পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রশাসনের কর্মরত কিছু ভারতপ্রেমী আমলা করোনাভাইরাসের টিকা কার্যক্রমে বাংলাদেশকে পেছনের সারিতে ফেলে দিয়েছেন। টিকা সংগ্রহে শুধু ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কভিশিল্ড টিকার ওপর নির্ভরশীল হওয়ার খেসারত এখন দিতে হচ্ছে জাতিকে। বাংলাদেশের সেরামের টিকার পরিবেশক বেক্সিকোর কাছে সেরাম অগ্রিম টাকা নিলেও মোদি সরকার বাংলাদেশে টিকা রফতানির চালান আটকে দিয়েছেন। এ অবস্থায় বাংলাদেশের জন্য অন্য উৎস থেকে ‘টিকা’ সংগ্রহ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
এ অবস্থায় সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়া থেকে টিকা সংগ্রহ করতে উদ্যোগ নিয়েছে। চীন ও রাশিয়া থেকে টিকা যাতে বাংলাদেশ অতিসহজে না পায়, সে লক্ষ্যে নেপথ্যে দিল্লি অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কারণ ভূরাজনৈতিক এবং এশিয়ার রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার কারণে চীন থেকে বাংলাদেশের টিকা সংগ্রহ ভারত ভালো চোখে দেখছে না। ফলে চীন ও রাশিয়া থেকে বাংলাদেশ যে টিকা সংগ্রহ করার উদ্যোগ নিয়েছে, তার সবকিছু অতি গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, রাশিয়ার সাথে টিকার চুক্তির প্রক্রিয়া করছি, চায়নার সাথে টিকার চুক্তি প্রক্রিয়া করছি। সেগুলো নন ডিসক্লোজার আইটেম। রাষ্ট্রীয়ভাবে আমরা চুক্তির খসরার শর্তগুলো গোপনে রাখব। এগুলো প্রকাশ হলে রাষ্ট্রের বিরাট ক্ষতি হবে। সেই গোপন ফাইলগুলো যদি বাইরে চলে যায়, তাহলে রাষ্ট্রীয়ভাবে আমাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা হবে। আমরা চীন ও রাশিয়া থেকে টিকা নাও পেতে পারি। এতে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য বিরাট ক্ষতি হতে পারে।
জানতে চাইলে একাধিক সাবেক কূটনীতিক বলেছেন, দু’দেশের মধ্যে কোনো বিশেষ চুক্তি হলে সেগুলো গোপন রাখা অপরিহার্য। ভারতের সঙ্গে চীনের সাপে নেউলে সম্পর্ক। এ অবস্থায় চীন থেকে টিকা ক্রয়ের জন্য চুক্তিনামা বা চুক্তির খসড়া যদি ভারতের হাতে যায়, তাহলে চীন বাংলাদেশকে টিকা নাও দিতে পারে। চীন কার্যত ব্যবসার ওপর জোর দেয়; কোনো দেশের রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামায় না। কিন্তু ঢাকায় কর্মরত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং জানিয়ে দিয়েছেন, ‘বাংলাদেশ কোয়াডে গেলে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হবে’। কোয়াড হলোÑ আমেরিকা, অষ্ট্রেলিয়া, ভারত ও জাপানের জোট। এ মুহূর্তে চীন বা রাশিয়ার সঙ্গে টিকা সংক্রান্ত কোনো গোপন চুক্তির নথি যদি প্রকাশ পায়, তাহলে ভারত লাভবান হবে; টিকা নিয়ে অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে বাংলাদেশ।
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাশের দেশ নেপালে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। গতকালও ভারতে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ করোনাভাইরাসে প্রাণ হারিয়েছে। বাংলাদেশের সীমান্ত রাজ্য পশ্চিমবঙ্গেও করোনাভাইরাস ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এখন করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ঠেকিয়ে রাখা এবং টিকা কার্যক্রম জোরদার করা, বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে এর মধ্যেই সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ভারত সরকার সেরামের টিকার চালান আটকে দেয়ায় বাংলাদেশ সরকার অন্য তিন উৎস চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে টিকা সংগ্রহের জোর চেষ্টা চালাচ্ছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা, চীনের সিনোফার্ম, রাশিয়ার স্পুতনিক-ভি টিকা অন্যতম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে টিকা সংগ্রহের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়েছে। রাশিয়া ও চীনের কাছ থেকে টিকা সংগ্রহের উদ্যোগ সফল হওয়ার পথে। ওই দুই দেশে থেকে বাংলাদেশ টিকা পাচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। দেশে টিকার চাহিদা বেশি হওয়ায় রাশিয়ার টিকা দেশেই উৎপাদনের জন্য দেশিও কোম্পানি ইনসেপ্টা, পপুলার ও হেলথ কেয়ার ইতোমধ্যেই সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলাদেশের করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি ইনসেপ্টা রাশিয়ার স্পুতনিক-ভি টিকা তৈরি করতে পারবে বলেও মতামত দিয়েছে।
ভারতের মোদি সরকার সেরামের টিকা রফতানি বন্ধ করে দেয়ার পর বাংলাদেশ, আমেরিকা, রাশিয়া ও চীন থেকে টিকা আনার জোর চেষ্টা চালাচ্ছে। অথচ ভূরাজনীতিতে এই তিন দেশের অবস্থান পরস্পরবিরোধী। চীন বা রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সুনজরে দেখছে না। একইভাবে উন্নয়ন সহযোগী চীন থেকে টিকা বাংলাদেশের ক্রয় ভালোভাবে নিচ্ছে না দিল্লির সাউথ ব্লক। কারণ চীনের সঙ্গে ভারতের সাপে নেউলে সম্পর্ক। চীন অর্থনৈতিকভাবে বিশ্বের অন্যতম দেশ হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা নিয়ে ভারত দেশটিকে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। এ জন্য দিল্লির সাউথ ব্লক দেশের কিছু আমলাকে কাজে লাগাচ্ছে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ২০২০ সালের ২৭ আগস্ট চীনা কোম্পানির তৈরি টিকা ট্রায়ালের সম্মতি দিয়েছিল বাংলাদেশ। ওই বছরের ২০ আগস্ট ‘করোনাভাইরাসের টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল বাংলাদেশে হওয়া উচিত’ জানিয়ে বিবৃতি দেয় বাংলাদেশের করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। অতঃপর একটি সেমিনারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ঘোষণা দেন, ‘বাংলাদেশে আমরা চীনের টিকা ট্রায়াল চালাতে দেব’। এনিয়ে মিডিয়ায় ফলাও করে খবর প্রচারের পর হঠাৎ প্রশাসনের দায়িত্বশীল আমলাদের কয়েকজন চীনের টিকা ট্রায়াল চালানোর সিদ্ধান্ত ভণ্ডুল করে দেন। মূলত ভারত অখুশি হবে, এ বিবেচনায় তখন চীনের টিকা ট্রায়াল নাকচ করে দেওয়া হয়। বলা হয় চীনের টিকার ট্রায়াল চালানোর মতো অর্থ বাংলাদেশের নেই। অতঃপর ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত টিকা ক্রয়ের পরামর্শ দেন। টিকা ক্রয়ে সেরাম, বাংলাদেশ সরকার ও বেক্সিমকোর মধ্যে ত্রিপক্ষিয় চুক্তি হওয়ার পর ওই আমলারা আনন্দে ডগমগ করেন। তারা ভারতের ওপর এতোই নির্ভরশীল ছিলেন যে, অন্য কোনো উৎস থেকে টিকা ক্রয়ের চেষ্টার প্রয়োজন বোধ করেনি। দিল্লির তাঁবেদার ওই আমলাদের বোকামির খেসারত এখন দেশের জনগণকে দিতে হচ্ছে।
এদিকে চীন ইতোমধ্যেই সিনোভ্যাকের ‘সিনোর্ফাম’ টিকা ৫ লাখ ডোজ বাংলাদেশকে উপহার দিয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে ৪ থেকে ৫ কোটি ডোজ টিকা ক্রয়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারের দায়িত্বশীলদের কথাবার্তায় পরিষ্কার বাংলাদেশ সরকার রাশিয়া ও চীনের করোনা টিকা পাচ্ছে। এ অবস্থায় চীনের টিকা বাংলাদেশের ক্রয়ের উদ্যোগে বাগড়া দিতে পর্দার আড়াল থেকে খেলছে ভারত। ভারত সেরামের টিকা আগামী অক্টোবর মাসের আগে বাংলাদেশকে দিতে পারবে না; আবার বাংলাদেশকে চীন থেকে টিকা ক্রয়ে নিরুসাহিত করছে। প্রশাসনে কর্মরত কিছু দিল্লিপ্রেমী আমলার চীন বিরোধিতা ও ভারতের প্রতি আনুগত্যের প্রমাণ মেলে ঢাকায় কর্মরত চীনের রাষ্ট্রদূতের কথা ও রাশিয়ার কাছে টিকা ক্রয়ের খসড়ায় তথাকথিত শর্তগুলো ফলাও করে প্রকাশ করা থেকে। গত ১৮ এপ্রিল ডিপ্লোমেটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের (ডিক্যাব) সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, ‘টিকা উপহার দেওয়ার জন্য চীন যোগাযোগ করেছিল চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার টিকার জরুরি অনুমোদনের সময় নিয়েছে প্রায় ৩ মাস’। আবার রাশিয়ার সঙ্গে টিকা ক্রয় সংক্রান্ত খসড়ায় দেশের স্বার্থবিরোধী ১০ থেকে ১৫টি শর্ত রয়েছে বলে প্রকাশ করা হয়। এতে বোঝা যায়, পর্দার আড়ালে চীন ও রাশিয়ার টিকা ক্রয়ে জটিলতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চলছে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘দুর্নীতিবিরাধী সংবাদ প্রকাশে সরকার গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর দমন পীড়ন চালাচ্ছে একথা ঠিক নয়। অফিসিয়াল সিক্রেটস অনুযায়ী তথ্য চুরি করা ঠিক হয়নি। তবে মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তা সাংবাদিকের সঙ্গে খারাপ আচরণ করলে তদন্ত স্বাপেক্ষে তার বিচার হবে।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।