বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটি ও করোনার লকডাউনকে কাজে লাগিয়ে বরগুনার পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদ-নদীতে বেহেন্দি জালের মাধ্যমে অবাধে নিধন করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির রেনু পোনা। বন বিভাগের আওতাধীন এলাকার তিনটি নদ-নদীতে ছোট ফাঁসের জাল দিয়ে চলছে অবৈধভাবে মাছ ধরার মহোৎসব। ঈদুল আজহার ছুটি ও করোনার লকডাউনের কারণে প্রশাসন নির্বিকার। নিবিঘেœ প্রতিদিন বিভিন্ন প্রজাতির পোনা মারা পড়ছে। মাছের পোনা সংরক্ষণ আইনে সোয়া চার ইঞ্চির কম ফাঁসের জাল ব্যবহার করা দন্ডনীয় অপরাধ তা শুধু কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।
গত দু রাত বরগুনার এতিনটি নদীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এ পায়রা, বিষখালী ও বলেশ^ও নদেও শতাধিক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে খুঁটি গেড়ে ছোট ফাঁসের গড়া জাল, বেড় জাল, ভাসা জাল ও বেহেন্দি জাল পেতে অবাধে মাছ ধরা হচ্ছে। বরগুনা সদরের বড়ইতলা ফেরীঘাটের দক্ষিণ পার্শ্বে সন্ধ্যার চলে পোনা নিধনের মহোৎসব। প্রায় অর্ধশত জেলে বাগদা-গলদা চিংড়ি, পোয়া মাছ ধরার নামে নিধন করছে বিভিন্ন প্রজাতির পোনা মাছ। প্রশাসনের নাকের ডগায় পোনানিধনযজ্ঞ অনেকটা ওপেনসিক্রেট হলেও সংশ্লিষ্টরা নির্বিকার। বরগুনা সদরের চালিতাতলী থেকে সোনাতলা পর্যন্ত পায়রা নদীর দুই পাড়, বিষখালী নদীর বড়ইতলা-নলী থেকে গোড়াপদ্মা পর্যন্ত, তালতলী থেকে তেঁতুলবাড়িয়া হয়ে বঙ্গোপসাগরের মোহনা পর্যন্ত এবং বলেশ্বর নদের মোহনা থেকে পশ্চিমে চরদুয়ানি পর্যন্ত এলাকাজুড়ে এসব জাল পেতে রাখা হয়। সন্ধ্যা রাত থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে পোনানিধনের মহোৎসব।
বুধবার রাত সাড়ে আটটার দিকে বরগুনা সদরের ঢলুয়া ইউনিয়নের বড়ইতলাা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিশখালী নদীতে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ৩৫জন জেলে বেহেন্দি, বেড় ও গড়া জাল পেতে দিয়ে মাছ ধরছেন। এসকল জেলেরা সাধারণত পোয়া, টেংরা, গুলিশাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরলেও এদের জালে এসব মাছের পাশাপাশি অসংখ্য মাছের পোনা আটকা পড়ে। এসব ক্ষুদ্রাকৃতির পোনা কোনো কাজে লাগে না বলে তারা ফেলে দেয়। কেউ কেউ হাঁস-মুরগীর খাবারের জন্য বাড়ি নিয়ে যায়।
জাটকা ইলিশ বিরোধী অভিযানের মুখে দক্ষিণাঞ্চলের মৎ্স্য শিকারীরা নদ-নদীতে পোনা মাছ ধরার মহোৎসবে মেতে উঠেছে। পোনা মাছ মারার জাল হিসেবে পরিচিত বেহেন্দি ও মশারি জাল দিয়ে জাটকার চেয়েও ছোট সাইজের ইলিশ, রিঠা, আইর, পাঙ্গাস, কাচকি, চাপিলা, চাপিদা, ভাটা, বায়লা, পুঁটি, বাইন ও চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ নির্বিচারে শিকার করছে। এ সব মাছ কোনটা কোন জাতের তা দেখে চেনা মুশকিল। অধিকাংশই গুঁড়া মাছ হিসাবে কেজি দরে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। একটু বড়গুলো নানা প্রজাতির হলেও তা মিলিয়ে ‘সাচরা মাছ’ হিসাবে ভাগ দিয়ে বাজারে বিক্রি হচ্ছে।
বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে রফাদফা করেই এসব জাল জেলেরা পাতেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক জেলে জানিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর এক জেলে বলেন, তাঁরা এ জন্য প্রত্যেক জেলে প্রতি মাসে এক হাজার টাকা করে দেন। নলটোনা ইউনিয়ন পরিষদের একজন সদস্য ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব পালন করেন।
বন বিভাগের লালদিয়া এলাকার বিষখালী নদীতে গিয়ে দেখা যায়, বেহুন্দি জাল দিয়ে মাছ ধরছেন অনেকে। এক জেলে বলেন, ‘সবাই ধরে, আমিও হেইতে ধরি। কেউ তো কিছু কয় না। আমাগো এলাকায় এই রহম তিন শর বেশি নৌকায় ভাসা জাল দিয়া মাছ ধরে।’ কয়েকজন জেলে বলেন, জালে জাটকা, পোয়া, তপসি, টেংরাসহ অন্য প্রজাতির অনেক মাছ আর পোনা ধরা পড়ে। যেসব পোনা বিক্রি করে লাভ নেই, তাঁরা সেগুলো ফেলে দেন।
বলেশ্বর নদের মোহনায় হরিণঘাটা হয়ে উত্তরে চরদুয়ানি পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার জুড়ে পাড়ে বাঁশের খুঁটি গেড়ে ভাসা ও বেড়জাল পেতে রাখা হয়। পাশাপাশি স্রোতের মুখে বেহেন্দি জাল পেতেও মাছ ধরছেন জেলেরা। এ এলাকা হরিণঘাটা সংরক্ষিত বনের আওতাভুক্ত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জেলে বলেন, স্থানীয় বন বিভাগের সদস্যদের নিয়মিত মাসোহারা দিয়ে তাঁরা মাছ শিকার করছেন। গড়াজাল দিয়ে মাছ ধরতে দুই সপ্তাহ পর পর বন বিভাগের স্থানীয় কর্মকর্তাদের ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা করে দিতে হয়।
বন বিভাগের পাথরঘাটা রেঞ্জ কর্মকর্তা সোলায়মান হাওলাদার বলেন, ‘এসব জাল উচ্ছেদের ব্যাপারে তাঁরা স্থানীয় মৎস্য কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। তবে বন বিভাগের কোনো সদস্য টাকা নেয় এমন ঘটনা তাঁর জানা নেই। আর কেউ অভিযোগও করেননি।’
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, ছোট ফাঁসের এসব জাল বন্ধে তাঁরা অভিযান চালাচ্ছেন। এর মধ্যে অনেক জাল ধরে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।