পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনা সংক্রমণরোধে দূরপাল্লার বাস, ট্রেন, লঞ্চ চলাচল বন্ধ। তারপরেও বিকল্প উপায়ে নাড়ির টানে ছুটছে মানুষ। বৃষ্টি-মহামারিকে উপেক্ষা করেই যেন বাড়ি ফেরার যুদ্ধে নেমেছেন রাজধানী থেকে সাধারণ মানুষ। সাত সকাল থেকে শুরু করে দিন শেষ করে সন্ধ্যায়ও পথে-ঘাটে জনস্রোত। কেউ পায়ে হেঁটে, কেউবা রিকশায়, মোটরসাইকেল, ভ্যান, পিকাপে করে ঘাটে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। পথে পথে চেকপোস্ট, ব্যারিকেড দিয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না তাদের। ঘাটে ফেরি ভিড়লেই ওঠার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন নানা বয়সীরা। শুধু নদীর ঘাট নয় ঈদযাত্রায় মহাসড়কগুলোতেও মানুষের ভিড়। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-মাওয়া, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা- আরিচা, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে দূরপাল্লার বাস বাদে ছুটছে সব ধরনের যান। যেগুলোতে গাদাগাদি করে চলছে শুধু মানুষ আর মানুষ। কোনো বাধাই যেন তাদের বাড়ি ফেরা ঠেকাতে পারেনি।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্তও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া, মহামারি কোনো কিছুই বাধ মানাতে পারছে না নদীঘাটের জনস্রোতকে। শিমুলিয়া ঘাটে ফেরি ভিড়তেই হুড়মুড় করে তাতে পাল্লা দিয়ে উঠছেন শত শত ঘরমুখো মানুষ। সেখানে নেই বিন্দুমাত্র সামাজিক দূরত্ব কিংবা স্বাস্থ্যবিধির বালাই। ঈদ করতে যেতে হবে প্রিয়জনের কাছে তাই স্বাস্থ্যঝুঁকিকে থোরাই কেয়ার। বেশি ভাড়া গুণতেও যেন অসুবিধা নেই তাদের।
একই অবস্থা দেখা গেছে সড়ক পথেও। বৃষ্টি মাথায় নিয়েই হাজার হাজার যাত্রী গাবতলী থেকে হেঁটে সাভারের দিকে যেতে দেখা যায়। এই মিছিলে শামিল শিশু-বৃদ্ধ সবাই। যাদের কেউ উত্তরাঞ্চলে কেউবা আবার যাবেন দক্ষিণাঞ্চলে। গাড়ি না পেয়ে অনেকেই রিকশায় চড়ে গন্তব্যের পথে যাত্রা শুরু করেছেন।
পথে পথে চেকপোস্ট থাকলেও মানুষের স্রোত সামাল দিতে হিমশিম অবস্থা পড়তে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। এদিকে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে এবার ঈদে ছুটি সংক্ষিপ্ত করার পাশাপাশি সবাইকে কর্মস্থলে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। এ কারণে আজ বুধবার ২৯ রোজায়ও চাকরিজীবীদের ঢাকায় রাখতে সরকারি অফিস খোলা থাকবে বলেও জানান তিনি।
সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি উপেক্ষা করে মানুষ বাড়ি ফিরতে মরিয়া। দূরপাল্লার বাস, লঞ্চ ও ট্রেন বন্ধ থাকায় বিকল্প উপায়ে মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, সিএনজি অটোরিকশা, পিকআপ, মোটরসাইকেলসহ ছোট ছোট যানবাহনে চড়ে যাচ্ছেন তারা। পথে পথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যারিকেড দিয়েও এদের আটকানো যায়নি। উল্টো তাদের উপচেপড়া চাপে ফেরির সংখ্যা বাড়াতে বাধ্য হয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)। জরুরি পরিষেবার জন্য চালু রাখা ফেরিতে গাড়ির বদলে গাদাগাদি করে মানুষ যেতে দেখা গেছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে চাপের কারণে থেমে থেমে চলেছে যানবাহন।
বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪০ হাজারেরও বেশি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা। গত সোমবার ভোর ৬টা থেকে গতকাল মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত এ সময়ে যানবাহনগুলো পারাপার হয়। সেতু কর্তৃপক্ষের একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এরআগে ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৩২ হাজার গাড়ি পারাপার হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পণ্যপরিবহনে নিয়োজিত যানবাহন, ট্রাক, পিকআপভ্যান, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন ব্যক্তিগত যানবাহন ছাড়াও বিপুল সংখ্যক যাত্রীবাহী বাস সেতু দিয়ে পারাপার হয়েছে।
এদিকে গতকাল সকাল থেকেই ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে উত্তরবঙ্গমুখী বেড়েছে যানবাহনের চাপ। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সড়কে যানবাহন বৃদ্ধি পেয়েছে। ট্রাক, মাইক্রোবাস, পিকআপভ্যানসহ বিভিন্ন ব্যক্তিগত গাড়িতে গাদাগাদি করে বাড়ি ফিরছেন ঘরমুখো মানুষ। এতে করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপরদিকে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় যাত্রীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে যাত্রীরা গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন। দীর্ঘ সময়েও গাড়ি না পেয়ে অনেকে হেঁটেই গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইয়াসির আরাফাত বলেন, মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। কোথাও যানবাহন আটকে নেই। তবে মহাসড়কে গণপরিবহন চলাচল করতে দেখা যায়নি বলে দাবি করেন তিনি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়ায় দূরপাল্লার বাস, ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। জেলার অভ্যন্তরণে বাস চলাচল করলেও আরেক জেলায় যেতে দেওয়া হচ্ছে না। তবুও বারবার যানবাহন পরিবর্তন করে ভেঙে ভেঙে বিভিন্ন জেলায় গেছেন ঘরমুখো মানুষ। দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রকোপ থাকলেও কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি। এতে সংক্রমণ গ্রাম পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকারি-বেসরকারি কর্মজীবীদের নিজ কর্মস্থল অধিক্ষেত্রে থাকার অনুরোধ জানিয়ে আসছে সরকার। আরোপ করা হয়েছে বিধিনিষেধ। কিন্তু সেই বিধি-নিষেধকে উপেক্ষা করেই মানুষের স্রোত নামে সড়কে।
রাজধানীর প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী, শিমরাইল, উত্তরার আব্দুল্লাহপুর, বাবুবাজার, আশুলিয়া ও টঙ্গী এলাকায় বিভিন্ন যানবাহনের চাপ। শত শত মানুষ ব্যাগ নিয়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন। স্বজনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে গন্তব্যে যাওয়াই তাদের লক্ষ্য। দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় ছোট ছোট গাড়িতে কাছাকাছি দূরত্বের পথ পাড়ি দিচ্ছেন যাত্রীরা। পিকআপ, মাইক্রোবাস, সিএনজি, অটোরিকশা বিভিন্ন গন্তব্যে ডেকে ডেকে যাত্রী তুলছেন। রাজধানীর বাবুবাজার ব্রিজে জনপ্রতি তিনশ’ টাকায় যাত্রী তুলছিলেন মাইক্রোবাস চালক খলিল মিয়া। তিনি বলেন, মাওয়া ও পাটুরিয়ায় ফেরি চালু থাকাবস্থায় এক পরিবারের বা কয়েকজনকে নিয়ে বিভিন্ন জেলায় ট্রিপ দিতাম। এখন দিনে ফেরি বন্ধ থাকায় বাবুবাজার থেকে মাওয়া পর্যন্ত যাত্রী বহন করছি। তিনি বলেন, পুলিশ ঝামেলা না করলে দিনে ৮-১০টি ট্রিপ দিতে পারি। পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা জানান, গত কয়েকদিন ধরেই বাড়িমুখো মানুষের ভিড় ছিল। শবেকদরের বন্ধের দিন সোমবার ভিড় আরও বেড়েছে। শেষ মুহূর্তে মানুষ যেভাবে হোক বাড়ি যাচ্ছেন। ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের প্রাইভেট কারের চালক ইব্রাহিম বলেন, গত কয়েকদিন জুরাইন- পোস্তগোলা থেকে যাত্রী নিয়ে মাওয়া ঘাট পর্যন্ত ট্রিপ মেরেছি। কিন্তু আজ (মঙ্গলবার) পুলিশ ও বিজিবি ধলেশ্বর সেতুতে ব্যারিকেড দিয়ে গাড়ি আটকে দিচ্ছে। তারা কোনো গাড়িই ব্রিজের ওপাড়ে যেতে দিচ্ছে না। তবে মজার বিষয় হলো, সেতুর এপাড়ে যে মানুষগুলোকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়া হচ্ছে তারাই আবার পায়ে হেঁটে সেুত পার হয়ে ওপাড় থেকে আরেকটা গাড়িতে চড়ে মাওয়া ঘাটের দিকে রওনা দিচ্ছেন। বিজিবি-পুলিশের সামনেই এমন ঘটনা ঘটছে।
মানিকগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, ঢাকার গাবতলী থেকে পাটুরিয়া ঘাট উথলী পর্যন্ত মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসানো হলেও যাত্রীদের বাড়ি যাওয়া বন্ধ করা যায়নি। তারা ঢাকা থেকে বিভিন্ন বাইপাস রোডে সিএনজি, অটোরিকশা, ভ্যান ও মোটরসাইকেলে চড়ে পাটুরিয়া-আরিচা ঘাটে আসছেন। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে বাড়ি যাচ্ছেন যাত্রীরা। এদিকে অ্যাম্বুলেন্স, লাশবাহী গাড়ি ও হাজার হাজার যাত্রীর উপচে পড়া ভিড়ের কারণে রজনীগন্ধা, বনলতা, শাপলা শালুকসহ ৪টি ফেরি দিয়ে দুই আড়াই ঘণ্টা পর পর যাত্রী পারাপার করে চলেছে বিআইডব্লিউটিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।