Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

জমির প্রাণ সবুজ সার ধৈঞ্চা হারিয়ে যাচ্ছে

এখন স্মৃতি হাতড়ে বেড়ান বগুড়ার কৃষক-ভোক্তারা

মহসিন রাজু | প্রকাশের সময় : ৭ মে, ২০২১, ১২:০৩ এএম

এক সময় জমির কমন ফসল ছিল ধৈঞ্চার চাষ। জমির প্রাণ ফেরাতে কৃষকরা নিয়মিত সবুজ (জৈব) সার হিসাবে ব্যবহার করতেন ধৈঞ্চা। কিন্তু কালের প্রভাবে জমিতে হাইব্রিড ফসল আর রাসায়নিক সারের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় প্রায় উঠেই যাচ্ছে ধৈঞ্চার চাষ।
এরফলে ক্রমশ মাটি হারাচ্ছে তার স্বাভাবিক প্রাণশক্তি। এভাবে চলতে থাকলে মাটি হারিয়ে ফেলবে তার স্বাভাবিক উর্বরা শক্তি। বাড়বে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার। সে সঙ্গে বৃদ্ধি পাবে চাষবাসের খরচ!
ধৈঞ্চার চাষের অতিতের স্মৃতি হাতড়ে বগুড়া সদরের শাখারিয়া পল্লীর প্রান্তিক কৃষক মামুনের ভাষায়, আগের আমলের বাপ দাদারা ফি বছর একবার ধৈঞ্চার চাষ করতেনই। মোটামুটি একমাসের মধ্যেই সবুজ চারায় ছেয়ে যেত ফসলের মাঠ। কি সুন্দর ছিল নরম ও সবুজ ধৈঞ্চার ক্ষেত।
তিনি আরো বলেন, জমি থেকে ধৈঞ্চা কেটে পুরো জমিতেই ছিটিয়ে লাঙল চালিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া হত। সপ্তাহের মধ্যেই জমিতে ধৈঞ্চা পচে মাটির সাথে মিশে যেত। মিটে যেত জৈব সারের চাহিদা। এরপর ওই জমিতে ফসল ফলতো বেশুমার প্রচুর। কিন্তু এখন কি যে দিনকাল পড়লো; জমিতে সবুজ সার ও গোবর সারের পাউশ দেওয়া (ব্যবহার) বন্ধ হয়ে গেল।
বগুড়ার কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জুলফিকার হায়দার ইনকিলাবকে জানালেন, ধৈঞ্চার ব্যবহার এখন কমে গেলেও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। বগুড়ার সারিয়াকান্দির চরাঞ্চলের কৃষকরা এখনও রাসায়নিক সারের পরিবর্তে গোবরের পাউশ ও ধৈঞ্চার ব্যবহার করছেন। এর ফলে ওই এলাকার উৎপাদিত মশুর, খেসারি প্রভৃতি ডাল, গাইঞ্জা জাতীয় ধান, কাউন, মরিচ, বাদাম প্রভৃতির মান ও স্বাদ একটু ভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে তারা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের ধৈঞ্চার মত প্রাকৃতিক সবুজ সারের ব্যবহার বাড়ানোর জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন। কৃষকদের নিয়মিত রাসায়নিক সার, বীজ ও কীটনাশকের ব্যবহারের কুফল সম্পর্কে বুঝানো হচ্ছে।
কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে গবেষণা করে দেখা গেছে, কৃষক পর্যায়ে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমানো গেলে মাটিতে ফসলের জন্য উপকারি পোকা মাকড়, কেঁচো প্রভৃতির বংশ বিস্তার হবে। এরফলে জমিতে উৎপন্ন বিভিন্ন ফল ও ফসলের উৎপাদন খরচ অনেক কমে যাবে। আর কৃষকদের সাথে সাথে উপকৃত হবেন ভোক্তারাও।

 

 



 

Show all comments
  • Nayan Fakir ৮ মে, ২০২১, ১২:৪৬ পিএম says : 0
    মাটির উপাদান হল ৪ চার টি ১/ খনিজ৪৫% ২/ পানি ২৫% ৩ / বায়ু২৫%৪/ জৈব৫%। এই জৈব কে মাটির প্রান বলাহয়। বলাহয় এই চারটি উপাদান মিলে তৈরি হয় উর্বর মাটি বাংলাদেশের মাটিতে মাএ ২.৭৫% জৈব পদার্থ আছে। যা খুবই নগন্যতা।বর্তমান যে হারে রাসায়নিক সার এর ব্যবহার চলছে এতে যেমন এক দিকে জমির উর্বরতা হারাচ্ছে তেমনি পরিবেশের উপর ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে।তাই আমাদের এখন বেশি করে সবুজ সার এবং জৈব সার ব্যাবহার করতে হবে।তা না হলে এক সময় মাটি বন্ধা হয়ে যাবে তাতে আর কোন ফসল ফলবে না। আশাকরি বুঝতে পরছেন সবুজ সার এবং জৈব সার জমিতে ব্যাবহার কতটা জরুর। তাই আসুন আমারা রাসায়নিক সার এর পরিবর্তে জৈব সার এর ব্যাবহার করি। এবং। জমিতে রাসায়নিক সার ব্যাবহারের চাইতে জৈব সারে খরচ কম।ফলন ও বেশি হয় এবং মাটির প্রান রক্ষা হয়।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সবুজ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ