানি, প্রতি বছর ব্যবহারজনিত কারনে গাড়ির মূল্যের অবনতি ঘটে ফলে কমবেশী ১৫ বছরের অধিক ব্যবহৃত মটরযানের সাধারণত কম্প্রিহেন্সিভ মটর বীমা করা হয় না।

বীমা পেশায় আসার পেছনের কারন উল্লেখ করে আবু বকর সিদ্দিক বলেন, বীমার উপর পেশাগত শিক্ষা-প্রশিক্ষন নেওয়ার কারণে বীমার বি¯ৃÍতি/গুরুত্ব জেনে এ পেশায় এসে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। আর যখন জানতে পারলাম এ পেশায় আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানও এক সময় কাজ করেছেন। তাতে করে নিজেকে আরো সম্মানীত বোধ করছি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বীমা

৩১ মার্চ, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ