দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
আজ পুরো পৃথিবীতে মুসলিমরা মজলুম। মজলুমদের আর্তনাদে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে গেছে। এমন কোনো দেশ খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে তারা নিরাপদ। তবে মজলুমদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই, কারণ আল্লাহ তায়ালা জালিমকে ছাড় দেন, বিলম্বিত করেন তাঁর শাস্তি ;কিন্তু একেবারে ছেড়ে দেন না।
জুলুম এমন একটি অপরাধ যার শাস্তি দুনিয়াতেই শুরু হয়ে যায়। তা ছাড়া পরকালের শাস্তি তো আছেই।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,›আমি কারূন, ফেরাউন ও হামানকে ধ্বংস করেছিলাম। মূসা তাদের কাছে উজ্জ্বল নিদর্শন নিয়ে এসেছিলো, কিন্তু তারা ভূমিতে দম্ভ করলো, তারা আমার শাস্তি এড়াতে পারেনি। তাদের প্রত্যেককেই আমি তার পাপের কারণে পাকড়াও করেছিলাম; তাদের কারো প্রতি প্রেরণ করেছি প্রস্তরসহ প্রচন্ড বাতাস, কাউকে আঘাত করেছিলো মহানাদ, কাউকে আমি ধসিয়ে দিয়েছিলাম ভূগর্ভে এবং কাউকে করেছিলাম নিমজ্জিত। আল্লাহ তাদের প্রতি কোনো জুলুম করেননি; বরং তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি জুলুম করেছিলো›।( সূরা আনকাবুত: ৩৯-৪০)
এই হলো ইহকালিন শাস্তি । পরকালে ও তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। যেমন ইরশাদ হয়েছে,›বলুন! তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে সত্য এসে গেছে। এখন যার ইচ্ছা ঈমান আনুক এবং যার ইচ্ছা কুফরি করুক। আমি জালেমদের জন্য আগুন প্রস্তুত করে রেখেছি, যার প্রাচীর তাদেরকে বেষ্টন করে রাখবে। তারা পানি চাইলে তাদেরকে পুঁজের ন্যায় পানীয় দেয়া হবে, যা তাদের চেহারা দগ্ধ করবে । কতই না মন্দ সে পানীয় এবং কতই না নিকৃষ্ট বিশ্রামস্থল!’ (সূরা কাহাফ : ২৯)
আল্লাহ তায়ালা যেমনি বান্দার জন্য জুলুমকে নিষিদ্ধ করেছেন তেমনি নিজের জন্য ও হারাম করে দিয়েছেন, হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
হে আমার বান্দারা! আমি আমার নিজ সত্তার উপর অত্যাচারকে হারাম করে নিয়েছি এবং তোমাদের মধ্যেও তা হারাম বলে ঘোষণা করছি। অতএব তোমরা একে অপরের উপর অত্যাচার করো না›। (সহিহ মুসলিম :৬৪৬৬)
মজলুমের দোয়া আল্লাহর দরবারে সরাসরি কবুল হয়ে যায়। তাই মজলুমের দোয়াকে ভয় করতে বলা হয়েছে। প্রিয়নবী সা. হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রা.কে নসিহত করতে গিয়ে বলেন,তুমি মজলুমের বদদোয়াকে ভয় করো। কেননা তার (বদদোয়া) মাঝে এবং আল্লাহর মাঝে কোনো পর্দা থাকে না। (সহিহ বুখারি : ১৪৯৬)
যুগে যুগে আল্লাহ তায়ালা জালিমদেরকে নানারকম শাস্তি দিয়েছেন।
নিচে পৃথিবীর কয়েকজন ক্ষমতাধর জালিমদের পরণতির কথা তুলে ধরা হলো -
নমরুদ ও তার পরিণতি :
পৃথিবীর ইতিহাসে আল্লাহর সঙ্গে প্রথম ধৃষ্টতা প্রদর্শনকারী ও নিজ সম্প্রদায়ের প্রতি চরম অত্যাচারী হিসেবে পরিচিত ছিলো নমরুদ। সে আল্লাহকে নিঃশেষ করার জন্য আসমান অভিমুখে টাওয়ার নির্মাণ করেছিলো। পৃথিবীতে তার ঔদ্ধত্য চরম পর্যায়ে পৌছে ছিলো। অবশেষে আল্লাহ তায়ালা তাকে মাত্র একটি মশা দিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে তার হঠকারিতা সম্পর্কে ইরশাদ হচ্ছে,
তুমি কি ওই ব্যক্তির অবস্থা চিন্তা করোনি, যাকে আল্লাহ রাজত্ব দান করার কারণে সে নিজ প্রতিপালকের (অস্তিত্ব) সম্পর্কে ইবরাহীমের সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হয়? যখন ইবরাহীম বললো, তিনি আমার প্রতিপালক যিনি জীবনও দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান। তখন সে বললো, আমিও তো জীবন দান করি ও মৃত্যু ঘটাই। ইবরাহীম বললো, আচ্ছা, আল্লাহ তো সূর্যকে পূর্ব থেকে উদিত করেন, তুমি তা পশ্চিম থেকে উদিত করো তো! এ কথায় সে কাফের নিরুত্তর হয়ে গেলো। আর আল্লাহ এরূপ জালিমদের হেদায়াত করেন না।› (সূরা বাকারা: ২৫৮)
ফেরাউনের ঔদ্ধত্য ও তার করুণ পরিণতি:
মুসা (আ.) ও তাঁর সম্প্রদায়ের ওপর ফেরাউনের নিষ্ঠুর অত্যাচারের কথা কারো অজানা নয়।
স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে তার অত্যাচারের চিত্র এভাবে তুলে ধরেছেন- ‘ফেরাউন জমিনে ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করেছিল এবং সে তার অধিবাসীদের বিভিন্ন দলে বিভক্ত করেছিলো। তাদের একটি শ্রেণিকে সে অত্যন্ত দুর্বল করে রেখেছিলো, যাদের পুত্রদের সে জবেহ করত ও নারীদের জীবিত রাখত।
ফেরাউন ও তার বাহিনী জমিনে অন্যায়ভাবে অহমিকা প্রদর্শন করেছিল। তারা মনে করেছিল তাদেরকে আমার কাছে ফিরে আসতে হবে না। সুতরাং আমি তাকে ও তার সৈন্যদেরকে পাকড়াও করলাম এবং সাগরে নিক্ষেপ করলাম। অতএব দেখো, জালিমদের পরিণতি কী হয়েছিলো ! (কাসাস : ৩৯-৪০) অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, আমি ফেরাউনের সম্প্রদায়কে দুর্ভিক্ষ ও ফসলাদির ক্ষতির দ্বারা আক্রান্ত করেছি, যেন তারা সতর্ক হয়। (সূরা আরাফ : ১৩০)
কারুন ও তার পরিনতি:
কারুন বনি ইসরাইলের লোক ছিলো। আল্লাহ তায়ালা তাকে ধন ও ইলম উভয়টিই দিয়ে ছিলেন ; কিন্তু সে এগুলো নিয়ে অহমিকা করতো।
পবিত্র কোরআনে তার জুলুম ও পরিণতির কথা এভাবে তুলে ধরা হয়েছে-
কারূন ছিলো মূসার সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি। কিন্তু সে তাদের প্রতি জুলুম করলো। আমি তাকে এমন ধনভান্ডার দিয়েছিলাম, যার চাবিগুলো বহন করা শক্তিশালী একদল লোকের পক্ষেও কষ্টকর ছিলো। স্বরণ করুন, তার স¤প্রদায় তাকে বলেছিলো, দম্ভ করো না, নিশ্চয় আল্লাহ দাম্ভিকদেরকে পছন্দ করেন না।সে বললো, এসব তো আমি আমার জ্ঞানবলে লাভ করেছি। সে কি জানত না যে, আল্লাহ তার আগে এমন বহু মানবগোষ্ঠীকে ধ্বংস করেছিলেন, যারা শক্তিতেও তার অপেক্ষা প্রবল ছিলো এবং জনবলেও বেশি ছিলো? অপরাধীদেরকে তাদের অপরাধ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে না। পরিণামে আমি তাকে তার প্রাসাদসহ ভূগর্ভে ধ্বসিয়ে দিলাম। তার স্বপক্ষে এমন কোনো দল ছিলো না যারা আল্লাহর শাস্তি থেকে তাকে সাহায্য করতে পারতো এবং সে নিজেও পারলো না আত্মরক্ষা করতে›। (সূরা কাসাস: ৭৬,৭৮,৮১)
আল্লাহ আমাদের মজলুমের বদদোয়া থেকে হেফাজত করুন!
লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া হামিদিয়া বটগ্রাম, সুয়াগাজী, কুমিল্লা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।