Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মেঘনায় অবাধে চলছে গলদা চিংড়ি পোনা আহরণ

আমানত উল্যাহ ও কাজী মো. ইউনুছ, মেঘনা উপকূল থেকে | প্রকাশের সময় : ২৩ মে, ২০২১, ১২:০১ এএম

সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মেঘনা নদীর উপকূলীয় এলাকায় অবাধে চলছে গলদা চিংড়ি ধরার উৎসব। এতে ধ্বংস হচ্ছে নদী ও সামুদ্রিক বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা। আর অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়েছে গলদা ও ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এতে করে নষ্ট হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রভাব দেখিয়ে এক শ্রেণির অসাধু মৎস্যজীবী প্রকাশ্যে গলদা চিংড়ি পোনা আহরণ ও বিক্রি করলেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন।
২০০০ সাল থেকে দেশের উপকূলীয় এলাকায় চিংড়ি পোনা আহরণ নিষিদ্ধ করে সরকার। সেই থেকে উপকূলীয় এলাকায় সারা বছর গলদা চিংড়ি পোনা আহরণ নিষিদ্ধ থাকলেও সে নিষেধাজ্ঞা মানছে না কেউ। মৎস্য কর্মকর্তার নজরধারীর অভাবে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কমলনগরের মতিরহাট, সাহেবেরহাট ও রামগতি উপজেলার টাংকির ঘাট, চরগজারিয়াসহ মেঘনা নদীর বিস্তৃর্ণ উপকূল এলাকাজুড়ে অবাধে চলছে গলদা চিংড়ি পোনা ধরার উৎসব। এ পোনা অতি ক্ষুদ্র হওয়ায় তা ধরতে যে জাল ব্যবহার করা হয়, তাতে ধ্বংস হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতের মাছের পোনাও।
সরেজমিনে দেখা যায় বিভিন্ন বয়সের শিশু কিশোরসহ মৎস্যজীবীরা এ পোনা ধরার উৎসবে নেমেছে। এপ্রিল-জুন এ তিন মাস লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি ও কমলনগর উপজেলার মেঘনা নদীর উপকূলীয় অঞ্চলে গলদাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের রেণু অবস্থান করে এবং জোয়ারের সঙ্গে এসব রেণু পোনা নদীর পাড়ে চলে আসে। আর এ সুযোগে অসাধু এক শ্রেণির মৎস্যজীবী জেলেরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় গলদা চিংড়ি পোনা ধরতে গিয়ে নদী ও সামুদ্রিক প্রজাতের বিভিন্ন পোনা নিধন করছেন। এতে ধ্বংস হচ্ছে প্রায় তিন শতাধিক নদী ও সামুদ্রিক প্রজাতির রেণু পোনা।
পোনা শিকারিরা জানান, বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় এবং সরকারি সাহায্য না পাওয়ায় পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে এই পেশাটি বেচে নিয়েছে তারা। উপজেলার সাহেবেরহাট এলাকার মৎস্যজীবী ফারুক জানান, ছেলে মেয়েদের খাবার জোগাতে তারা নিষেধ থাকা সত্ত্বেও গলদা চিংড়ি পোনা ধরছে। একই উপজেলার কটরিয়া ও তালতলি ঘাট এলাকার কামরুল, আলাউদ্দিন ও শফিকসহ কয়েকজন জেলের ভাষ্য, আমরা নদীভাঙা মানুষ, বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আমরা এ সময় গলদা চিংড়ি না ধরলে খামু কেমনে? জীবন বাঁচাতে আমাদের ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে নদীতে নামছে।
স্থানীয়রা জানান, বাজারে প্রতিটি গলদা চিংড়ি পোনা বিক্রি হচ্ছে ২ থেকে আড়াই টাকা ধরে। মহাজনরা অগ্রিম ঋণ দিয়ে এসব জেলেদের পোনা শিকারে উৎসাহী করে তুলছেন। অর্থের লোভ দেখিয়ে প্রভাবশালী মৎস্য ব্যবসায়ীরা শিশু কিশোরদেরও ব্যবহার করছে এ কাজে। স্থানীয়দের অভিযোগ, পোনা নিধন ও পরিবহনে গড়ে উঠেছে নদীর তীরে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। আর এতে করে বিলুপ্ত হতে চলেছে বিভিন্ন প্রজাতের মাছের পোনা। প্রভাবশালী হওয়ায় এ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস পান না বলেও জানান স্থানীয়রা।
রামগতি উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দীন বলেন, এ বিষয়ে আমরা নিয়মিত খোঁজ খবর রেখেছি। নিয়মিত টহল দেয়া হচ্ছে। খবর পেলেই আমরা ঐসব স্থানে অভিযান চালাচ্ছি।
কমলনগর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল কুদ্দুস বলেন, গলদা ও চিংড়ি পোনা নিধনের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ভাইস চেয়ারম্যান সাগরের সাথে আমার যোগসাজশের অভিযোগটি সঠিক নয় বলে দাবি করেন তিনি।
এদিকে অবাধে গলদা পোনা ধরার কথা স্বীকার করে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন জানান, এক শ্রেণির অসাধু মৎস্য ব্যবসায়ীদের কারণে নদী থেকে পোনা ধরা বন্ধ করা যাচ্ছে না।
পোনা আহরণ বন্ধে প্রয়োজনে অভিযান আরও জোরদার করা হবে। কমলনগর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখবেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ