বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ।সরকার একাধিকবার স্কুল খোলার উদ্যোগ নিলেও শেষ পর্যন্ত আর খোলা হয়নি। ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে নানা মানসিক সমস্যা, চাপ, একাকীত্ব, মনোবলহীনতা, অস্থিরতা ও দুঃশ্চিন্তাসহ বিচিত্র সব সমস্যা। শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া থেকেই ওঠে আসে এই ভয়াবহ চিত্র। আর বিশেষজ্ঞদের কথায়ও ওঠে এসেছে শিক্ষার্থীদের নানা শারীরিক ও মানসিক সমস্যার কথা। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বাজেটে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং ইউনিসেফসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসার সুপারিশ তাদের।
ফেনীর শাহীন একাডেমী স্কুল এন্ড কলেজের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ফারহান হোসেন শাফী। শাফী ইনকিলাবকে জানান, গত বছর সমাপনী পরীক্ষা দেয়ার যাবতীয় প্রস্তুতি নিলেও পরীক্ষাটি দিতে না পারায় তার মনে অনেক কষ্ট। থাকার ঘরটিকে সে ‘কারাগার’র সাথে তুলনা করছে।করোনাময় পরিবেশকে তার ‘অসহনীয়’ বলেও আখ্যা দেন ফেনী সাউথ ইস্ট ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক ইমরান হোসেন সেলিমের এই সন্তান। মৌলভীবাজার আলী আমজাদ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী নুসরাত জাহান নীলা এই প্রতিবেদককে জানান, ছুটি যতই বাড়ছে, আমরা ততই পিছিয়ে পড়ছি। স্কুল বন্ধ থাকায় আমরা বন্ধুদের মিস করছি। তাই মন খুবই খারাপ। ২০১৯ সালের পড়ার অর্ধেকও ২০২০ সালে হয়নি বলে জানান স্থানীয় থানার পুলিশ কর্মকর্তা বাবু খানের মেয়ে নীলা।
ঢাকার স্কলাসটিকা স্কুল, মীরপুর শাখার ‘এ’ লেভেলের ছাত্র রোহান খান চৌধুরী ইনকিলাবকে জানান, শিক্ষকদের সামনাসামনি ক্লাস হলে প্রপারলি কমিউনিকেশন করা যায়।ফ্র্যাঙ্কলি আস্কিং করা যায়।যে কোনো বিষয় সহজে সলভ হয়ে যায়। কিন্তু অনলাইনে তো তা সম্ভব হয় না।তাছাড়া বিদ্যুৎ বা নেটওয়ার্কও অনেক সময় থাকে না। ফলে অমরা অনেককিছু মিস করি।কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয কলেজের প্রতিষ্ঠাতা মোশাররফ খান চৌধুরীর ছেলে রোহান বিশ্বব্যাপি করোনার নতুন মাত্রা নিয়ে তার আতঙ্কের কথাও ব্যক্ত করেন এই প্রতিবেদকের নিকট। ঢাকা আদমজী ক্যান্টনমেন্ট স্কুলের ইংরেজি ভার্সনের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র মিনহাজ খান জানান, করোনার কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় আমার মোটেও ভালো লাগছে না। পুরো দিন বাসায় বসে টিভি দেখি।বন্ধুর সাথে মোবাইলে কথা বলি। আইপ্যাডে ইংলিশ মুভি দেখি। তার মতে, এমন পরিবেশ আমার ভালো লাগে না।
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে অবস্থিত আল-হেরা ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র শান্ত জানায়, তারও বাসায় বসে টিভি দেখে দিনের বেশিরভাগ সময়।একই অবস্থার কথা তুলে ধরেন রাজধানীর মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্র গাজী আবদুল্লাহ রাশীদ, কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ফজলুর রহমান কলেজ অব টেনোলজি’র নবম শ্রেণির ছাত্র ফাহান নাসিফ ও পীরযাত্রাপুর জোবেদা খাতুন কলেজের প্রভাষক ইকবাল হোসেনের মেয়ে ইশরাত জাহান ইরিন।ইরিন জানায়, ‘আঙ্কেল, গতবছর বাবা যে স্কুল ড্রেসটি তৈরি করিয়ে এনে দিয়েছিলেন, আমি তো স্কুলে যেতে পারিনি, এবার এই জামাটা আমার গায়ে লাগছে না। এসব যেন সারাদেশের শিক্ষার্থীদের সমস্যার চিত্র।
প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ও সাবেক পরিচালক ড. তানিয়া রহমান ইনকিলাবকে বলেন, দীর্ঘসময় স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের উপর সাংঘাতিক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তাদের দৈন্যন্দিন জীবনের রুটিনটাই বদলে গেছে।আগে যেমন স্কুলে যেতে হতো, রুটিন অনুযায়ী সবকিছু করতে হতো, পুরো সিস্টেমটাই এখন নষ্ট হয়ে গেছে।খাওয়া, ঘুম, পড়া থেকে শুরু করে সবকিছুতে বিশৃঙখলা চলে এসেছে।বেশি সময় নেটে থাকায় চোখের সমস্যা হচ্ছে। কেউবা কিশোর গ্যাংয়ের সাথে যুক্ত হচ্ছে। অন্যান্য বাজে অভ্যাসগুলোতে তারা অভ্যস্ত হচ্ছে। কারাবন্দী জীবনের প্রশ্ন তোলায় তিনি বলেন, সত্যিই তো, তারা একরকম কারাবন্দী জীবন যাপন করছে, যেখান থেকে তাদেরকে উদ্ধার করা খুবই জরুরি। শিক্ষার্থীদের এমন ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে এবং ইউনিসেফসহ শিশুদের নিয়ে কাজ করে এমন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।
শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও বিএমএ, কুমিল্লার সাবেক সভাপতি ডা. ইকবাল আনোয়ার ইনকিলাবকে বলেন, শিশুরা লেখাপড়া পছন্দ করে।করোনার কারণে লেখাপড়া থেকে পিছিয়ে পড়ায় তাদের মনে অনেক দুঃখবোধ কাজ করছে।বন্ধু পাচ্ছে না বলে একাকীত্ব ফিল করছে।বাবা মা দুজনই চাকুরিজীবী হলে ওই শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা আরও খারাপ। তাদের মধ্যে মানসিক চাপ, অস্থিরতা ও মনোবলহীনতাসহ নানা মানসিক সমস্যা ও রোগ তৈরি হচ্ছে।মোবাইলে অতিমাত্রায় গেইম করা তাদের জন্য অত্যধিক ক্ষতিকর।কোনো কোনো গেইম মাদকের চেয়েও ভয়াবহ নেশাজাতীয়, যেখানে জুয়ার মত টাকা ইনিস্টোল করতে হয়।করোনা মহামারিতে সারাবিশ্বের শিশু-কিশোররাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।বিশেষ করে দরিদ্র দেশগুলোর শিশুরা। এ ক্ষতি থেকে তাদের রক্ষা করতে সরকার, ইউনিসেফসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এবং স্ব স্ব পরিবারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
এদিকে স্বল্পব্যয়ে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত (স্টেম) শিক্ষাদানকারী প্রতিষ্ঠান স্টেম, এডুকেশন ফর অল’র প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও আনুশকা রেজওয়ানা ইনকিলাবকে বলেন, সবাই মনে করেন, শুধু সামর্থবান অভিভাবকের সন্তানরাই স্টেম সেন্টারে যাবে।কিন্তু আমরা মনে করি, শিক্ষার সুযোগ সবার জন্য সমান থাকা উচিত, যেন স্বল্পআয়ের মানুষের সন্তানরাসহ সবাই এখানে এসে উন্নত জীবন গঠনের দীক্ষা পেতে পারে। সেজন্য আমরা নামমাত্র ফিতে স্টেম সেন্টারের উদ্যোগ নিয়েছি।করোনার কারণে আজকে শিশু শিক্ষার্থীদের যে ভয়াবহ চিত্র বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্রে দেখা যাচ্ছে, তা থেকে উত্তরণে আমিও ইউনিসেফসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।