Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফেরিঘাটে উপচেপড়া ভিড়

স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই লকডাউন উপেক্ষা করে লোকজন ছুটছে গ্রামের বাড়ি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ মে, ২০২১, ১২:০০ এএম

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সারা দেশে সরকার ঘোষিত লকডাউন চলছে। লকডাউন কার্যকর করতে দূরপাল্লার বাস এবং লঞ্চ ও ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ঈদে যে যেখানে আছেন সেখানে অবস্থান করে ঈদ উদযাপনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারপরও এসব মানছে না কেউ কেউ। আসন্ন ঈদুল ফিতরের আরো বেশ কয়েকদিন বাকি। এর মধ্যেই লকডাউন উপেক্ষা করে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে অনেকেই নাড়ির টানে ছুটছেন বাড়ির পানে। বিশেষ করে গতকাল শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ঘাট ও দৌলতদিয়া ঘাটে দক্ষিণবঙ্গের ঘরমুখো মানুষের ছিল প্রচণ্ড ভিড়। সকালে এসব ফেরিঘাটে দেখা গেছে যাত্রীদের ভিড় ও যানবাহনের দীর্ঘ সারি। শিমুলিয়া ফেরি ঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় আটকা পড়েছে ব্যক্তিগত ও পণ্যবাহী সহস্রাধিক যানবাহন।
সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্য মতে, সকাল থেকেই যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছাতে শিমুলিয়া ঘাট এলাকায় এসে জড়ো হন। পদ্মায় লঞ্চ ও স্পিডবোট বন্ধ থাকায় ফেরিতে যাত্রীদের চাপ অনেক বেড়ে যায়। ফেরিতে যাত্রীদের চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হয় ঘাট কর্তৃপক্ষকে। এদিকে, অত্যধিক চাপে ফেরিগুলোতে পার করা যাচ্ছে না গাড়ি। এতে ঘাট এলাকায় পারাপারের অপেক্ষায় আটকা পড়েছে ব্যক্তিগত ও পণ্যবাহী সহস্রাধিক যানবাহন। নৌরুটে বর্তমানে ১৩টি ফেরি সচল রয়েছে বলে জানিয়ে শিমুলিয়াঘাট কর্তৃপক্ষ। ফেরিতে যাত্রীরা গাদাগাদি করে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে সংক্রমণ ঝুঁকি নিয়ে পদ্মা পার হচ্ছেন। দৌলতদিয়া ঘাটে প্রতিটি ফেরিতেই ছিল যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। তাতে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই। অনেকের মুখে ছিল না কোনো মাস্ক। পাটুরিয়া থেকে ছেড়ে আসা খানজাহান আলী ফেরিতে গাদাগাদি করে কয়েক শত যাত্রী এক সাথে নদী পার হয়েছে। অন্যদিকে আরেকটি ফেরিতে ৩০-৩৫টি ব্যক্তিগত গাড়ি পার করা হয়েছে।
ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) সাফায়াত আহম্মেদ বলেন, ঈদ সামনে রেখে ঘাটে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ প্রচণ্ড। যাত্রীদের কারণে ফেরিগুলোতে গাড়ি লোড করা যাচ্ছে না। ফেরি ঘাটে এলেই যাত্রীরা তাতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। ১৩টি ফেরিতে যাত্রী ও যানবাহন পার হচ্ছে। অতিরিক্ত চাপ সামাল দিতে খেতে হচ্ছে হিমশিম। মানুষের মধ্যে করোনা নিয়ে কোনো ভাবনা নেই। এত বলাবলি করেও যাত্রীদের সচেতন করা যাচ্ছে না।
শিমুলিয়া ফেরিঘাটে সকাল থেকেই যাত্রীদের ভিড় ছিল প্রচুর। বৃহস্পতিবার শেষ রাত থেকেই বিভিন্ন যানবাহনে এসে মানুষ ধীরে ধীরে ঘাটে জড় হতে থাকে। এই নৌপথে দক্ষিণ অঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ যাতায়াত করছে। গতকাল সকালে ঘাটে যানবাহনের চাপ স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কয়েক গুণ বেড়ে যায়। বেলা ১১টা নাগাদ ঘাটে যানবাহন ও মানুষের প্রচন্ড ভিড় জমে যায়। শিমুলিয়া ঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় সহস্রাধিক যানবাহন। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে চলাচলে বিধিনিষেধ থাকলেও মানুষের মধ্যে তেমন সতর্কতা নেই। প্রতিটি ফেরিতে ঢাকা থেকে আসা যাত্রীদের ভিড় ছিল। গায়ে গা ঘেঁষে, কেউ মাস্ক পরে, আবার কেউ মাস্ক ছাড়া পদ্মা পার হওয়ার জন্য ফেরিঘাটে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেছেন। সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা লক্ষ করা যায়নি।
ফেরিঘাট সূত্রে জানা যায়, যাত্রীদের চাপের কারণেই শিমুলিয়া থেকে একটি ফেরিতে কোনো গাড়ি উঠতে পারেনি। ওই ফেরিটিতে প্রায় ১২শ’ যাত্রী পার হয়েছে। বাংলাবাজার ঘাট সূত্রে জানা যায়, যাত্রীদের পারাপারের জন্য ফেরির বিকল্প কোনো নৌযান না থাকায় ফেরিতে যাত্রীদের প্রচুর চাপ ছিল। ঘাটে ফেরি ভিড়লেই যাত্রী হুড়মুড় করে উঠে যায়। এতে করে গাড়ি উঠতে পারে না ফেরিতে। বাধ্য হয়েই শুধু যাত্রীদের নিয়ে ফেরি চলাচল করেছে।
এদিকে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় দূর পাল্লার যাত্রীরা শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটে এসে বিপাকে পড়ছে। মাইক্রোবাস, থ্রি হুইলার আর মোটরসাইকেলযোগে যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে বাড়ি ফেরা যাত্রীদের দুর্ভোগ বেশি। দীর্ঘপথে তাদের কয়েক দফা গাড়ি পাল্টে যেতে হচ্ছে। আর গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া।
ঢাকা থেকে আসা বরিশালগামী অব্দুল ছাত্তার বলেন, ঈদে বাড়ি তো যেতে হবে। বাড়িতে বাবা অসুস্থ। বৃদ্ধ মা আছেন। আমি তাদের একমাত্র সন্তান। তাই যে ভাবেই হোক বাড়ি আমাকে যেতেই হবে। আর বাড়ি যেতে হলে পদ্মা পার হতেই হবে। ঘাটে তো আবার লঞ্চ-স্পিডবোট সবই বন্ধ। তাই বাধ্য হয়ে একমাত্র ফেরিতে পার হতে হচ্ছে। ভিড় ঠেলে অনেক কষ্টে ফেরিতে যেতে হচ্ছে।
ঢাকা থেকে খুলনাগামী যাত্রী মর্তুজা বলেন, বউ ছেলে মেয়ে গ্রামের বাড়িতে আছে। আছেন বৃদ্ধ মা। দীর্ঘদিন ধরে বাড়ি যাই না। তাই তাদের সাথে ঈদ করতে বাড়ি যাচ্ছি। অনেক ভিড় আর গরমে প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে। এর মধ্যে মাস্ক পরে আছি। করোনার ঝুঁকি তো আছেই। তারপরও বউ ছেলে মেয়ে আর বৃদ্ধ মাকে নিয়ে ঈদ করার আনন্দ তো আলাদা। মা আর ছেলে মেয়ের কথা মনে হলে তখন কোনো কিছুকেই আর ঝুঁকি মনে হয় না।
এদিকে জেলার অভ্যন্তরে গণপরিহন চলাচল শুরু হলেও ভোগান্তি এড়াতে দূর-দূরান্তের যাত্রীরা দৌলতদিয়া প্রান্ত থেকে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে গাদাগাদি করে মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, মাহেন্দ্রা, অটোরিকশা, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন বাহনে তাদের গন্তব্যে যাচ্ছেন। এসময় পাটুরিয়া থেকে দৌলতদিয়া ঘাটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি ফেরিতে ব্যক্তিগত ও ভাড়ায় চালিত ছোট গাড়ি, মোটরসাইকেল ও যাত্রীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। অনেকের মুখে দেখা যায়নি কোনো মাস্ক।
বরিশালের যাত্রী আছিয়া খাতুন, ফিরোজ মোল্লা, নাজিম উদ্দিনসহ অনেকে জানান, ঝুঁকি আছে জেনেও তারা প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়িতে যাচ্ছেন। কিন্তু পথে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। বাসে উঠে জেলার শেষ সীমানায় নামতে হয় এবং দিতে হয় বাড়তি ভাড়া। তারা আরো বলেন, অনেকে ব্যক্তিগতভাবে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে গাড়ি ভাড়া করে গন্তব্যে যাচ্ছে। সেখানে প্রতিটি সিটে বহন করা হচ্ছে যাত্রী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ