পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জাতীয় বীমা দিবস-২০২৩ নানা আয়োজনে গতকাল দেশব্যাপী পালিত হলো। ‘আমার জীবন আমার সম্পদ, বীমা থাকলে নিরাপদ’ এ প্রতিপাদ্যে পালিত হয় দিবসটি। অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক বিভাগ ও বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু ইন্সুরেন্স কোম্পানীতে বসে ঐতিহাসিক ৬ দফা প্রণয়ন করেন। কাজেই দেশের স্বাধীনতায় ইন্সুরেন্সের অবদান রয়েছে।’ ইন্সুরেন্স কোম্পানী নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্য দিয়েছেন অথচ আস্থাহীনতার কারণে দেশের অর্থনীতিতে বীমা খাতের অবদান এক শতাংশের নিচে। পরিকল্পিত দুর্ঘটনা ঘটিয়ে কেউ কেউ বীমার টাকা তুলে নিয়ে এখনো অভিযোগ রয়েছে গ্রাহকের ৬৫০০ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৮১ বীমা কোম্পানি।
বিশ^ব্যাপী বীমা একটি জনপ্রিয় খাত। বীমা খাত একটি দেশের অর্থনীতিতে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় বড় ভূমিকা রাখে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে যখন মানুষ বীমা ছাড়া তাদের জীবন ভাবতেই পারে না, সেখানে বাংলাদেশ এখনও অনেকটা পিছিয়ে। যদিও বাংলাদেশের মতো দেশে বীমার সম্ভাবনা অনেক বেশি। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে ১৯৭৩ সাল থেকে বীমা কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর ৫০ বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু নীতিগত দুর্বলতা, আস্থাহীনতা, নিয়ন্ত্রণ সংস্থার দায়িত্বশীলদের অনিয়ম-দুনীতি, গ্রাহকদের প্রিমিয়ামের টাকা জমা না হওয়া, তামাদি বিষয়ে অসচেতনতা, বীমা দাবি প্রদানে দীর্ঘসূত্রিতা, অন্যান্য সেবাদানে ত্রুটি, দক্ষ কর্মীর অভাব ও জনসচেতনতাসহ নানাবিধ কারণে দেশে আজও অবহেলিত বীমা শিল্প।
এমনকি অবস্থা এত খারাপ যে, সংশ্লিষ্টদের অনেকের মতে, এই খাতের সঙ্গে জড়িতদের ইন্স্যুরেন্স করার কারণে ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দিতে পারছে না। যদিও দেশে বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের বীমার আওতায় আছে প্রায় দুই কোটি মানুষ। সাধারণ বীমা ও জীবন বীমা কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বাধীনতার পর শুরু হওয়া বীমা খাতে এখন সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে ৮১টি কোম্পানি সক্রিয় আছে। এর মধ্যে জীবন বীমা নিয়ে কাজ করা কোম্পানির সংখ্যা ৩৫টি আর সাধারণ বীমা নিয়ে কাজ করে আরও ৪৬টি প্রতিষ্ঠান। ২০২৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা দেখছে; কিন্তু বাংলাদেশের বীমা শিল্প এখনো অনুন্নত অবস্থায় রয়েছে। পাশাপাশি নিয়ন্ত্রক সংস্থার নানাবিধ অনিয়ম-দুনীতিতে ইমেজ সঙ্কটে রয়েছে খাতটি। যে কারণে বীমার ওপর সাধারণ মানুষ আস্থা রাখতে পারছেন না। ফলে বৈশ্বিক বীমা শিল্পের তুলনায় বাংলাদেশের বীমা শিল্প খুবই নগণ্য।
আইডিআরএ তথ্য মতে, দেশের বীমা খাতে জীবন ও সাধারণ বীমা কোম্পানির সংখ্যা ৮১টি। এ কোম্পানিগুলোতে গ্রাহকদের বীমার সংখ্যা রয়েছে ৮৮ লাখ ৬৮ হাজার ৪৩৬টি। অথচ ২০২১ সালেও বীমা সংখ্যা ছিল ৯৪ লাখ ২৩ হাজার ৪৬৫টিতে। অর্থাৎ ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে ৬ লাখ বীমা কমেছে। সাড়ে ১৭ কোটি মানুষ ও দেশের সম্পদের মাত্র ৮৮ লাখ বীমা রয়েছে। যা সম্পদ ও জনসংখ্যার দিক থেকে অতি সামান্য। ২০২২ সালে মোট ৩০ লাখ ৬২ হাজার ৪৬৮টি বীমা দাবি ছিল গ্রাহকদের। এ গ্রাহকদের বীমার টাকার পরিমাণ ছিল ১৬ হাজার ৮২০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৯ লাখ ১২ হাজার ৮৬৯টি বীমার মোট ১০ হাজার ২৬০ কোটি ৩৮ লাখ টাকার বীমা দাবি পরিশোধ হয়েছে। অর্থাৎ ২০২২ সালে গ্রাহকদের ১১ লাখ ৪৯ হাজার ৫৯৯টি বীমা দাবির ৬ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৮১টি বীমা কোম্পানিগুলো। বীমা দাবি পরিশোধ না করায় প্রতিনিয়তই নতুন বীমার সংখ্যা কমছে। ২০২০ সালে দেশে বীমা সংখ্যা ছিল ৯৬ লাখ ৫৪ হাজার। যা গত দুই বছরে সেখান থেকে ৮ লাখ কমে ৮৮ লাখে দাঁড়িয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের বীমা শিল্পে প্রচলিত বীমা সম্পর্কে জনগণের আস্থাহীনতা ও সচেতনতার অভাব আছে। গ্রাহক সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা থাকায় জনগণের দোরগোড়ায় সহজে বীমা সেবা পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে বীমা সম্পর্কে জনগণের মধ্যে আস্থা সৃষ্টিতে বীমা আইনের যথাযথ অনুসরণ, যথাসময়ে বীমা দাবি নিষ্পত্তি করা ও বীমা খাতকে পুরোপুরি ডিজিটাল সেবার আওতায় আনা প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা।
অর্থনীতিতে বীমা খাতকে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে এতে সাধারণ মানুষের ‘আস্থার সংকট’ কাটানোর তাগিদ দিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীমউল্লাহ। এক্ষেত্রে বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, কী কারণে সঙ্কট, তা চিহ্নিত করতে হবে। ১০০ জন গ্রাহকের মধ্যে ৯৯ জনকে সন্তুষ্ট করতে পারলেও একজনকে যদি সন্তুষ্ট করা না যায় উনি তার বিষয়টি প্রচার করবেন; কোম্পানির বদনাম করবেন। যাতে করে ৯৯ জনের ভালো কাজের কোন দাম থাকবে না। খাতটিকে সংবেদনশীল বর্ণনা করে তিনি বলেন, বীমাখাত এমন একটি খাত যেখানে ৯৯ পয়েন্ট ৯৯ পেলেও হবে না; ১০০ তে ১০০ পেতে হবে। লাইফ ও নন-লাইফ, এই দুই ধরনের বীমা রয়েছে উল্লেখ করে সলীমউল্লাহ বলেন, আইনি বাধ্যবাধকতা থাকায় নন-লাইফ বীমা করতে অনেকে বাধ্য হন। কিন্তু জীবনবীমার জন্য আইনি কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এজন্য এই খাতে মানুষ আসছে না।
বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট শেখ কবীর হোসেন বলেন, বীমাখাতে আস্থার সঙ্কট আছে এটা আমরা অস্বীকার করতে পারি না। একবার একসভায় বীমা কোম্পানির একজন বললেন, আমাদের অবস্থা এত খারাপ হয়েছে যে, আমাদের ছেলে-মেয়েদের বিয়ে হচ্ছে না, কারণ আমরা ইন্স্যুরেন্স করি। অতীতে এ সঙ্কট ছিল না দাবি করে এ খাতের ঐতিহ্য ফেরাতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান বীমা সংস্থার এ নেতা। খাতের সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন জানিয়ে কবীর হোসেন বলেন, সার্ভেয়ারদের মধ্যে গলদ আছে, একেক জন একেক প্রতিবেদন দেন। এজেন্টরা গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা তুলছে। কিছু জমা দেয়, আর কিছু মেরে দেয়। কিন্তু গ্রাহক তো মনে করছে সে তার টাকা পরিশোধ করেছেন। এগুলো বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে বীমাখাতের ঐতিহ্য ফেরাতে শুধু আইন প্রণয়ন দিয়ে কিছু হবে না, তা পালনের মানসিকতার বিষয়টিও থাকতে হবে। ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ ফোরাম এফবিসিসিআই সদস্য খালেদ এম হোসাইন রানা অভিযোগ করে বলেছেন, জীবন বীমা (রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান) ও বেসরকারি মানসম্পন্ন কয়েকটি কোম্পানি ছাড়া সব প্রতিষ্ঠান কিস্তি নিয়ে হয়রানি করেন। তাই এ খাতের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা রয়েছে।
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী এ খাতের সঙ্কটের বিষয়ে বলেছেন, একজন গ্রাহক যদি তার প্রিমিয়ামের টাকা সঠিক সময়ে ফেরত না পায়, প্রিমিয়াম নিয়ে যদি পকেটে রেখে দেয়া হয়, গ্রাহককে হয়রানি করা হয় তাহলে এই ব্যবসা ধ্বংস হয়ে যাবে। এ ধরনের বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিয়মিত ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করেন জয়নুল বারী। তিনি বলেন, বীমাখাত একটি টেকনিক্যাল বিষয়; বোঝা সহজ নয়। এজন্য বীমার বিষয়টি সাধারণ শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।