Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

করোনা মোকাবিলার বাজেট আসছে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আগামী বাজেটের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী টিকা আমদানিতে প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থানের উদ্যোগ দরিদ্র্য মানুষের জীবন মান উন্নয়নে সামাজির সুরক্ষা

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ১২ মে, ২০২১, ১২:০১ এএম

করোনা মহামারি থেকে মানুষের জীবন বাঁচাতে টিকা আমদানিতে প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থান নিশ্চিত করার পাশাপাশি অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে আসন্ন বাজেটে। এছাড়া দরিদ্র্যদের জীবন ও জীবিকা নির্বাহ এবং নতুন কর্মসংস্থান নিশ্চিতকল্পে বাজেট চূড়ান্ত করা হচ্ছে। এবারের বাজেট আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ লাখ ২ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা যা টাকার অঙ্কে যাবতকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। গতকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করা হয়েছে। আগামী ৩ জুন বৃহস্পতিবার মহান সংসদে বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ইতোমধ্যে বাজেটের সারসংক্ষেপ দেখেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বাজেট বাস্তবায়নের উপরও জোর দিয়েছেন।

অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, করোনা থেকে মানুষের জীবন বাঁচাতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে টিকা আমদানির উপর। এজন্য আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে বাজেটে থোক বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ১০ হাজার কোটি টাকা। যদিও টিকা কিনতে ব্যয় হবে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা। বড় অঙ্কের এই অর্থসংস্থানে ইতোমধ্যে ঋণ সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) সহ অন্তত ১০ টি উন্নয়ন সহযোগী। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে প্রণোদনা প্যাকেজ দ্রুত বাস্তবায়ন এবং করছাড় দিয়ে ব্যবসা-বান্ধব বাজেট দেয়া হবে। এতে করে দেশের রফতানি ও কর্মসংস্থান ঠিক থাকবে। এছাড়া দরিদ্র্য মানুষের জীবন মান উন্নয়নে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে এবার ১ লাখ কোটি টাকা ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রণালয়ের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আগামী অর্থবছরের বাজেটের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ওই সময় অর্থমন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছেন করোনা থেকে মানুষের জীবন বাঁচাতে টিকা আমদানির উপর। এছাড়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং দরিদ্র্য মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য বাজেটে বিশেষ কর্মসূচী গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। এর আগে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেট সংক্রান্ত এক বৈঠক শেষে জানিয়েছিলেন, আগামী বাজেট হচ্ছে করোনাভাইরাস মোকাবিলার বাজেট। এ ভাইরাসের হাত থেকে মানুষের জীবন বাঁচানো এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় কাজ। এ কারণে টিকা আমদানিতে প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ব্যবসা-বান্ধব বাজেট প্রণয়নের কথা তিনি জানিয়েছেন।

জানা গেছে, আগামী ৩ জুন জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করা হবে। নতুন অর্থবছরে অর্থ মন্ত্রণালয় ৬ লাখ ২ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা ব্যয়ের খসড়া পরিকল্পনা করেছে। এরমধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে ২ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করার পরিকল্পনা রয়েছে। বিশাল ব্যয় মেটাতে ৩ লাখ ৮৯ হাজার টাকার রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হতে পারে। বাজেটের ঘাটতি মেটাতে দুই লাখ ১৩ হাজার ৮০২ কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এসব খসড়া প্রাক্কলন আগামী কয়েকদিনের মধ্যে চূড়ান্ত হবে। করোনার কারণে আর্থসামাজিক খাতে যেসব সমস্যা দেখা দিয়েছে সেগুলো সমাধান করাই এবারের বাজেটের মূল লক্ষ্য। কর্মসংস্থান সৃষ্টি, অভ্যন্তরীণ চাহিদা ঠিক রাখা এবং রফতানি অব্যাহত রাখতে চায় সরকার। ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছেন, আগামী বাজেটে স্বাস্থ্য, কৃষি ও সামাজিক নিরাপত্তা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে। এজন্য যেখানে যে ধরনের উদ্যোগ দরকার তা নেয়া হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, কর সংগ্রহ বাড়ানোর জন্য স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় জোর দেয়া হবে। করহার না বাড়িয়ে করের আওতা বাড়ানোর উদ্যোগ রয়েছে। এর পাশাপাশি ভ্যাট ফাঁকিরোধে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হবে। ভ্যাট রিটার্ন অনলাইনে দাখিল করা বাধ্যতামূলক করা হবে। যারা অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন না, তাদের জরিমানা গুনতে হবে। ই-পেমেন্ট ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হবে। ভ্যাটের আওতা বাড়াতে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইসের (ইএফডি) ব্যবহার বাড়ানো হবে।

জানা গেছে, অন্যান্য বছরের ধারাবাহিকতায় এবারো দেশে উচ্চাভিলাসী রের্কড বাজেট ঘোষণা করা হবে। বাজেটে আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ লাখ ২ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে বরং ১৪ শতাংশ বেশি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সক্ষমতা বাড়ানো ছাড়াও সংগ্রহ এবং স্থানীয় উৎপাদনের ক্ষেত্রে ভ্যাকসিনের বৈচিত্র্যকরণকে এবার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া উচিত। এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের সাবেক চিফ ইকোনোমিস্ট অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা থেকে অনেক কিছু শিখতে হবে। আগামী বাজেট মানুষের জীবন বাঁচানোর পাশাপাশি অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া প্রয়োজন।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর আগামী বাজেটে করোনার টিকাকে গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানান। এ লক্ষ্যে বাজেটে অন্তত ১৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, প্রথম দিন থেকেই তা বাস্তবায়ন করা যায়। তিনি বলেন, করোনার টিকা যতদিন না হবে, ততদিন একের পর এক ঢেউ আসতে থাকবে। এছাড়া বাজেটে ঘাটতি সাত থেকে আট শতাংশ করা, আদায়যোগ্য রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা, প্রণোদনায় এসএমই খাতকে গুরুত্ব দেয়ার প্রস্তাব দেন তিনি।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি সুরক্ষায় সরকারী অর্থ সাশ্রয়ে আগামী বাজেটে বিলাসী ব্যয় পুরোপুরি নিরুৎসাহিত করা হবে। সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বাড়ানো ও কর্মসংস্থান তৈরিতে বেশি জোর দেয়া হবে। করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় গত এক বছর ধরে চাপের মুখে পড়েছে এনবিআরের রাজস্ব আদায়। এরপরও অর্থনীতি সচল রাখতে এবারো কর ছাড় দিয়ে ব্যবসাবান্ধব বাজেট প্রণয়ন করছে অর্থমন্ত্রণালয়। শিল্পপ্রতিষ্ঠান সচল রেখে উৎপাদন ও রফতানি কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে বিনিয়োগকারীদের নীতিগত সহায়তা দেয়া হবে। নতুন করে কোনখাতে ভ্যাট ও কর আরোপ করা হচ্ছে না। তবে কর ও ভ্যাট দিতে সক্ষম এমন সব নাগরিককে করনেটে নিয়ে আসার উদ্যোগ রয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের। এজন্য কর না বাড়িয়ে করদাতার সংখ্যা বাড়ানো হবে।

জানা গেছে, করোনার অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবেলা করে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পুনরুজ্জীবিত করে অর্থনীতিকে দ্রুত পুনর্গঠন করার কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম কৌশলই হচ্ছে-বিলাসী ব্যয় নিরৎসাহিত করে কর্মসৃজনকে প্রাধান্য দেয়া। ঘন ঘন সরকারী কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর নিরৎসাহিত, অপেক্ষাকৃত অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ থেকে বিরত থাকা এবং নতুন করে কোন অবকাঠামোখাত উন্নয়নে বিনিয়োগ করা থেকে সরে আসা হয়েছে। বিলাসী পণ্য উৎপাদন ও আমদানিতে ভ্যাট ও কর বৃদ্ধি করা হবে। তবে সরকারী চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের তাগিদ রয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারী ব্যয় বৃদ্ধি করারও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর আওতায় হতদরিদ্র ও কর্মহীন হয়ে পড়া নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠী এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মকান্ডে নিয়োজিত জনগণকে সুরক্ষা দিতে সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বাড়ানো হবে। এছাড়া করোনা চিকিৎসা সহজ করতে স্বাস্থ্যখাতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের হাত থেকে মানুষের জীবন বাঁচানোর ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছে বর্তমান সরকার। এজন্য করোনা চিকিৎসা মানুষের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসতে ঢেলে সাজানো হবে স্বাস্থ্যখাত। স্বল্পব্যয়ে করোনার চিকিৎসা সেবা পেতে বেশ কিছু কর্মসূচী নেয়া হবে নতুন বাজেটে। করোনার টিকা আমদানিসহ সার্বিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করণে প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ