Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪, ০৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জমে উঠেছে ঈদবাজার

এস.কে সাত্তার, ঝিনাইগাতী (শেরপুর) থেকে | প্রকাশের সময় : ৯ মে, ২০২১, ১২:০২ এএম

করোনা প্রতিরোধে সর্বাত্মক লকডাউনের কারণে এবং স্থানীয় প্রসাশনের কঠোর তদারকিতে প্রথম দিকে ঈদ বাজার খুব একটা জমে না উঠলেও এক সপ্তাহ আগে থেকে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। ঝিনাইগাতীতে এই করোণাকালীন সময়েও শেষ মূহুর্তে জমে উঠেছে ঈদ বাজার। বিপণী বিতানগুলোতে এখন দেখা যাচ্ছে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভির। চলছে বিক্রেতাদের নানা হাঁক-ডাক। বেড়েছে ব্যাপক ব্যস্ততা।

কিন্তুু এবার অন্যান্য বারের চেয়ে কাপড়সহ অন্যন্য পণ্যের দাম অনেক চড়া। তাই ক্রেতা বিক্রেতাদের মধ্যে চলছে প্রচন্ড দরকষাকষি। কাপড়ের দোকানগুলোতে এখন ঈদ সামনে রেখে বেচাকেনা চলছে পুরোদমে। ঝিনাইগাতীর বড় কাপড় ব্যবসায়ী শিউলি বস্ত্রালয়ের মালিক ঝিলন সেক, অনন্ত মার্কেটের সাগরিকা বস্রালয়ের মালিক শ্রী. কৃষ্ন, মধুমিতা বস্ত্রালয়ের মালিক শ্রী.অজিত চন্দ্র দাস, ফ্যাশন গার্মেন্টস এর মালিক মিজানুর রহমান, মধ্য বাজারের তাহমিনা ফ্যাশনের মালিক আশ্রাফুল আলম বলেন- এ সপ্তাহে আগের চেয়ে মুটামুটি ভালই বেচাকেনা হচ্ছে ঈদ উপলক্ষ্যে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঝিনাইগাতী উপজেলা সদরে বেড়েছে ক্রেতাদের উপস্থিতি আর বেড়েছে বিক্রেতাদের ব্যবস্ততা-সেই সাথে ব্যাপক বেচাকেনা। ব্যবসায়ীরা জানান, এবার এই করোনাকালীন সময়েও মুটামুটি বেচাকেনা ভালই হচ্ছে। তবে কাপড়সহ অন্যান্য জিনিসের দাম বেশী তাই চলছে প্রচন্ড দরকষাকষি। ব্যবসায়ীরা জানান, গত কিছুদিন যাবত ’করোণা ভাইরাস’ আতংকের কারণে বেচাকেনা কম থাকলেও বুধবার থেকেই ভাল বেচাকেনা হচ্ছে। সব ধরণের কাপড়-চোপড়ই এবার ভাল চলছে। তবে প্যান্ট,শার্ট, পিস কাপড়, শাড়ি, লুঙ্গিঁ, বিছানার চাদর, থ্রি-পিস, পায়জামা এবং পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে বেশী। মধ্য বাজারে তাহমিনা ফ্যাশন গার্মেন্টস এ নতুনত্ব আনায় সেখানে দেখা গেছে প্রচুর ক্রেতাভির। শাড়ির বড় বড় দোকানগুলোতে ভারতীয় শাড়ির আধিক্য বেশ চোখে পড়ার মতো। শিউলি বস্ত্রালয়ের মালিক শাড়ির বড় ব্যবসায়ী ঝিলন সেক জানান. ভারতীয় আমদানি করা বিভিন্ন ডিজাইনের আকর্ষণীয় শাড়ির চাদিাই এবার বেশী। তবে সিট কাপড় এবং জুতা-সেন্ডেলের দোকানেও প্রচন্ড ভির দেখা যাচ্ছে।

ক্রেতা ডাঃ আঃ বারি, আলহাজ, রেজাউর রহমান, আলহাজ, শরিফ উদ্দিন সরকার, সরোয়ার্দী দুদু মন্ডল প্রমূখ- জানান জেলা শহর থেকে অনেক ভালো মানের কাপড় আমদানি হয় ঝিনাইগাতীতে। দামের দিকটাও জেলা শহর থেকে উপজেলা শহর ঝিনাইগাতীতেই অনেক সাশ্রয় বলে তারা মণে করেন।

সরেজমিন দেখা গেছে ঝিনাইগাতী উপজেলা সদরসহ গ্রাম-গঞ্জের হাটবাজারগুলোতে ঈদ বাজার এখন বেশ জমজমাট। ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ব্যবসায়ীরাও নানা ধরণের আকর্ষণীয় জিনিসপত্র দোকানের সামনে সাজিয়ে রেখেছেন। জামাল পুর টেইলার্স ,অনুপম টেইলার্স ও কামাল টেইলার্সের মালিকগণ জানান আরো এক সপ্তাহ আগেই তারা অর্ডার নেয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। এ বারের ঈদকে সামনে রেখে ঝিনাইগাতীতে পুরুষ ক্রেতার পাশাপাশি মহিলা ক্রেতাদের বেশী ভির পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিশেষ করে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্রিরা বিকাল বেলায় দোকানগুলোতে পছন্দের জিনিস কেনার জন্য ভির জমাচ্ছে।

ঈদ বাজারে কেনাকাটা আগে থেকেই সেরে ফেলার কাজটি উপজেলা শহরের তুলনায় গ্রামের মানুষ করতে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ঈদ উৎসবে বিকিকিনি জমিয়ে তুলতে দোকান গুলোও সাজানো হয়েছে মনোরমভাবে- তবে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুবেল মাহমুদ। উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গার্মেন্টস দোকানে রেডিমেট পোশাক, জুতা, এবং এস.কে সাত্তার মার্কেটের আতিক স্টোর প্রসাধনী দোকানে উপচেপড়া ভির। এবার সবচে আকর্ষনীয় বিষয় হচ্ছে তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে শিশুদের পোশাক পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে নানা বাহারি নাম দিয়ে। মেয়েদের সেলাইবিহীন থ্রি-পিস চলছে সবচে বেশি। ছেলে শিশুদের কার্টুন আঁকা শার্ট এবং গেঞ্জি ও বিভিন্ন ধরণের সার্ট-প্যান্ট-গেঞ্জি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে। মেয়েদের ঝিলিক, ওয়ানটেক, ফুলকি এবং ফ্লোক নামে বিভিন্ন ধরনের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে ঈদ বাজরে। এ ছাড়াও টাঙ্গাইলের শাড়ীর প্রচুর কদর রয়েছে বলে জানান শিউলি বস্ত্র বিতানের মালিক ঝিলন সেক। ঝিনাইগাতীর ঈদ বাজারে এখন সবচে বেশী বিক্রি হচ্ছে শর্ট জামা- শর্ট পাঞ্জাবির সাথে জিন্সের প্যান্ট। তাছাড়াও বডি ফিটিং গেঞ্জির চাহিদাও প্রচুর বলে জানান তাহমিনা গার্মেন্টস এন্ড ফ্যাশন হাউজের মালিক আশ্রাফুল আলম। জানা যায়, তরুণরাই এসব পোশাকের মূল ক্রেতা। আর অপেক্ষাকৃত বয়স্করা কিনছেন সুতি পাজামা-পাঞ্জাবি। অনেক তরুণদের পছন্দ ও শর্ট পাঞ্জাবি। শর্ট পাঞ্জাবি ১০০০থেকে ২০০০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। এ ছাড়াও মহিলাদের প্রধান আকর্ষণ বাহারি অলংকার ও কসমেটিকসসহ নানা পণ্য। তবে স্বর্ণালংকারের দাম বেশী হওয়ায় এবার বেচাকেনা কম হচ্ছে বলে জানান ঝিনাইগাতী জুয়েলারী ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি ও সরাফত জুয়েলারীর মালিক মো. সরোয়ারদী দুদু মন্ডল। সার্বিক অবস্থাদৃষ্টে মণে হচ্ছে এসব কাপড়-চোপড় থেকে শুরু করে অন্যান্য পণ্য এ বছর দাম অনেক বেশী থাকায় সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। তার পরও ঈদ বলে কথা। এ ছাড়া দাম যাই হোক না কেন যার যেমন সামর্থ্য সে অনুযায়ী পছন্দের পণ্যটি কিনে বাড়ী ফিরছেন ক্রেতারা। আবার কাউ কে বা ঋণ করে হলেও সাড়তে হচ্ছে উৎসবÑ এ ভাবেই মন্তব্য করেছেন গ্রামের বেশ কিছু হতদরিদ্র মানুষ।

ঝিনাইগাতী বণিক সমিতির সেক্রেটারী ফারুক আহাম্মেদ জানান. গ্রামের কাস্টমারের চাপ বেড়েছে, তারা স্বাস্থ্য বিধির কি বুঝে বলুন? সুতরাং একটু ছাড়তো দিতেই হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুবেল মাহমুদ বলেন, ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনা করে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তার পরও যদি কেউ গাফিলতি করে তবে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। আশা করি সমস্যা হবে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ