Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

একই ঝুঁকি ফিরতি যাত্রায়

এ যাত্রা বিলম্বিত করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৭ মে, ২০২১, ১২:০০ এএম

বিধিনিষেধেও মহাসড়কে গাড়ির চাপ : চলছে দূরপাল্লার বাস

স্বজনদের সঙ্গে ঈদ কাটিয়ে আবারো গাদাগাদি করে একই ঝুঁকি নিয়ে ফেরিতে নদী পার হয়ে ঢাকাসহ আশপাশের জেলায় ফিরতে শুরু করেছে দক্ষিণ জনপদের কর্মজীবী মানুষ। গতকাল রোববার সকাল থেকেই মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাট হয়ে হাজার হাজার মানুষ মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে আসতে শুরু করে। লকডাউনের কারণে দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় গন্তব্যে ফিরতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। একইভাবে মহাসড়কগুলোতে বেড়েছে গাড়ির চাপ। যে যেমনি পারছেন সেভাবে ঢাকায় আসছেন। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর শিথিলতার সুযোগে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মহাসড়কে চলছে দূরপাল্লার বাসও। তবে বেশিরভাগ মানুষই অতিরিক্ত ভাড়া গুণে বিভিন্ন যানবাহনে করে ভেঙে ভেঙে কর্মস্থলে ফিরছেন। গতকাল সকাল থেকে মাওয়াঘাট, পাটুরিয়াঘাট ও রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর, সায়দাবাদ, গাবতলীসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ও খোঁজ নিয়ে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

এর আগে ঈদযাত্রার সঙ্গে যেন ভাইরাস আরো ছড়িয়ে না পড়ে, সেজন্য ছুটিতে সবাইকে কর্মস্থলের এলাকায় থাকতে বলেছিল সরকার। কিন্তু ঈদের কয়েক দিন আগে থেকেই লাখো মানুষ যে যেভাবে পারেন সেভাবে গ্রামের বাড়ি গেছেন। ঘরমুখো মানুষ ছোট ছোট যানবাহনে গাদাগাদি করে সে সময় বাড়িতে গেছে। ফেরিতেও ছিল উপচে পড়া ভিড়। স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই ছিল না কোথাও। ভিড়ের চাপে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ফেরিতে প্রাণহানিও ঘটেছে। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে এভাবে ভ্রমণ, বিভিন্ন বিপণিবিতানে মানুষের ভিড়ের কারণে নতুন করে সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা।

কিন্তু কেউই কথা শোনেনি। যে যার মত করে নাড়ির টানে ঢাকা ছেড়ে বাড়ি গিয়েছিলেন। কেউ মোটরসাইকেলে করে, কেউ সিটি/জেলা কেন্দ্রীক গণপরিবহনে ভেঙে ভেঙে, কেউবা প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ভাড়া করে আবার কেউ মিনি পিকআপে করে ঢাকামুখী হতে শুরু করেছেন।

ঝুঁকি নিয়ে সেই ঈদযাত্রা ঠেকানো না গেলেও এখন মানুষের ফিরতি যাত্রা বিলম্বিত করা যায় কীভাবে, সেই পথ খোঁজার পরামর্শ দিয়েছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম। তিনি বলেছিলেন, এই লকডাউনের মধ্যে আবার যদি লোকজন এভাবেই ফেরে তাহলে এটা অবশ্যই বিপজ্জনক হবে। এ কারণে এই ফেরাটা যদি একটু বিলম্বিত করা যায় ভালো হয়। এছাড়া যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়ে তাদের ঢাকায় আনার ব্যবস্থা করা যায় সেটাও বিবেচনা করা যেতে পারে। সেই বিপদ এড়াতে সরকার ইতোমধ্যে লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গতকাল রোববার এ বিষয়ে আরো সাতদিন ছুটি বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

বিআইডবিøউটিসির এজিএম শফিকুল ইসলাম বলেন, জরুরি পরিষেবার যানবাহন পারাপারের জন্য ফেরি সচল রাখা হয়েছে। কিন্তু জরুরি যানবাহনের সঙ্গে কর্মস্থলে ফেরা মানুষও ফেরিতে উঠে পড়ছে এবং গাদাগাদি করে নদী পার হচ্ছেন। এতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি আরো বেড়ে যাচ্ছে। শিমুলিয়ায় ঢাকার দিক থেকে আসা যাত্রী ও যানবাহনের তেমন চাপ না থাকলেও মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাটে ঢাকামুখী মানুষের প্রচন্ড চাপ রয়েছে বলে জানালেন শফিকুল।
এদিকে বাগেরহাট থেকে আসা শফিকুল নামের এক যাত্রী বললেন, নিজের জেলা থেকে তিনি ৬০০ টাকা ভাড়া দিয়ে আরো কয়েকজনের সঙ্গে মাইক্রোবাসে করে বাংলাবাজার ঘাটে পৌঁছেছেন। অন্যসময় এই ভাড়া থাকে ৩০০ টাকা। আর বরিশাল শহর থেকে আসা হাসিবুর রহমান বলেন, আমার বাংলাবাজার ঘাট পর্যন্ত আসতেই ৮০০ টাকা খরচ হয়ে গেছে। না এসে উপায়ও নেই, অফিস খুলে গেছে। কাঁঠালবাড়িতে বিআইডবিøউটিসির সহকারী ম্যানেজার ভজন কুমার সাহা জানান, এই নৌরুটে এখন চলাচল করছে ১৫টি ফেরি। রবিবার ভোর থেকে যাত্রীর চাপ বাড়তে শুরু করেছে। ফেরিতে করেই তারা পার হচ্ছে। আমরা পণ্যবাহী ট্রাক ও অ্যাম্বুলেন্সকে অগ্রাধিকার দেওয়ার চেষ্টা করছি। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী সদস্যরা ঘাটের পরিস্থিতি সামাল দিতে চেষ্টা করছেন।

সরেজমিনে পাটুরিয়া ঘাটে দেখা গেছে, ঘাট থেকে ছেড়ে আসা প্রতিটি ফেরিতেই যাত্রীর ভিড়। ফেরিগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই ছিল না। ছিল না প্রশাসনের তৎপরতাও। বিআইডাবিøউটিসি আরিচা কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক জিল্লুর রহমান জানান, মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাট হয়ে প্রায় লাখ মানুষ বাড়ি গেছে। ঈদ শেষে তারাই আবার ফিরতে শুরু করেছেন। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে যানজট ও যাত্রী ভোগান্তি কমায় ছোট-বড় ১৬টি ফেরি চালু রয়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে রাজধানীর আব্দুল্লাহপুরে সকাল থেকে ঢাকামুখী মানুষের স্বাভাবিক ভিড় দেখা গেছে। আন্তঃজেলা গণপরিবহনের চলাচল বন্ধ থাকার কারণে অনেকেই মোটরসাইকেলে চড়ে বাড়ি গিয়েছিলেন। অনেক মানুষকে দেখা গেছে প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে করে ফিরতে। এদিকে ফাঁকা ময়মনসিংহ সড়ক দিয়ে আসা ফিরতি মানুষদের টঙ্গী থেকে হেটে আব্দুল্লাহপুর আসতে দেখা গেছে। তারা আব্দুল্লাহপুর থেকে আবার অন্য যানবাহনে করে বাসায় ফিরছেন।

এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সকালে গাড়ি কম থাকায় যাত্রীদের যে ভোগান্তি ছিল দুপুরের দিকে তা কিছুটা কমে এসেছে। দুপুরে গাড়ির সংখ্যা বাড়লেও যাত্রীদের সংখ্যা তেমন বাড়েনি। এতে সকালে যাত্রীদের যে ভোগান্তি ছিল তা কমে এসেছে। সকালে ঢাকা ফেরত যাত্রীদের যেমন ঢল ছিল, তেমনি ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে ঈদ উপলক্ষে বাড়িতে যাওয়ার যাত্রীও ছিল প্রচুর। দুপুরের পর থেকে কয়েকটি দূরপাল্লার বাসও চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে এসব বাস রাজধানীতে প্রবেশ না করে যাত্রীদের নারায়ণগঞ্জ সড়কে নামিয়ে দিচ্ছে। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের এক শ্রমিক নেতা জানান, নিষেধাজ্ঞা না মেনে সায়েদাবাদ থেকে ঈদের আগের দিন থেকে বেশ কয়েকটি রুটে চলছে দূরপাল্লার বাস। যার মধ্যে ঢাকা-কোম্পানীগঞ্জ রুটের তিশা পরিবহনের ৭/৮টি দূরপাল্লার বাস প্রতিদিন চলাচল করছে।

অন্যদিকে, দারুসালাম থানার পিআই (পেট্রোল ইন্সপেক্টর) মোস্তফা কামাল বলেন, আমাদের ডিউটি গাবতলী এলাকায় ২৪ ঘণ্টা আছে, তবে সকাল থেকে ঢাকায় ফিরতি মানুষের চাপ অনেক বেড়ে গিয়েছে, তবে আমরাও চেকপোস্ট বসিয়ে সতার্ক অবস্থায় আছি এবং মাস্কবিহীন কোনো মানুষকে আমরা ঢাকায় ঢুকতে দিচ্ছি না।
আমাদের টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা জানান, ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফিরছে মানুষ। ঢাকামুখী যানবাহনের চাপ বাড়ছে। টাঙ্গাইল-ঢাকা-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে লকডাউন বিধি অমান্য করে কিছু দূরপাল্লার বাসও চলাচল করছে। গতকাল টাঙ্গাইল-ঢাকা-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে ঢাকামুখী যানবাহনের চাপ বেড়েছে। সকাল থেকেই বিভিন্ন যানবাহনে করে মানুষ ফিরসে কর্মস্থলে। এদিকে লকডাউন বিধি অমান্য করে মহাসড়কে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন রুটের দূরপাল্লার কিছু বাস চলাচল করছে। তবে অধিকাংশ দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় মহাসড়কে গাড়ি চলছে স্বাভাবিক গতিতে। অপরদিকে টাঙ্গাইল বাসটার্মিনাল থেকে জেলার মধ্যে বাস চলাচল করছে। সকাল থেকেই বাসটার্মিনালগুলোতে ঢাকামূখী যাত্রীদের চাপ দেখা গেছে।
মুন্সীগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, মাওয়া শিমুলিয়া -বাংলাবাজার নৌরুটে ঈদ ফেরৎ কর্মস্থলগামী যাত্রীদের গণপরিবহনের অভাবে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। স্বাস্থবিধি মানার কোন বালাই নেই। যে যেভাবে পারছে কর্মস্থল ঢাকায় রওনা হচ্ছে। মিশুক, ভ্যান পিকআপ, ট্রাক রাইট সেয়ারে করে ভেঙে ভেংগে যাতায়াত করায় যাত্রীদের দিগুণ ভাড়া গুনতে হচ্ছে। যানবাহনের জন্য যাত্রীদের মাওয়া ঘাটে ঘন্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। বিআইডবিøউটিসির এজিএম শফিকুল ইসলাম জানান শিমুলিয়া -বাংলাবাজার নৌরুটে গতকাল রোববার ১৬টি ফেরি চলাচল করছে। ঢাকাগামী যাত্রীরা যেমন আসছে তেমনি বিপুল সংখ্যক দক্ষিণাঞ্চলগামী যাত্রীও রয়েছে। রোববার যাত্রীদের তেমন একটা চাপ না থাকলেও আজ সোমবার চাপ অনেক বৃদ্বি পাবে।

উল্লেখ্য, কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে গত ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে আটদিনের কঠোর লকডাউন শুরু হয়। লকডাউনের মধ্যে পালনের জন্য ১৩টি নির্দেশনা দেওয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। পরে তিন দফা লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। সেই মেয়াদ শেষ হবে আজ রোববার মধ্যরাতে। বিধিনিষেধের মেয়াদ আরো এক দফা বাড়িয়ে আগামী ২৩ মে পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঈদ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ