Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দক্ষিনাঞ্চলে ‘কঠোর লকডাউন’-এ ঈদ বাজারে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে মানুষ

স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মানছে না কেউ

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৬ মে, ২০২১, ৫:৫০ পিএম

সরকার ঘোষিত ‘কঠোর লকডাউন’ (?)-এর মধ্যেই বরিশাল মহানগরী সহ দক্ষিণাঞ্চলে ঈদের বাজারে নুন্যতম সামাজিক দুরত্ব দুরের কথা, মাস্ক পড়ার বিষয়টিও যথযথভাবে অনুসরন হচ্ছে না। লকডাউনের বাস্তব অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যাচ্ছে না কোথাও। বৃহস্পতিবার থেকে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাসুমহের অভ্যন্তরীন রুটে গন পরিবহন চলাচল শুরু হওয়ায় আন্তঃজেলা যোগাযোগ বন্ধের বিষয়টি অনেকটাই গৌন হয়ে পড়েছে। তবে এরপরেও দক্ষিনাঞ্চলের সাথে উত্তরবঙ্গের সড়ক পরিবহন কার্যত বন্ধ রয়েছে।
কিন্তু দক্ষিনাঞ্চল থেকে রাজধনী ঢাকা ছাড়াও খুলনা বিভাগের প্রায় সব জেলাতেই সড়ক পরিবহন চালু হয়েছে নানা বিকল্প ব্যবস্থায়। আর জেলাগুলোর অভ্যন্তরীন রুটে যে পরিবহন ব্যবস্থা চালু হয়েছে, তাতেও সমাজিক দুরত্ব সহ স্বাস্থ্যবিধি বলতে কিছু নেই। দুরপাল্লার সড়ক পরিবহন বন্ধ থাকলেও দক্ষিণাঞ্চল সবগুলো জেলাÑউপজেলায় সব ধরনের যানবাহন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। বরিশাল মহানগরী থেকে থ্রী-হুইলার যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে ঢাকার কাছে ১৩০ কিলোমিটার দুরের কঠালবাড়ী ঘাটেও।
এদিকে দোকানপাট খুলে দেয়ার সুবাদে দক্ষিণাঞ্চলের সর্বত্রই ঈদের বাজারে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে নারীÑপুরুষ। ফলে বরিশাল মহানগরী সহ দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও লকডাউনের দৃশ্যমান অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা। বানিজ্যিক এলাকাগুলো সহ বিপনি বিতানের বেশীরভাগ ক্রেতা-বিক্রেতাদের মাস্ক পর্যন্ত নেই। সামাজিক দুরত্ব মানার বিষয়টি কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে। তবে প্রায় প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনেই মাস্ক পড়ার অনুরোধ সম্বলিত কাগজ ঝুলছে। কিন্তু ক্রেতা বিক্রেতা কারো মাঝেই করোনা মহামারি নিয়ে উদ্বেগ বা সচেতনতা লক্ষণীয় নয়।
অথচ দক্ষিনাঞ্চল করোনা সংক্রমন আর মৃত্যুর মিছিল থেমে নেই । শুধুমাত্র এপ্রিল মাসেই দক্ষিনাঞ্চলে সরকারীভাবে করোনা সংক্রমনের সংখ্যা ৩ হাজার ২শ জনের মধ্যে মারা গেছেন ৫০ জন। আর গত ১৪ মাসে এ অঞ্চলে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। মারা গেছেন প্রায় ২৭০ জন। এমনকি এপ্রিল মাস যুড়েই দক্ষিনাঞ্চলে মৃত্যুর মিছিল ক্রমশ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে। মে মাসের প্রথম ৬ দিনেও মারা গেছেন ৭ জন। যারমধ্যে বরিশাল মহানগরীতেই ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলে এখনো করোনা সনাক্তের হার ১৫.২৬%। আর মৃত্যু হার এখন ১.৮২%। যা জাতীয় হারের অনেক বেশী।
কিন্তু এরপরেও স্বাস্থ্য বিধি মানা সহ নিজেকে নিরাপদে রাখার নুন্যতম কোন আগ্রহ নেই বেশীরভাগ মানুষের। এখন সবাই ঈদের কেনাকাটায় ব্যস্ত। ব্যবসয়ীরাও জীবনে চেয়ে ব্যবসা ব্যবসাকে অতিমাত্রায় গুরুত্ব দিচ্ছেন। আর জনস্বার্থে সরকারী স্বাস্থ্যবিধি পালনে তেমন কোন পদক্ষেপও নেই। বরিশাল মহানগরী সহ এ অঞ্চলের প্রতিটি শহরেই রাস্তার মোড়ে আড্ডাবাজি সহ কিশোর সন্ত্রাশীদের বিবেকহীন নোংরামী থেকে শুরু করে উঠতি বয়সীদের সর্বক্ষেত্রে বেপরোয়া কর্মকান্ডও অব্যাহত রয়েছে।
চিকিৎসা বিজ্ঞান ‘করোনা প্রতিরোধে লাকডাউনের বিকল্প নেই’ বলে চিৎকার দিলেও তা পাত্তা দিচ্ছে না বিবেকহীন মানুষ। এসব বিকেহীনের কর্মকান্ডে এ অঞ্চলের জনস্বাস্থ্যই ক্রমাগত ঝুকির কবলে বলে মন্তব্য করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য বিভাগের একাধীক দায়িত্বশীল কর্মকর্তাও। তাদের মতে, ‘গত বছর ঈদের পরে করোনা সংক্রমন যেভাবে বেড়েছিল, তা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার পরিস্থিতি সামাল না দিলে আরো ভয়াবহ পরিনতির সম্মুখিন হতে হবে’।
এমনকি পরিস্থিতি সামাল দিতে দক্ষিণাঞ্চলের বেশীরভাগ স্থানীয় সরকার প্রশাসনের ভ’মিকা এখনো পুরোপুরি জনকল্যান মুখি নয় বলেও অভিযোগ রয়েছে সরকারী প্রশাসনেরও। পাশাপাশি পুলিশ-প্রশাসনকেও সরকারের কঠোর লকডাউন বাস্তবয়নে পুনরায় কঠিন পদক্ষেপ গ্রহনের তাগিদ দিয়েছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞগন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ