Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

করোনা আর ডায়রিয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের ঈদ কেন্দ্রীক অর্থনীতি এবারো বিপর্যস্ত

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ১৩ মে, ২০২১, ২:৪৪ পিএম

অব্যাহত করোনা মহামারির সাথে ডায়রিয়ার হানায় দক্ষিণাঞ্চলের ঈদ কেন্দ্রীক অর্থনীতি এবার বিপর্যস্ত। শুধু বানের স্রোতের মত সড়ক পথে মাওয়া হয়ে মানুষের ঢল অব্যাহত রয়েছে দক্ষিণের জনপদে। কিন্তু যেসব মানুষ ঘরে ফিরছে তারা শুধু ঈদের আনন্দ উপভোগ করার জন্যই নয়, অনেকেই আসছেন পরিবার পরিজনকে গ্রামের বাড়ীতে রেখে একা ফিরবেন কর্মহীন কর্মস্থলে। করোনা মহামারিতে ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন এলাকার বিপুল সংখ্যক কর্মজীবী ও শ্রমজীবী মানুষ কাজ হারিয়েছেন। যাদের পক্ষে পরিবার পরিজন নিয়ে কর্মস্থলে থাকা দুরুহ হয়ে পড়েছে। এসব কর্মহীন মানুষের পরিবার পরিজন আগামীতে দক্ষিনাঞ্চলে বাড়তি অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে পাড়ে বলেও মনে করছেন ওয়াকিবাহল মহল।

করোনা সংক্রমনের কারণে গত বছরাধীককাল ধরে দক্ষিনাঞ্চলের অর্থনীতি যেভাবে স্থবির হয়ে আছে, তা আগামীতে হয়ত ক্ষয়িষ্ঞু হতেই শুরু করবে বলে শংকিত অর্থনীতির শিক্ষকগন। এথেকে কবে উত্তরন ঘটবে তাও বলতে পারছেন না কেউ। শুধুমাত্র সরকারী চাকুরীজীবী ছাড়া প্রায় সব কর্মজীবী এতদিন পুজি ভেঙে কোনমতে সংসার চালালেও ইতোমধ্যে তাও নিঃশেষ হয়ে এসেছে। ফলে এসব পরিবারে ঈদ আনন্দ দুরের কথা, স্বাভাবিক সংসার জীবন নির্বাহই কঠিন হয়ে পড়েছে। শ্রমজীবী পরিবারগুলোর দূর্ভোগ আরো ভয়াবহ। গত বছরাধীককাল ধরেই এসব পরিবারে আয়ের পথ ক্রমশ সংকুচিত হয়ে আসছে।

নৌযান শ্রমিক-কর্মচারী থেকে শুরু করে এর মালিকদের অবস্থাও সর্বকালের নাজুক পর্যায়ে। গত বছররে মত এবারের ঈদ উল ফিতরেও সব যাত্রীবাহী নৌযান বন্ধ থাকায় দক্ষিনাঞ্চলের অর্থর্নীতিতে বাড়তি শূণ্যতার সৃষ্টি হয়েছে। অথচ এসব নৌযানের মালিকগন বছরে দুটি ঈদে যাত্রী পরিবহন করেই ব্যাংক ঋন পরিশোধ সহ সব সব ধরনের দেয়দেনা মূক্ত হয়। কিন্তু গত বছরের মত এবারো ঈদ উল ফিতরে যাত্রীবাহী নৌযান বন্ধ থাকায় নৌযান মালিকরা যেমনি অর্থনৈতিকভাবে ভয়াবহ বিপর্যয়ের কবলে, তেমনি বেশীরভাগ শ্রমিক-কর্মচারী বেতনÑভাতা না পেয়ে চরম দূর্দশার কবলে। দক্ষিণাঞ্চলে অন্যান্য বেশীরভাগ ব্যবসায়ীদের অবস্থাও করুন। অনেক ব্যাবসায়ী ব্যাংক ঋনের কিস্তি সহ মহাজনের দেনা শোধ করতে পারছেন না।

কিন্তু এ পরস্থিতিতেও করোনার সাথে ডায়রিয়া পরিস্থিতি থেকে রেহাই মিলছেনা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের। প্রতিদিনই আক্রান্ত আর মৃত্যুর মিছিল শুধু দীর্ঘ হচ্ছে। বৃহস্পতিবার নতুন ২২ জন সহ দক্ষিনাঞ্চলে করোনা সংক্রমনের সংখ্যা ১৫ হাজার অতিক্রম করেছে। আর এ মরনব্যাধী ইতোমধ্যে কেড়ে নিয়েছে প্রায় পৌনে ৩শ মানুষের প্রাণ। দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলায় এপর্যন্ত ৯৯ হাজার ৪২৬ জনের নমুনা পরিক্ষায় ১৫ হাজার ৪ জনের দেহে করেনা পজিটিভ সনাক্ত হয়েছে। সনাক্তর হার ১৫.১৩%। যা জাতীয় হারের চেয়ে অনেক বেশী। মৃত্যুহারও দক্ষিণাঞ্চলে ১.৮২ %।

অপরদিকে সরকারী হিসেবেই গত সাড়ে ৩মাসে দক্ষিনাঞ্চলে ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা ৫২ হাজার অতিক্রম করেছে। মৃত্যু হয়েছে ২১ জনের। তবে গত মাসের শেষ পর্যন্ত দৈনিক গড়ে দেড় সহশ্রাধীক মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলেও গত সপ্তাহ থেকে তা ৫ শর কাছ নেমে এসেছে। কিন্তু দক্ষিণাঞ্চলে গত ৪ মাসে ডায়রিয়ায় মৃত ২১ জনের মধ্যে চলতি মাসের প্রথম ১২ দিনেই মারা গেছেন ৯ জন।

করোনা আর ডায়রিয়া দক্ষিণাঞ্চলের শুধু অর্থনীতিই নয়, আর্থÑসামাজিক ব্যবস্থায়ও মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলছে। করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে যে সামাজিক দুরত্ব বজায় রখার কথা চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, তা অনেকে না মানলেও বেশীরভাগ পরিবারে তা ইতোমধ্যে স্থায়ী রূপ লাভ করেছে। তাই খুশির (?) ঈদ আসলও বেশীরভাগ মানুষ ও পরিবারের মধ্যে বাস্তব সামাজিক যোগাযোগ হয়ত দুরেই থেকে যাবে বলে মনে করছেন সমাজ বিজ্ঞানীগন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ