Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

ফরিদপুর সরকারি শিশু পরিবারের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

‘শিশু পরিবারের অভ্যন্তরে নানান প্রজাতির মূল্যবান বেশ কিছু গাছ ছিল। সে গাছ হঠাৎ করে উধাও হয়ে গেল’

আনোয়ার জাহিদ, ফরিদপুর থেকে | প্রকাশের সময় : ৯ মে, ২০২১, ১২:০২ এএম

কেমন আছে ফরিদপুর সরকারি শিশু পরিবারের এতিম শিশুরা? এদের খবর নিবে কে? ওরা তিন বেলা কি খায়? অপুষ্টিতে অসুস্থ ও ক্লান্ত অবস্থায় এতিম শিশুরা কাবু হয়ে উঠছে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। কথায় আছে, মা মারা গেলে ৯০% বাবাই সন্তানের খেয়াল রাখেন না। ওখানকার সব শিশুরাই মা অথবা বাবা হারা। মোট কথা অসহায় ও এতিম। এদের অবস্থা তো আরো অসহায়।

এলাকাবাসীর অভিযোগে আরো জানা যায়, প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ সরকারি অবোকাঠামো ও ভূ-প্রকৃতি পরিবর্তন করে অভিনব কৌশলে একটি ছোট পুকুরকে বহিরাগত জনৈক ইটভাটা মালিকের কাছে শত শত ট্রাক মাটি বিক্রী করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ভাটা মালিক দু’জনেই খুব লাভবান হয়েছে। শিশু পরিবারের মধ্যে একাধিক পুরাতন সেমিপাকা স্কুল ঘর ভেঙে ইট, কাট, টিন, জানালা-দরজা বিক্রি করা শিশু পরিবারের বহু পুরাতন সেফটি ট্যাংকি, ভাংগা ইট কোন খাতে ব্যয় হয়েছে তাও জানা প্রয়োজন।

প্রত্যক্ষ্যদর্শীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিনিধিকে বলেন, শিশু পরিবারের অভ্যন্তরে নানান প্রজাতির মূল্যবান বেশ কিছু গাছ ছিল। সে গাছ হঠাৎ করে উধাও হয়ে গেল। স্থানীয়রা সংশ্লিষ্ট দপ্তর তথা, বনবিভাগ, গণপূর্ত বিভাগ ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে খবর নিয়ে কোন সঠিক তথ্য পাননি বলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের ক্ষোভ। অভিযোগ উঠছে, সরকারি শিশু বালিকা নিবাসের কল্যাণ তহবিল, কৃষিপণ্য ও পুকুরের মাছ বিক্রির লাখ লাখ টাকার সরকারি অর্থ কোন খাতে ব্যয় হয়েছে তা কেউ জানে না। ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে সরকারের অর্থ ও সম্পদ লোপাটের প্রতিযোগিতা হয় কিনা এ বিষয়টি সরকারি স্বার্থে তদারকি হও দরকার। যত্রতত্র ব্যবহার হচ্ছে সরকারি গাড়ি।

এই বিষয়ে সরকারি শিশু পরিবারের সহকারী পরিচালক মো. নুরুল হুদা জানান, উল্লিখিত অভিযোগ এবং ঘটনাবলি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমাকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য কেউ এ মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করতে পারে বলে আমি মনে করি। আমি সরকারের একজন প্রতিনিধি। আমি সবসময় উন্নয়নমূখী চিন্তা করি। এতিমদের বিষয়ে তিনি জানান, শিশু আইন ২০১৩ অনুযায়ী দুঃস্থ্য ও অসহায় শিশুদের আসন সাপেক্ষে বাচ্চাদের ভর্তি করা হয়। এখানে মোট ১৭৫ জন বালক এবং ১৭৫ জন বালিকা ভর্তি আছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সকল শিশুদের পোশাক, চিকিৎসা, খাবার ও আবাসন ব্যবস্থা মানসম্পন্ন পরিবেশে তাদেরকে রাখা হয়। সরকারি বাজেট অনুযায়ী সকল খরচ বাবদ একটি শিশুর মাসে ৩৫০০ টাকা বরাদ্দ আছে। তাদের কোন দিকেই কোন সমস্যা নাই।

এ বিষয়ে কথা হয় শিশু পরিবারের ২ জন ছাত্রের সাথে। তারা নাম পরিচয় না প্রকাশের শর্তে বলেন, বড় ভাই আমরা এতিম, আমাদের বড় স্যার এবং তার স্ত্রী ২ জনই সহকারী পরিচালক। আমরা ভালো-মন্দ কিছুই বলতে পারবো না। উচিৎ কথা বললে আমাদের নাম কেটে বিদায় দিয়ে দিবে। ৩ বেলা খেয়ে পরে বেঁচে আছি এই আমাদের ভালো। খাবার সময় আসলেই দেখতে পারবেন আমরা কি খাই।

এ প্রসঙ্গে ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুম রেজা জানান, ফরিদপুর সরকারি এতিম খানার পদাধিকার বলে সভাপতি জেলা প্রশাসক মহোদয়। এটি জেলা সমাজসেবা অফিসের একটি প্রতিষ্ঠান। তারপরও আমরা যদি সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ পাই তাহলে উচ্চপর্যায়ে আলোচনা সাপেক্ষে অবশ্যই ব্যবস্থা নিবো। তিনি আরো বলেন, মাঝে মধ্যে আমরা এতিমখানায় পরিদর্শনে যাই। অফিসারদের সামনে বাচ্চারা মুখ খুলে না এটা আমরা বুঝি।

সর্বশেষ সরকারি শিশু পরিবারের উন্নয়নমূলক কাজ করেন (ঠিকাদার) মো. গালিবুজ্জামান জানান, ভাই আমি এই প্রতিষ্ঠানের লাখ লাখ টাকার কাজ করেছি। এখনো আমি ৪৫ লাখ টাকার বিল পাইনি। এতিমদের প্রতিষ্ঠান আমি পছন্দ করি তাই নিজের মনে করেই কাজ করি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ