পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গত বছর বোরো ও আমন মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। এতে বর্তমানে খাদ্য নিরাপত্তা অনেকটা হুমকির মুখে। গত বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে সরকার এবার ধান-চালের মূল্য কিছুটা বাড়িয়ে বোরো সংগ্রহে মাঠে নেমেছে। তবে ধান সংগ্রহে সরকার ‘কৃষকের অ্যাপে’ এ নিবন্ধনের যে পদ্ধতি চালু করেছে তাতে কৃষকের কোনো আগ্রহ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এতে চলতি মৌসুমেও বোরো সংগ্রহে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের ব্যাপারে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চলতি বোরো মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে সরকার মোট ১৮ লাখ টন ধান ও চাল সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে মিলারদের কাছ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে ১০ লাখ টন সিদ্ধ চাল, ৩৯ টাকা কেজি দরে দেড় লাখ টন আতপ চাল এবং কৃষকদের কাছ থেকে ২৭ টাকা কেজি দরে সাড়ে ছয় লাখ টন ধান কেনার সিদ্ধান্ত হয়। গত ২৮ এপ্রিল থেকে ধান কেনা শুরু হয়েছে। ৭ মে থেকে শুরু হয় চাল সংগ্রহ। বোরো ধান ও চাল সংগ্রহ কার্যক্রম চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত।
২৭ টাকা কেজি অর্থাৎ ১ হাজার ৮০ টাকা মণ ধরে সরকার কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনা শুরু করলেও যে পদ্ধতিতে ধান কেনা হচ্ছে তাতে কৃষক খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছে না। প্রতিটি উপজেলায় দেড় থেকে দুই হাজার মেট্রিক টন ধান কেনার লক্ষমাত্রা সরকারের। সে হিসাবে কমপক্ষে বিশ থেকে ত্রিশ হাজার কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনতে হবে। কিন্তু বিভিন্ন উপজেলায় ‘কৃষকের অ্যাপে’ এখন পর্যন্ত মাত্র এক থেকে দেড় হাজার কৃষক নাম নিবন্ধন করেছেন। সরকার মাইকিং করে, লিফলেট বিতরণ করেও অ্যাপে নিবদ্ধনের বিষয়ে কৃষকদের আকৃষ্ট করতে পারছে না। যদিও পাইলটিং পর্যায়ের এ পদ্ধতিতে নিবন্ধন না হলেও সরকারের কাছে সরাসরি ধান বিক্রি করা যাবে বলে জানিয়েছে খাদ্য অধিদফতর।
গত ১ এপ্রিল থেকে চাঁদপুর সদর, কচুয়া, ফরিদগঞ্জ ও শাহরাস্তি-এ চার উপজেলায় কৃষক অ্যাপের মাধ্যমে ধান বিক্রিতে আগ্রহীদের নিবন্ধন শুরু হয়। নিবন্ধনের শেষ দিন ১০ মে পর্যন্ত চার উপজেলায় মাত্র তিন হাজার তিনজন কৃষক নিবন্ধন করেছেন। বোরো চাষি এবং ধান থাকা সত্তে¡ও অনেক কৃষক অ্যাপে নিবন্ধন করতে যাননি। ফলে সরকারের কাছে ধান বিক্রিতে বিড়ম্বনায় পড়ার শঙ্কায় রয়েছেন তারা। অনেকে বলছেন, কৃষক অ্যাপ সম্পর্কে তারা কিছুই জানেন না। চাঁদপুরের মতো, ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জসহ অন্যান্য জেলাগুলোতেও একই অবস্থা। অ্যাপে নিবন্ধন করতে কৃষকরা আগ্রহী হচ্ছেন না। ফলে এ পদ্ধতিতে সরকার ধান সংগ্রহ করলে লক্ষ্যমাত্রার শতকরা দশ ভাগও পূরণ হবে না।
অ্যাপে নিবন্ধন না করে কৃষক স্থানীয় বাজারের ব্যাপারিদের কাছে ভিজা ধান ৮৫০ টাকা থেকে ৯০০ টাকা মণ ধরে বিক্রি করছেন। কোথাও কোথাও স্থানীয় বাজারে ৭শ’ থেকে সাড়ে ৭শ’ টাকা মণ ধরেও ধান বিক্রি হচ্ছে। অনেকে বলছেন, সরকারের কাছে বিক্রি করতে পারলে ১০৮০ টাকা মণ ধরে বিক্রি করা যেত। এতে প্রায় দুইশ’ থেকে তিনশ’ টাকা বেশি পাওয়া যেত। কিন্তু এত ঝক্কি ঝামেলা করে ধান বিক্রি করতে কেউ যেতে চায় না।
তবে কোভিড-১৯ মহামারি, লকডাউন, বাজারে ধান-চালের অস্বাভাবিক দামসহ সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বোরো ধান ও চাল সংগ্রহের ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকে চ্যালেঞ্জ মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত বছর বোরোতে এবং আমনে সরকারের ধান-চাল সংগ্রহ কর্মসূচি ব্যর্থ হয়। খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগের অভিজ্ঞতার আলোকে এবার বোরো সংগ্রহ কর্মসূচি সফল করতে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
খাদ্য সচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, বিগত দু-মৌসুমের অভিজ্ঞতা রয়েছে আমাদের, লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যায়নি। বাজারমূল্যটা বেশি ছিল, আমরা কম ঘোষণা দিয়ে ধান চাল কিনতে পারিনি। আমরা আশা করি, এবার ভালো দাম দিতে পারছি, ইনশাআল্লাহ আমরা সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করব। মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি সবারই আমরা সহযোগিতা চাইছি, আমরা মিটিং করে যাচ্ছি। আশা করি, আমরা লক্ষ্য অর্জন করতে পারব। আমাদের মজুদটা বাড়াতে পারব।
গত আমন মৌসুমে দুই লাখ টন ধান, ছয় লাখ টন সিদ্ধ চাল ও ৫০ হাজার টন আতপ চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করা হয় প্রতিকেজি আমন ধান ২৬ টাকা, চাল ৩৭ টাকা ও আতপ চাল ৩৬ টাকা।
গত বছরের ৭ নভেম্বর থেকে সংগ্রহ শুরু হয়। ধান-চাল কেনার তারিখ নির্ধারিত ছিল চলতি বছরের ২৮ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত। পরে তা বাড়িয়ে ১৫ মার্চ পর্যন্ত করা হয়। আমনে দুই লাখ টন ধানের বিপরীতে মাত্র ১২ হাজার ৩৪২ টন সংগ্রহ করা হয়। ছয় লাখ টন সিদ্ধ চালের বিপরীতে ৭০ হাজার ১৩৬ টন এবং ৫০ হাজার টন আতপ চালের বিপরীতে চার হাজার ৮৬৩ টন সংগ্রহ করা সম্ভব হয়।
গত বছর বোরোতে ১০ লাখ টন ধান, ১০ লাখ টন সিদ্ধ চাল ও দেড় লাখ টন আতপ চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ২৬ টাকা কেজি দরে ধান, ৩৬ টাকা কেজি দরে সিদ্ধ চাল এবং ৩৫ টাকা কেজি দরে আতপ চাল কেনার সিদ্ধান্ত হয়। গত বছরের ২৬ এপ্রিল থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বোরো সংগ্রহ কার্যক্রম চলে। ওই সময়ে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে দুই লাখ ১৯ হাজার টন ধান, ছয় লাখ ৬৭ হাজার ৮৯০ টন সিদ্ধ চাল এবং ৯৯ হাজার ১২৩ টন আতপ চাল কিনতে সক্ষম হয় খাদ্য অধিদফতর।
গত বোরো ও আমন মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহে সরকারের খাদ্য বিভাগ ব্যর্থ হওয়ায় মজুদ তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। এই মজুদ নিয়ে সরকারের মন্ত্রীরাই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। গত ২২ এপ্রিল খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভায় এক মন্ত্রী বর্তমান মজুদকে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য খুবই উদ্বেগজনক উল্লেখ করে দ্রæত মজুদ বৃদ্ধির তাগিদ দেন।
সর্বশেষ গত ২৬ এপ্রিলের খাদ্যশস্যের মোট মজুদের পরিমাণ ছিল পাঁচ লাখ টনের মতো। এর মধ্যে চাল তিন লাখ টন এবং গম দুই লাখ টন। খাদ্যশস্যের মজুদ কমপক্ষে ১০ লাখ টন থাকা উচিত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।