পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চীনের ‘উপহার’ পাঁচ লাখ ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা আগামীকাল বুধবার বাংলাদেশে পৌঁছাবে। তবে চীন থেকে কেনা টিকা পেতে বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হবে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত। কারণ অগ্রিম টাকা দিয়ে বাংলাদেশের কেনা সেরামের টিকা ভারত আটকে দিলেও চীন যে সব দেশ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়েছে, তাদের টিকা সরবরাহ করছে। ওই সব দেশের চাহিদা মিটিয়েই বাংলাদেশে টিকা দেবে। তা ছাড়া বাংলাদেশ সরকার সবেমাত্র গত ২৯ এপ্রিল চীনের সিনোফার্মের টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। শুধু তাই নয়, চীন ৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশকে ৫ লাখ ডোজ টিকা উপহার দেয়ার জন্য চিঠি দিয়েছিল; সেই চিঠির জবাব দিতে বাংলাদেশ সময় নিয়েছে তিন মাস।
ঢাকায় কর্মরত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং গতকাল বলেছেন, টিকা নিয়ে দুই দেশের (বাংলাদেশ ও চীন) সরকারের মধ্যে আলোচনা চলছে। বাংলাদেশে টিকা পাঠানোর বিষয়টি চীন ‘খুবই ইতিবাচকভাবে’ দেখছে। কিন্তু সমস্যা হলো বাংলাদেশ সরকার মাত্র এক সপ্তাহ আগে চীনের সিনোফার্মের টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। এখন টিকা পাওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রেতাদের দীর্ঘলাইন তৈরি হয়েছে। আর স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশ টিকার জন্য সেই লাইনের সম্মুখভাগের খুব কাছাকাছি অবস্থানে নেই। আমি বলতে চাইছি, সরকারি পর্যায়ে চীন থেকে কেনা টিকার প্রথম চালান বাংলাদেশের হাতে পেতে আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। তবে ডিসেম্বরের আগে টিকা পাওয়ার আশা না করাই ভালো।
ক্যালেন্ডারের পাতা পেছনে উল্টালে দেখা যায়, ২০২০ সালের ২৭ আগস্ট চীনা কোম্পানির তৈরি টিকা ট্রায়ালের সম্মতি দিয়েছিল বাংলাদেশ। ওই বছরের ২০ আগস্ট ‘করোনাভাইরাসের টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল বাংলাদেশে হওয়া উচিত’ জানিয়ে বিবৃতি দেয়- বাংলাদেশের করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। অতঃপর একটি সেমিনারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশে আমরা চীনের টিকা ট্রায়াল চালাতে দেব’। এনিয়ে মিডিয়ায় ফলাও করে খবর প্রচারের পর হঠাৎ প্রশাসনের দায়িত্বশীল আমলাদের কয়েকজন চীনের টিকা ট্রায়াল চালাতে খরচের প্রসঙ্গ তোলেন। তারা টিকার ট্রায়াল চালানোর মতো অর্থ বাংলাদেশের নেই জানিয়ে দেন; অতঃপর ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত টিকা ক্রয়ের কথা বলেন। এ সময় বাংলাদেশ, ভারত ও চীনের কূটনীতিকদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়। যা মিডিয়ায় ‘টিকা কূটনীতি’ হিসেবে প্রচার পায়।
করোনাভাইরাসের টিকা প্রথম আবিষ্কার করে ফাইজার, অ্যান্ট্রোজেনেকা, গ্যামলিয়া, মডার্না, সিনোভ্যাক। ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পর ‘পরীক্ষামূলক’ প্রয়োগ শুরু হতে না হতেই বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো আবিষ্কার করা টিকার প্রায় তিন চতুর্থাংশ ক্রয়ের জন্য অগ্রিম অর্থ দেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ নিয়ে কঠোর সমালোচনা করে। তারা ‘সবার টিকা পাওয়ার সমান অধিকার’ রয়েছে বলে বিশ্বে জনমত গঠনের উদ্যোগ নেয়। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ায় চীন। ২০২০ সালের ২৭ আগস্ট চীনা কোম্পানি সিনোভ্যাকের ‘সিনোর্ফাম’ টিকা বাংলাদেশে ট্রায়াল চালাতে সম্মত হয়। প্রশাসনে কর্মরত দিল্লির তাবেদার আমলাদের মারপ্যাঁচে চীনের টিকা ট্রায়াল বন্ধ রেখে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার (এসআইই) সঙ্গে টিকা কেনার চুক্তি করা হয়। টিকা নেয়ার লক্ষ্যে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড এবং বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেডের চুক্তিতে সই করেন। অতঃপর ৪ জানুয়ারি সেরামের কাছে অগ্রিম পাঠানো হয় তিন কোটি ডোজ টিকার মূল্য হিসেবে ৬০০ কোটি টাকা। এ টাকা ব্যাংকিং এর মাধ্যমে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়াকে (এসআইই) অ্যাকাউন্টে দেয়া হয়। সরকার থেকে জানানো হয়Ñ ভারত প্রতিমাসে ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন বাংলাদেশে পাঠাবে। ঘোষণা দেয়া হয় ভারত ও বাংলাদেশের মানুষকে একই দিনে টিকা প্রয়োগ শুরু হবে। কিন্তু সেরামের টিকার প্রথম চালানা পাঠানোর পর টিকা রফতানি বন্ধ করে দেয়া হয়। অবশ্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দমোদর মোদি ২৬ মার্চ বাংলাদেশ সফরের সময় ‘উপহার’ হিসেবে ১২ লাখ ডোজ টিকা এনেছিলেন। এর আগে বাড়তি নাম কামানোর জন্য জানুয়ারি মাসে ২০ লাখ ডোজ টিকা উপহার হিসেবে দেয়। চাপাচাপির পর দ্বিতীয় চালান ২০ লাখ ডোজ টিকা পাঠানো হয়। এ ছাড়া ভারতের সেনাপ্রধান ঢাকা সফরের সময় উপহার হিসেবে ১ লাখ ডোজ টিকা নিয়ে আসেন। অথচ ত্রিপক্ষীয় চুক্তি চুক্তি আওতায় ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে বাংলাদেশ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রনেজেকার ৩ কোটি ডোজ টিকা কিনেছে। চুক্তি অনুযায়ী জানুয়ারি থেকে শুরু করে পরবর্তী ৬ মাসে ৫০ লাখ করে ৩ কোটি ডোজ টিকা বাংলাদেশের পাওয়ার কথা। ক্রয় করা টিকার প্রথম চালান ৫০ লাখ ডোজ ও দ্বিতীয় চালান ২০ লাখ ডোজ দেয়ার পর টিকা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
গত ২৪ এপ্রিল বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন স্বীকার করেন- ভারত সরকারের অনুমোদন না পাওয়ার অজুহাতে দুই মাস ধরে বাংলাদেশের টিকার চালান আটকে রেখেছে সেরাম ইনস্টিটিউট। যদিও প্রতিষ্ঠানটিকে আগাম পরিশোধ করা হয়েছে দেড় কোটি ডোজের টাকা। তিনি বলেন, আমার কথা হচ্ছে, আমরা যে টাকা মানে সরকার অগ্রিম টাকা দিয়েছে, টিকা আটকানো কোনোভাবেই তারা (ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট) পারে না। আমাদের সরকারকে খুব দ্রুত ওদেরকে (ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট) স্পষ্ট ভাষায় বলা উচিত, সেরামের টিকা অগ্রিম টাকা দিয়ে কিনেছি, এটা আমাদের দিতেই হবে।
মূলত টিকা নিয়ে মোদির চক্রান্তের অভাস পাওয়া যায় সেরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আদার পুনেওয়ালারের বক্তব্যে। তিনি রয়টার্স, এপিসহ একাধিক সংবাদ সংস্থাকে জানান সেরাম এই মুহূর্তে টিকা রফতানি করতে পারবে না। সিএনএনকে সাক্ষাৎকারে পুনেওয়ালা বলেন, মোদি সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের টিকার চাহিদা না মেটানো পর্যন্ত কোনো দেশে টিকা রফতানি করা যাবে না। বাংলাদেশসহ বিদেশে টিকা রফতানির বিষয়ে তারা ভারত সরকারের কোনো লিখিত নির্দেশনা পাননি। সেরাম ইনস্টিটিউটের লাইসেন্স অনুযায়ী, এই মুহূর্তে টিকা রফতানি করা যাবে না। এমনকি খোলা বাজারেও বিক্রি করা যাবে না। তবে সেরামের কাছে ভারত সরকারসহ সবাইকে দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত টিকা মজুদ রয়েছে। অথচ মোদি সরকার বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত সেরামের টিকার চালান আটকে দিয়েছে।
বাংলাদেশের টিকা পাওয়া প্রসঙ্গে গতকাল ডিপ্লোমেটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের (ডিক্যাব) সদস্যদের সঙ্গে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, টিকা উপহার দেওয়ার জন্য চীন যোগাযোগ করেছিল চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার টিকার জরুরি অনুমোদনের সময় নিয়েছে প্রায় ৩ মাস। এখন টিকা নিয়ে দুই দেশের সরকারের মধ্যে আলোচনা চলছে এবং বাংলাদেশে টিকা পাঠানোর বিষয়টি চীন ‘খুবই ইতিবাচকভাবে’ দেখছে। চীনের টিকার জন্য বাংলাদেশকে কতদিন অপেক্ষা করতে হতে পারে- সেই ধারণা দিতে গিয়ে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, আপাতত আমি যেটুকু বলতে পারি, বাণিজ্যিকভাবে বাংলাদেশের টিকা কেনার জন্য আমার তরফ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা আমি করব। বেইজিংয়ে আমার সহকর্মীরা প্রথমে আমাকে যেটা বলেছে, ওই লাইন এত বেশি দীর্ঘ যে ডিসেম্বরের আগে টিকা পাওয়ার আশা না করাই ভালো। আমি তাদের বলেছি, যত দ্রুত সম্ভব এখানে টিকা দরকার। এরপর আমার মনে হচ্ছে, ডিসেম্বরের অনেক আগেই আমরা পারব, তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ বছরের প্রথমার্ধে সেটা হবে না।
ভারতের মোদি সরকার সেরামের টিকা রফতানি বন্ধ করে দেয়ায় বিপাকে পড়ে যায় বাংলাদেশ। বাধ্য হয়েই বাংলাদেশে প্রথম ডোজ টিকা কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে হয়। প্রথম ডোজ নেয়া ১৩ লাখ মানুষের দ্বিতীয় ডোজ নেয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। সরকার প্রথম ডোজ টিকা দেয়ার কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হয়। এমনকি টিকার জন্য অনলাইনে যে নিবন্ধন হয়ে থাকে সে নিবন্ধন বন্ধ করে দেয়া হয়। অথচ বিশেষজ্ঞদের অভিমত এক কোম্পানির টিকার প্রথম ডোজ নিলে অন্য কোম্পানির টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেয়া ঝুঁকিপূর্ণ।
‘রক্তের সম্পর্ক’ ‘স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক’ প্রতিবেশি ভারতের বন্ধুত্বের নামে প্রতারণার পর বাংলাদেশ চীন, রাশিয়া, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের আবিষ্কৃত টিকা পাওয়ার জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা শুরু করে। এর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে টিকা চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চিঠি দেয়। আবার কয়েকটি দেশের টিকা বাংলাদেশে উৎপাদনের জন্য কয়েকটি কোম্পানি আবেদন করলে তাদের স্বক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কোর কমিটি গঠন করে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গঠিত ‘কোর কমিটি’ গতকাল রাশিয়ার টিকা ‘স্পুতনিক-ভি’ বাংলাদেশেই উৎপাদনের ক্ষেত্রে দুটি ওষুধ কোম্পানির সক্ষমতা রয়েছে বলে মতামত দেয়। তাদের মতে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস ও পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস এ ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে। এর আগে গত বুধবার স্বাস্থ্যসেবাসচিবের নেতৃত্বে পরামর্শক কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় মোট তিনটি কোম্পানির উৎপাদন সক্ষমতার ভিত্তিতে স্কোরিংয়ের মাধ্যমে মূল্যায়ন করে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর ও কোর কমিটিকে চূড়ান্ত সুপারিশ পাঠাতে বলা হয়। এই দুই কোম্পানি ছাড়াও টিকা উৎপাদনের জন্য হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসকে তখন বিবেচনায় নেওয়া হয়েছিল।
এদিকে গত ২৮ এপ্রিল রাশিয়ার টিকা ‘স্পুতনিক-ভি’ এবং ২৯ এপ্রিল চীনের কোম্পানি কিনোভাকের সিনোফার্ম টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ। দেশের বিশেষজ্ঞরা বলছেন ২০২০ সালের ২৭ আগস্ট চীনা কোম্পানির তৈরি টিকা ট্রায়ালের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে এতোদিনে বাংলাদেশে ৪ থেকে ৫ কোটি নাগরিককে টিকার আওতায় আনা সম্ভব হতো। ভারতকে খুশি করতে প্রশাসনের কিছু আমলার দিল্লির তাঁবেদারী মানসিকতাই বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।